অন্তঃসত্ত্বা ইউএনওকে ওএসডি করায় সংসদে ক্ষোভ
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীণাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এমপিরা।
এই ধরনের সিদ্ধান্ত বর্তমান নারী ক্ষমতায়নের যুগে একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সোমবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের এমপিরা এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ সময় অধিবেশনের সভাপতিত্বে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। স্পিকার নিজেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জনপ্রশানশন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শুরুতেই সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বিষয়টি সংসদে তুলেন। এরপর বক্তব্য রাখেন ওই এলাকার এমপি শামীম ওসমান।
বর্তমান সরকার নারী ক্ষমতার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে চুমকি বলেন, ‘হোসনে আরা বীণা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। সহকর্মীরাও তার কাজের প্রশংসা করেছেন।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘৯ বছর পর মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা একজন নারীর চিরন্তন। তার সেই শিশুটিতে নিয়ে তার যে মানসিক অবস্থা, তা নিশ্চয় আমরা উপলব্ধি করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, এদেশের উন্নয়নে একটি বিরাট ধাপ অতিক্রম করেছেন নারীর উন্নয়নের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য বাংলাদেশে আজ নারী ক্ষমতায়নের মডেল।’
নারী উন্নয়ন ও মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন সুযোগের কথা তুলে ধরে চুমকি বলেন, ‘একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা, একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে আছেন তিনি। সে যদি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকেন, তাহলে কেন তাকে ওএসডি করা হলো? বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তার পাশাপাশি আমি বলতে চাই, একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের সঙ্গে যে আচরণ করতে হয়, আমার মনে হয় সমাজ এখনও তা উপলব্ধি করতে পারে না।’
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের গুরুত্ব দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। একজন সন্তান যদি সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ না করে তাহলে শুধু মা নয়, আমাদের সমাজ ও দেশের জন্য বার্ডেন হতে পারে।’
এ ঘটনার জন্য একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান মেহের আফরোজ চুমকি।
এরপর শামীম ওসমান ওই নারীকে নিজের বোনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘আমি এই সময় ওমরায় ছিলাম। এই ঘটনার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত ও লজ্জিত। আমার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে সার্টিফায়েট করতে চাই— ওই কর্মকর্তা অত্যন্ত কর্মঠ ও যোগ্য ছিলেন। নির্বাচনের সময় তাকে আমি অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি রাজি ছিলেন না। বরং কাজ করতে পারলে তিনি ভাল থাকবেন বলে জানান।’
তিনি বলেন, ‘এই নারী আমার বোন, স্ত্রী, মা। আজ আমি জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে বহুবার ফোন করেছিলাম। হয়তো আমার নম্বরটা তার কাছে নেই বলে তিনি ধরেননি। এই ঘটনা আমার এলাকায়, আমিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি। কেন, কিভাবে তাকে ওএসডি করা হলো, তা জানতে চাই। আমি মানুষ হিসেবে বলছি, আশা করি এ ব্যাপারে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দেবেন। তাকে বদলি নয়, কেন ওএসডি করা হলো, তা তদন্ত করে বের করুন। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি তার বাচ্চাটা যেন হায়াৎ দারাজ করুন। বাচ্চাটার যদি কিছু হয়, আমি নিজেকেও ক্ষমা করব না।’
এরপর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আশা করি, জনপ্রশাসনমন্ত্রী এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
উল্লেখ্য, হোসনে আরাকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওএসডি করা হয়। এ নিয়ে তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে হোসনে আরা অভিযোগ করেন, সন্তানসম্ভবা হওয়ায় কাজে অযোগ্য দেখিয়ে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা তাকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পায়তারা শুরু করেছিলেন।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পরও অত্যন্ত সফলভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে হোসনে আরা লেখেন, ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে ওএসডি করার সংবাদ পেয়ে তিনি প্রচণ্ড মানসিক চাপ পান। ২০ এপ্রিল বাচ্চা জন্মের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও মানসিক চাপে তার ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং বাচ্চার অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পায়। এ ঘটনায় রাতেই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরদিন সকালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়।
হোসনে আরার অভিযোগ, তার জায়গায় পোস্টিং নিতে প্রভাবশালী কারও তদবিরে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিষয়টি নজরে আসলে হোসনে আরা বেগম বীণাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।