আদালতে বাবার কুকর্মের সাক্ষ্য দিল ১২ বছরের মেয়ে

642

রাজধানীর গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের পাশে দীননাথ সেন রোডের একটি বাসায় প্রতিবেশি দুই বছরের শিশু আয়েশাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন মো. নাহিদ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি।

Abuse-news

ধর্ষণ চেষ্টার সময় শিশু আয়েশার চিৎকারে নাহিদের নিজের মেয়ে ফাতেমা জাহান বুশরা (১২) এগিয়ে আসে। এ সময় নাহিদ মেয়েকে ধমক দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে শিশু আয়েশাকে তিন তলার বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দেন।

নির্মম এই ঘটনাটি ঘটে গত ৫ জানুয়ারি।

বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন আয়েশার বাবা ইদ্রিস আলী বাদি হয়ে গেণ্ডারিয়া থানায় মামলা করেন। খুনিকে গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসী গেন্ডারিয়া থানা ঘেরাও করে ও এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে নাহিদকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার সিএমএম আদালতে বাবা নাহিদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দেয় সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তার মেয়ে বুশরা।
বাবার কুকর্মের কথা তুলে ধরে আদালতে বুশরা জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যার দিকে সে বাড়ির বারান্দায় বসেছিল। এমন সময় তার বাবার কক্ষ থেকে ছোট শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় সে।

পরে সেখানে গিয়ে দেখতে পায় বাবা বিছানায় আর শিশু আয়েশা বাবার কোলে কাঁদছে।

তখন নাহিদ বুশরাকে ধমক দিয়ে বলেন- এই তুই এখানে এসেছিস কেন? ধমক খেয়ে বুশরা অন্য রুমে চলে যান। এরপর নাহিদ শিশু আয়েশাকে তিন তলা থেকে নিচে ফেলে দেন।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপ কমিশনার মো. ফরিদ উদ্দিন এসব তথ্য জানান।

ডিসি ওয়ারী বলেন, নিহত শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করি। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রতিবেশী নাহিদের বাসা থেকে শিশুটিকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

পরে নাহিদকে আটক করতে গেলে সে বাসার খোলা বারান্দা দিয়ে পালিয়ে আরও তিনটি বাসার ছাদ পেরিয়ে নিচে লাফ দেয়। এতে তার দুই পা ভেঙ্গে যায়। আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়৷ পুলিশি হেফাজতে নাহিদের চিকিৎসা চলছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিসি ওয়ারী জানান, প্রতিবেশী শিশু আয়েশাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে নেয় নাহিদ। পরে তাকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তিন তলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করে।

জিজ্ঞাসাবাদে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি, কারণ নাহিদ অনেক বেশি অসুস্থ।

ফরিদ উদ্দিন আরো বলেন, ৫ বছর আগে নাহিদের স্ত্রী মারা যান। এরপর তিনি আর বিয়ে করেননি। ১২ বছরের মেয়ে বুশরাকে নিয়ে তিনি ওই বাসায় থাকতেন।

প্রসঙ্গত, গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর চারতলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে মা-বাবা ও তিন বোনের সঙ্গে থাকতো দুই বছরের শিশু আয়েশা। তার বাবা-মা প্রতিদিন সকালে কাজে যেত, সে সময় বাসার গলিতে খেলে বেড়াতো শিশু আয়েশা।

অন্যদিনের মতো গত শনিবারও বিকালে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.