আবারও আমলাতান্ত্রিক খোলসের আড়ালে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ এম্বেসী

768

মিজানুর ভূঁইয়া,ওয়াশিংটনডিসিঃ ওয়াশিংটন বাংলাদেশ এম্বেসীর একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে; এর প্রতিষ্ঠার পর কিছুদিন যদিও সম্পূর্ণ আমলাতান্ত্রিক খোলসের আড়ালে একচেটিয়া গণবিচ্ছিন্ন এবং সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্কহীন অবস্থায় চলছিল। তবে রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির এসে সেই আমলাতান্ত্রিক ভেড়াজাল ভেঙে সাধারণ মানুষের সাথে একটি সুনিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। হুমায়ুন কবির যদিও একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং ওয়াশিংটন ডিসির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ এম্বেসীর প্রধান ব্যক্তি ছিলেন, তবে ব্যক্তিগতভাবে তার ভিতর সেরকম কোনো দাম্ভিকতা বা হাক ডাক ছিলোনা। সাধারণ মানুষের সাথে তিনি অতি সহজেই মিশে যেতেন, তিনি এখানে থাকাঅবস্থায় কমিউনিটির সকল অনুষ্ঠানাদিতে যথারীতিই যোগ দেয়ার চেষ্টা করতেন এবং করে থাকতেন।

 

17360504_1274546665915615_1248141235_n

অন্যদিকে; এম্বেসীতে যতো প্রকার অনুষ্ঠানাদি হতো তিনি এখানকার স্থানীয় সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, গুণী, জ্ঞাণী এবং বরেণ্য ব্যক্তিদের যথেষ্ট সমাদর করতেন থাকতেন।প্রকৃতপক্ষে এম্বেসীর সাথে এখানকার বাংলাদেশী নাগরিকদের একটি সুনিবিড় ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠে; আর সে কারণেই তিনি এম্বেসেডর থাকাকালীন এবং এম্বেসীর অন্যান্য অফিসারদের মধ্যেও একইরকম সৎভাব গড়ে উঠে যার ফলশ্রুতিতে এম্বেসীর সাথে সাধারণ মানুষের একটি শান্তিপূর্ণ সুন্দর ও সম্মানজনক সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মাননীয় এম্বেসেডর আকরামুল কাদের এর সময় পর্যন্ত অত্যান্ত সুন্দরভাবে চলতে থাকে। জনাব হুমায়ুন কবির এবং জনাব আকরামুল কাদের থাকা অবস্থায় তখনকার কিছু সুন্দর মনের এম্বেসী অফিসার ছিলেন, যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়; জনাব শামীম আহসান (বর্তমানে নিউ ইয়র্কে মিশন কাউন্সিলর হিসাবে দ্বায়ীত্বরত), জনাব নাজমুল আহসান ( বর্তমানে সিঙ্গাপুর এম্বেসির কর্মকর্তা) জনাব শেখ মোহাম্মদ বেলাল ( বর্তমানে নেদারল্যান্ডে এম্বেসেডর) জনাব জসিম উদ্দিন (বর্তমানে গ্রীসে এম্বেসেডর), শ্রী অনুপম দেবনাথ (মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে ডিরেক্টর হিসাবে কর্মরত), জনাব মোহাম্মদ মুহিত( বর্তমানে ডেনমার্কের এম্বাসেডর) এবং তাদের স্বীয় পত্নীগণ অত্যান্ত সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন যার ফলশ্রুতিতে এই এলাকার সবার সাথে অদ্যাবদি তাদের অনেকেরই একটি সুন্দর যোগাযোগ রয়েছে। এমনি আরো অসংখ্য জ্ঞাণী এবং পরিশীল মনের অধিকারী কর্মকর্তা ছিলেন যারা অদ্যাবদি শুধু ওয়াশিংটন এলাকা নয় পুরো আমেরিকার সকল রাজ্যের সকল মানুষের হৃদয়য়ে একটি সুন্দর স্থান করে নিয়েছেন। কিন্তু অতি সম্প্রতি এম্বেসীর সেই সুন্দর ঐতিহ্য একেবারে বিলুপ্তপ্রায়; এখন এম্বেসীর সাথে এখানকার বাংলাদেশী বসবাসকারী মানুষের সম্পর্ক একেবারেই তেমন সুখকর নয়। বিগত ২০১৫ সালের ১৫ই অগাস্ট জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবস পালনকালে এম্বেসীতে যে অপ্রীতিকর ঘটনার অবতারণা হয়েছিল এবং ঠিক সেই সময় আমি সেই বিষয়ে স্ববিস্তারে একটি প্রতিবেদন লিখে ঘটনার আশু তদন্ত সাপেক্ষে সমস্ত বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু অত্যান্ত দুর্ভাগ্য এই যে; কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়টির তেমন কোন গ্রহণযোগ্য সমাধান না করে বরং অদ্যাবদি এম্বেসীর সাথে সাধারন মানুষের সম্পর্কের দূরত্ব বজায় রেখেছেন।এখানকার সাধারণ মানুষের যোগাযোগ এবং সম্পর্কের জটিলতাটি বিদ্যমান রেখেছেন; এতে করে এখানকার সুধী সমাজ অত্যান্ত মন ক্ষুন্ন রয়েছেন; কারণ ইদানিং এম্বেসীতে যেসকল অনুষ্ঠানাদি হচ্ছে তাতে আগের মতো এখানকার বরেণ্য জ্ঞাণী গুণী এবং সমাজ সেবীরা ততোটুকু কদর পাচ্ছেন না এবং এম্বেসী কতৃপক্ষও আগের মতো স্থানীয় সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে তেমন আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে করে এম্বেসীর সাথে সাধারণ মানুষের একটি বিশাল দূরত্বের অবতারণা ঘটেছে। এম্বেসী কতৃপক্ষ ইদানিং এম্বেসীর অনুষ্ঠানাদিতে আমন্ত্রনের ব্যাপারে যে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছেন; তারই ধারাবাহিকতা হিসাবে তাদের নিজস্ব মনগড়া কিছু মানুষকে নিমন্ত্রণ করছেন। সচেতন সমাজ মনে করছে; এম্বেসী কর্তৃপক্ষ কিছু স্থানীয় দুষ্ট চক্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের মনগড়া তালিকাভুক্ত নিজস্ব লোকজনদের নামের তালিকাই বহাল রেখেছেন। যার ফলশ্রুতিতে এখানকার বরেণ্য এবং সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিবর্গকে এখন আর ডাকা হয়না এবং এদের নাম এম্বেসীর আসল অতিথি তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যে কোন দেশের দূতাবাস যেমনিভাবে সেই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবর্হূত হয়; তেমনি দূতাবাসের অন্যতম বিশেষ দায়িত্ব সেই দেশের নাগরিকদের সাথে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের সুখে দুঃখে তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো। একটি দেশ শুধু তার অভ্যন্তরীন আয়েই চলেনা; প্রবাস থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা প্রতিমাসে বাংলাদেশে গিয়ে থাকে এবং তারই ফলশ্রুতিতেই আজ দেশের এই অগ্রগতি। আর সেই মানুষগুলিকে অবজ্ঞা করে কোনোভাবেই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রবাসে আমাদের প্রচুর মেধাবী লোকজন রয়েছে যারা নিজেদের মেধা এবং সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক ভালো কাজ করছেন এবং দেশের জন্য অনেক সুনাম এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। তেমনি উল্লেখ করার মতো প্রচুর ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্যেগকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসের মাটিতে জ্ঞাণ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে প্রসারিত করার নিমিত্তে নিজ দেশীয় শিক্ষিত মানুষদিগকে প্রশিক্ষিত করে ভালো এবং মর্যাদাপূর্ণ চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এমনিতর অনেক প্রতিষ্ঠান খোদ এই ওয়াশিংটন এলাকাতেই রয়েছে। আমাদের সরকার এবং এম্বেসী যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তবে এই সকল মহৎ উদ্যোগ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে; প্রবাসে এবং নিজ দেশের প্রযুক্তিকে অনেক উন্নতির শিখরে তুলে নিয়ে আসতে পারে। তাই স্থানীয় সচেতন মহল আশাবাদ ব্যক্ত করছেন যে; এম্বেসী কর্তৃপক্ষ দলীয় সংকীর্ণতা এবং সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতার উর্ধে উঠে স্থানীয় প্রকৃত সমাজ হিতৈষী, সমাজ সেবক এবং জ্ঞাণী গুণী প্রাজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গের সাথে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তুলে এম্বেসীর হারানো ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার পূর্বক একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ মর্যাদাশীল পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। যাকিনা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং প্রবাসে একটি সুন্দর ঐক্যবদ্ধ সুশৃঙ্খল মেধাবী জনগোষ্ঠী তৈরিতে সহযোগিতা করবে। এটি তখনই সম্ভব হবে; যতো তাড়াতাড়ি প্রশাসন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং ঘুপচি মারা কালো ছায়া থেকে বেরিয়ে আসবে এবং সাধারণ মানুষের সাথে একটি সুন্দর সেতুবন্ধন তৈরী করতে সক্ষম হবে।।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.