আজ থ্যাংক্স গিভিংস ডে
জাহিদুর রহমানঃবছর ঘুরে আবার এসে গেলো থ্যাংক্স গিভিংস ডে। যারা আমরা দেশে আছি তাদের কাছে হয়ত শব্দটা নতুন মনে হতে পারে কিন্তু প্রবাসীদের কাছে এটি মোটেই নতুন কোন শব্দ নয়, প্রত্যেক বছর হয়ত অনেক ঝাক ঝমকপূর্ণভাবে এই দিনটিকে উদযাপন করেন।
থ্যাংক্স গিভিং ডে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একটি জনপ্রিয় উৎসবের দিন। প্রত্যেক বছরের নভেম্বর মাসের ৪র্থ বৃহস্পতিবারে যুক্তরাষ্ট্রে এবং অক্টোবারের ২য় সোমবারে কানাডায় এই দিনটি পালন করা হয়। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হিসেবে এই দিনটি প্রায় সময়েই সপ্তাহ বা মাস জুড়ে উদযাপন করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় একই ধরণের উৎসব ভিন্ন ভিন্ন নামে উদযাপিত হয় । ঐতিহাসিকভাবে থ্যাক্সগিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সর্বত্র সবধরণের মানুষ এই দিনটি পালন করে থাকে।
প্রাচীন কাল থেকে কৃষিভিত্তিক প্রায় সব সমাজ ফসল ঘরে তোলার পর ঈশ্বরের প্রতি বা কৃষি দেবতাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন একটি সাধারণ অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন নামে এ ধরণের অনুষ্ঠান পালিত হয়। আমাদের বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক গ্রামীন জীবনে সচারাচর নবান্ন হিসেবেই এ অনুষ্ঠান পালিত হয়। আচার আচারণে অনেক পার্থক্য থাকলেও মূল ধারা কিন্তু সব অনুষ্ঠানই পরিলক্ষিত হয়।
“থ্যাংক্স গিভিং ডে” দিনটির সূচনা হয়েছিল উত্তর আমেরিকায় ইংরেজ ইতিহাসের প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশান (প্রোট্রেস্ট্যান্ট সংস্কার) এর দিন থেকে । প্রোটেস্টেনিজম হচ্ছে খ্রীস্টধর্মের একটি অন্যতম প্রধান বিভাগ। ষোড়শ শতাব্দীতে প্রোটেস্টেন্টস মার্টিন লুথার ও জন কেলভিন পশ্চিমের খ্রীস্টধর্মে এই নতুন ধর্মের সূচনা করেন যারা বিশ্বাস করে যে বাইবেলই হচ্ছে একমাত্র সত্য প্রকাশিত কিতাব এবং বাইবেলের আলোকে গীর্জা সমূহে এমন একধরণের পোপ থাকা দরকার যারা নিজেদেরকে বাইবেলের জন্য উৎসর্গ করবেন। ) অর্থ্যাৎ প্রোটেস্টিজমের সংস্কারের দিনটিকে প্রথমদিকে থ্যাঙ্কস গিভিং ডে হিসেবে পালন করা হত।
দিনটি এখন নবান্নের উৎসব হিসেবে পালিত হয়। যদিও ইংল্যান্ডে থ্যাংক্স গিভিং ডের অনেক আগেই ফসল কেটে ফেলা হয় তথাপি তারা নভেম্বরেই এই দিনটি উদযাপন করে।
ইংরেজ ইতিহাসে, ইংরেজের সংস্কারের সময়, রাজা সপ্তম হেনরিরি শাসনামলে ক্যাথলিক পঞ্জিকার বিশাল ছুটির দিনের বিপরীতে থ্যাংক্স গিভিংডের দিনগুলো এবং থ্যাংক্স গিভিংডে উপলক্ষ্যে উদযাপিত ধর্মীয় আচার অনুষ্টান ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ১৫৩৬ সালের আগে চার্চ কর্তিক ৯৫ টি ছুটির দিন ছিল সাথে ৫২ টি শনিবার। তখন মানুষদেরকে চার্চে গিয়ে আচার অনুষ্ঠান করতে হত এবং প্রায়ই এসব অনুষ্ঠানের জন্য অনেক বেশি খরচ করতে হত। ১৫৩৬ সালের সংস্কার চার্চের ছুটির দিন কমিয়ে ২৭ দিন করে দিল। কিন্তু কিছু উগ্রসংস্কারবাদীরা খ্রীস্টমাস এবং ইস্টার সানডে সহ চার্চের সকল ছুটির দিন একদম বন্ধ করার জন্য আবেদন জানালো। ছুটির দিন গুলোর পরিবর্তে রোজার দিন বা থ্যাংক্স গিভিং ডে বা ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দিন প্রবর্তনের আবেদন করা হল। অপ্রাত্যাশিত বিপর্যয় বা বিচার দিনের ভীতি দূর করতে রোজার দিনের জন্য আহবান করা হত । থ্যাংক্সগিভিং বা রোজার এই দিনে ঈশ্বরের নিকট বিশেষ প্রার্থণা করা হয়। উদাহরণ হিসেবেঃ ১৬১১ সালের খরায়, ১৬১৩ সালের বন্যায়, ১৬০৪ এবং ১৬২২ সালের প্লেগের আক্রমণ ঠেকাতে রোজার দিন ডাকা হয়েছিল। ১৫৮৮ সালে স্পেনিশ আরমান্ডা জয়ের পর থ্যাঙ্কস গিভিং ডে পালন করা হয়েছিল। ১৭০৫ সালে রাণী এন্নির মুক্তি উপলখ্যে এই দিন পালন করা হয়েছিল।১৬০৫ সালে গানপাওডার ফ্লটের পরাজয়ের পর ১৬০৬ সাল থেকে থ্যাংক্স গিভিংস ডে একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। অর্থ্যাৎ খ্রীস্ট ধর্মের অতিরিক্ত আচার অনুষ্ঠান থেকে সমাজকে মুক্ত করতেই প্রথম থ্যাংক্স গিভিংস ডের সূচনা করেছিল প্রোসেটেন্ট খ্রিস্টানরা।
যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংক্স গিভিংস ডেঃ
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান থাংক্স গিভিংস ডে উদযাপন খুব সাধারণ ব্যাপার। এটি সম্পর্কে প্রাচীন প্লাইমাউথস , বর্তমান ম্যাসাচুচেটসে একটি নথি পাওয়া যায়। ১৬২১ সালে প্লাইমাউথস এক ভোজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল যা পরবর্তীতে নবান্নের উৎসব হিসেবে পরিণত হয়। এবং ধর্মীয় অনুষ্টান হিসেবে বেসমারিক লোকেরা থ্যাংক্স গিভিং ডে উদযাপন করা শুরু করল।
গভর্ণরবার্ডফোর্ড থ্যাংক্স গিভিং ডে উদযাপন করেছিলেন এবং তিনি উপবাস ও করেছিলেন কিছুকাল। ধীরে ধীরে ব্রিটেনে এ অনুষ্টান জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন সর্বপ্রথম নভেম্বরের ২৬ তারিখ এই দিন টিকে “ঈশ্বরের আরাধনা ও ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা শিকারের জন্য জনগনের একটি দিন” হিসেবে দেশ ব্যাপী থ্যাংক্স গিভিং ডের ঘোষণা দেন । এরপর থেকে প্রত্যেক বছর যুক্তরাষ্ট্রেরপ্রেসিডেন্টরা একটি টার্কি মুক্ত করেন এবং নিশ্চিত করেন যে এটি তার সমগ্র জীবন মুক্তভাবে বিচরণ করবে।
বর্তমানে থ্যাংক্স গিভিংস ডে “কুক ডে” হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে ধীরে ধীরে। কারণ এদিনে ঘরে ঘরে টার্কির আস্ত রোষ্টের সাথে নানান ধরনের রসনা তৈরীতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে বাড়ির ছেলে বুড়ো সবাই। যার যতটুকু সাধ্য সে অনুযায়ী খাবার দাবারের আয়োজন করে।