‘আমার ফাঁসি চাই’, এমপি হতে না পেরে ক্ষুব্ধ আ’লীগ নেত্রী
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের অনুরোধে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
এতে হতাশা জেঁকে বসে, সঙ্গে ক্ষুব্ধ হন নাজনীন আলম। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ১১ মিনিটের দিকে ফেসবুকে এক পোস্টে তা উগরে দেন। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য নিজের ‘ফাঁসিই’ চেয়ে বসেন।
কিন্তু, ততক্ষণে এই স্ট্যাটাস ছড়িয়ে গেছে ওয়ালে ওয়ালে। এতে অনেকেই নাজনীনকে যেমন সান্ত্বনা দিয়েছেন। আবার তার সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
‘আমার ফাঁসি চাই!’ শিরোনামে নাজনীন আলম লিখেছেন—
১. কেন হাই-কমান্ডের আশ্বাসকে সরল মনে বিশ্বাস করেছিলাম!
২. এলাকাবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকার প্রয়োজন কেন অনুভব করেছিলাম!
৩. এমপি বা সিনিয়র কোনো নেতার পরিবারের সদস্য কেন আমি হলাম না!
৫. কেন দলের নাম ভাঙিয়ে একটি পয়সা রোজগারের ধান্দা করিনি!
৬. কেন দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে দিনে দিনে নিঃস্ব হতে গেলাম!
৭. কেন জনসমর্থন অর্জনের চেষ্টা করেছিলাম!
৮. কেন তদবির/তেলবাজি ঠিকমতো করতে পারলাম না!
৯. কেন সমর্থকদের বারবার কাঁদাচ্ছি!
সম্ভবত এসবই আমার ভুল ও অপরাধ! এজন্য আমার শাস্তি হওয়া উচিত।
স্বামী মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় নাজনীন আলম সেবার বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সে সময়ে ফেরদৌস আলম বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ওই নির্বাচনে নাজনীন হরিণ প্রতীকে হেরে যান। কিন্তু, এরপরেও এই দম্পতি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই সক্রিয় থেকেছেন।
মজিবুর রহমান ফকিরের ইন্তেকালের পর ২০১৬ সালের উপ-নির্বাচনেও নাজনীন আলম নৌকার মনোনয়ন চান। কিন্তু, পাননি। স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিলেও, হাই-কমান্ডের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান তিনি।
স্ত্রীর ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ফেরদৌস আলম সাংবাদিকদের জানান, মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় হাজারো নেতাকর্মী-সমর্থক তাকে ফোন করেছেন। এতে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কান্নাকাটিও করেছে। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে পরে ভুল বুঝতে পেরে মুছেও ফেলেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ। সাধারণ মানুষের সুখ-দুখে সারাজীবন পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দলের জন্য জীবনে যা অর্জন করেছি, সবই বিলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, বিনিময়ে কিছুই পেলাম না। এ থেকেই হয়তো নাজনীন চাপা ক্ষোভটা আটকে রাখতে পারেনি।’
পরে এ বিষয়ে নাজনীন আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবর রহমান ফকিরের মৃত্যুর পর ২০১৬ সালের উপ-নির্বাচনে আমি প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। সে সময় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষনেতা আমাকে ঠেকাতে তৎপর ছিলেন। কেন না, তারা গৌরীপুরের জনমত জানতেন, আমিই বিজয়ী হব।’
এক প্রশ্নের জবাবে নাজনীন আলম আরও বলেন, ‘আমি মাঠের কর্মী। তৃণমূলে শক্ত ভিত রয়েছে। সংরক্ষিত মহিলা আসনেও যখন বঞ্চিত হলাম, সবাই ফোন করে প্রশ্ন করেন, বারবার আমিই কেন? তাদের জবাব দূরে থাক সান্ত্বনাও দিতে পারিনি। এজন্য ক্ষোভ থেকে পোস্ট দিয়েছিলাম, পরে ওটা সরিয়ে নিয়েছি।’