‘আমার ফাঁসি চাই’, এমপি হতে না পেরে ক্ষুব্ধ আ’লীগ নেত্রী

611

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের অনুরোধে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

naznin_alam_home_1এরপর আশায় বুক বেঁধেছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। মনোনয়ন ফরমও কিনেছিলেন। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে এসে সে আশাও শেষ হয়ে যায় নাজনীন আলমের।

 শুক্রবার রাতে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪১ জনের নাম ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তখনও হয়তো ক্ষীণ আশা বেঁচেছিল। নাজনীন ভেবেছিলেন, দুটি আসন যেহেতু বাকি, একটিতে তিনিই আসছেন। কিন্তু, রাত পোহাতেই শনিবার নিশ্চিত হয়ে যায়, নিয়ম অনুসারে ৪৩ সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী।

এতে হতাশা জেঁকে বসে, সঙ্গে ক্ষুব্ধ হন নাজনীন আলম। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটের দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে তা উগরে দেন। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য নিজের ‘ফাঁসিই’ চেয়ে বসেন।

 ‘আমার ফাঁসি চাই’ শিরোনামে তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাসে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। নাজনীন আলমও বুঝতে পারেন, তিনি হয়তো কাজটি ঠিক করেননি। ভুল শুধরে নিতে তিনি পোস্টটি মুছেও ফেলেন।

কিন্তু, ততক্ষণে এই স্ট্যাটাস ছড়িয়ে গেছে ওয়ালে ওয়ালে। এতে অনেকেই নাজনীনকে যেমন সান্ত্বনা দিয়েছেন। আবার তার সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।

 ফেসবুক পোস্টে নিজের ফাঁসি চাওয়ার ৯টি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন নাজনীন আলম। এগুলোর প্রত্যেকটিই প্রশ্ন আকারে এলেও, তাতে তার ভেতরকার হাহাকারই বেশি প্রকাশ পেয়েছে।

‘আমার ফাঁসি চাই!’ শিরোনামে নাজনীন আলম লিখেছেন—

১. কেন হাই-কমান্ডের আশ্বাসকে সরল মনে বিশ্বাস করেছিলাম!

২. এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকার প্রয়োজন কেন অনুভব করেছিলাম!

৩. এমপি বা সিনিয়র কোনো নেতার পরিবারের সদস্য কেন আমি হলাম না!

৫. কেন দলের নাম ভাঙিয়ে একটি পয়সা রোজগারের ধান্দা করিনি!

৬. কেন দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে দিনে দিনে নিঃস্ব হতে গেলাম!

৭. কেন জনসমর্থন অর্জনের চেষ্টা করেছিলাম!

৮. কেন তদবির/তেলবাজি ঠিকমতো করতে পারলাম না!

৯. কেন সমর্থকদের বারবার কাঁদাচ্ছি!

সম্ভবত এসবই আমার ভুল ও অপরাধ! এজন্য আমার শাস্তি হওয়া উচিত।

জানা গেছে, নাজনীন আলমের স্বামী ফেরদৌস আলম ব্যাংক কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের এই নেতা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চান। কিন্তু, দল থেকে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকিরকে প্রার্থী করা হয়।

স্বামী মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় নাজনীন আলম সেবার বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সে সময়ে ফেরদৌস আলম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ওই নির্বাচনে নাজনীন হরিণ প্রতীকে হেরে যান। কিন্তু, এরপরেও এই দম্পতি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই সক্রিয় থেকেছেন।

মজিবুর রহমান ফকিরের ইন্তেকালের পর ২০১৬ সালের উপ-নির্বাচনেও নাজনীন আলম নৌকার মনোনয়ন চান। কিন্তু, পাননি। স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেও, হাই-কমান্ডের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান তিনি।

 এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। এবারও দল নাজনীনকে হতাশ করে। এরপরই সংরক্ষিত আসনে সংসদে যেতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি, যাতে শনিবার নেমে আসে চরম হতাশা।

স্ত্রীর ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ফেরদৌস আলম সাংবাদিকদের জানান, মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় হাজারো নেতাকর্মী-সমর্থক তাকে ফোন করেছেন। এতে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কান্নাকাটিও করেছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পরে ভুল বুঝতে পেরে মুছেও ফেলেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ। সাধারণ মানুষের সুখ-দুখে সারাজীবন পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দলের জন্য জীবনে যা অর্জন করেছি, সবই বিলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, বিনিময়ে কিছুই পেলাম না। এ থেকেই হয়তো নাজনীন চাপা ক্ষোভটা আটকে রাখতে পারেনি।’

পরে এ বিষয়ে নাজনীন আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পর ২০১৬ সালের উপ-নির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। সে সময় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষনেতা আমাকে ঠেকাতে তৎপর ছিলেন। কেন না, তারা গৌরীপুরের জনমত জানতেন, আমিই বিজয়ী হব।’

 তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতস্ত্র হিসেবে অংশ নিয়েছি। ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু, পরে দলের অনুরোধে সরে দাঁড়াই। দলের জন্য এত ত্যাগের পরেও কেন আমাকেই বারবার বঞ্চিত হতে হয়, তা বোধগম্য নয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাজনীন আলম আরও বলেন, ‘আমি মাঠের কর্মী। তৃণমূলে শক্ত ভিত রয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনেও যখন বঞ্চিত হলাম, সবাই ফোন করে প্রশ্ন করেন, বারবার আমিই কেন? তাদের জবাব দূরে থাক সান্ত্বনাও দিতে পারিনি। এজন্য ক্ষোভ থেকে পোস্ট দিয়েছিলাম, পরে ওটা সরিয়ে নিয়েছি।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.