আমি আত্রাই থেকে বলছি…
মোঃ আনাম, ওয়াশিংটনডিসিঃ আমরা আম জনতা। দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই দেই যেমন, ভোট দেই, জীবন দেই, কর দেই, নালিশ দেই, গালি দেই, সমর্থন দেই ইত্যাদি। কোনকিছু আদায় করে নেবার মত শক্তি, একতা বা মেধা আমাদের নেই। এটা পরীক্ষিত সত্য যে চেষ্টায় দিন দিন মানুষ উন্নতি লাভ করে। তাহলে ৪৫ বছরের যে গণতন্ত্র চর্চার চেষ্টা তাতে আমরা কতখানি উন্নতি করলাম? প্রশ্নটা করা কি খুব অযৌক্তিক হয়ে যাবে? উন্নতি তো দূরে থাক, আমরা কি ক্রমশঃ পিছিয়ে পরছি না? দেশ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
একটি তাবেদার রাষ্ট্রের প্রচলিত কাঠামোতে যতই যোগ্যতা সম্পন্ন ও সৎ নেতৃত্ব আসুক তা কখনো রাষ্ট্রের তাঁবেদারি চরিত্র বদলাতে পারে না। সোজা হিসেবে, প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামো ‘যা নিজেই সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত ও প্রণোদিত’ তা কখনো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর দালালি আর গোলামি ছাড়া টিকতে পারে না। নতুন একটি তৃতীয় শক্তির বলয়ে যোগ্য নেতৃত্বের আবির্ভাব ঘটলেও তার পরিণতি ধানের শীষ আর নৌকোর গর্তেই পতিত হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর রাজনৈতিক মেরুকরণে মাত্রা-রিক্ত ভারত ও মূখিতা আমাদের অস্তিত্বের শর্তগুলোকে আরও সংকটপূর্ণ অবস্থায় নিক্ষেপ করেছে।
সত্যি কথা বলতে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কোন বিচক্ষণ, শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মুখ দেখিনি যারা কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আমাদের দরকার ছিল একটি পরিপূর্ণ যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা যেখান থেকে বেড়িয়ে আসত একদল দক্ষ অথচ দেশপ্রেমিক জনশক্তি। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের সংবিধানকে ব্যস্ত রাখা হয়েছে, কে জাতির জনক, কে স্বাধীনতার ঘোষক, বিসমিল্লাহ থাকবে নাকি থাকবে না, মদ্যপ সাংসদদের আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা আছে কি নেই ইত্যাদি হাস্যকর ইস্যু দিয়ে। অথচ এসব ইস্যুর সাথে জনগণের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নের নুন্যতম সম্পর্ক নেই।
জনগণের জীবনমান উন্নয়নের ও জনশক্তি গঠন করার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গুরুত্ব না দিয়ে “আনাড়ির ইচ্ছেয়” দেশ চালাবার মাসুল কড়ায় গণ্ডায় দিতে হচ্ছে আমাদের। আজ আমাদের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে মাটির নিচ থেকে একটি কয়লা তুলতেও বিদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে ধর্না দিতে হয় আমাদের। এ সুযোগে বিদেশীরা আমাদের লুটপাট করবে না এমন আশা করাটা অযৌক্তিক। এ দেশে বিভিন্ন স্বার্থ-বিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এসব ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রতিবাদের মুখে চুক্তিগুলো একবারের জন্যও থেমে যায় নি। কারণ আমাদের আন্দোলনের কাগুজে বাঘ সাম্রাজ্যবাদী বেনিয়াদের কাছে খুব একটা কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি।
আমাদের চতুর ও ধূর্ত নেতৃবৃন্দ কাব্যিকতায় ঠাসা অদ্ভুত এক আবেগী দেশপ্রেমের জন্ম দিয়েছে আমাদের মধ্যে। তাই দেশপ্রেমের প্রসঙ্গ উঠলেই আমাদের নাক, মুখ আর চোখ দিয়ে ঠেসে দেয়া কাব্য ও কবিতার ফুলঝুরি ছুটতে থাকে। বখরা না পাওয়া এসব বিদ্রোহীদের পেটে যখনই সাম্রাজ্যবাদীরা দু এক চিলতে ঘি ঢালে তখনই সব আন্দোলন আর বিদ্রোহ মুহূর্তেই ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা পানিতে পরিণত হয়।
এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে অবশ্যই আমাদের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। যে সব ইস্যু জনগণের জীবনমান উন্নয়নের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না সেগুলো বিশুদ্ধ আবর্জনা-জ্ঞানে নর্দমায় নিক্ষেপ করতে হবে। এখন আমাদের দরকার একদল দক্ষ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃবৃন্দ যাদের সামগ্রিকতার বলয়ে কাঠামোগত পরিবর্তন আনবার পূর্ণ যোগ্যতা রয়েছে। আর দরকার কাব্যিকতা, রোমান্টিকতা ও আবেগ-বর্জিত সুস্থ লক্ষ্য-জ্ঞানসম্পন্ন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন।
পরিশেষেঃ বর্তমান সরকার অনেক কিছুই চাপা দিতে পেরেছে। একের পর এক ঘটনা ঘটছে জাতীয় রাজনীতিতে। কিছুই বেশিদিন হালে পানি পাচ্ছে না। একটার নিচে চাপা পড়ছে আরেকটা। ক্রসফায়ার, লিমনকে পঙ্গু করা থেকে ইলিয়াস আলী গুমের মতো ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আড়াল করা গেছে। বিডিআর বিদ্রোহের আগুন চাপা দেয়া গেছে। অনেক বিডিআর সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন। সরকার প্রমাণ করেছে, সবকিছু ধামাচাপা দেয়া যায়। আর এই ধামার ওপর বসেই নৃত্য করছে সরকার। যে যার মতো করে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু নিয়েই সরকারকে ধরা যাচ্ছে না। কি নিয়ে কে বলবে!
একটা প্রসঙ্গ তুলতে না তুলতেই তো আরেকটা হাজির। একের পর এক ইস্যু এসে হাজির হচ্ছে। কদিন আগেই ধরা খেলেন রেলের কালো বিড়াল সুরঞ্জিত। সেই ইস্যু চাপা পড়ে গেল পদ্মা সেতু বিতর্কে। পদ্মার ঘোলা জলকে পরিষ্কার করল হল-মার্ক গ্রুপ। এটা আবার ঢাকা পড়ল নতুন মন্ত্রীপরিষদের আড়ালে। এরপরেই প্রধানমন্ত্রী এক সিনিয়র সাংবাদিকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন চোর তত্ত্বে, ঘটনা মোড় নিলো অন্যদিকে। হল-মার্কের আলোচনা যখন আবার সামনে আসার চেষ্টা করল, তখন আবার ঘোলা হলো পদ্মার জল। রামুর ঘটনা আবার শান্ত করে দিল সব কিছুকেই। এভাবেই এই সরকারের আমলে একের পর এক ইস্যু পরিবর্তিত হচ্ছে।
কালক্ষেপণের মধ্যে সরকার নিজেকে রক্ষা করছে। আমাদের স্মৃতি অত প্রখর নয়। আমরা সবকিছু মনে রাখি না। সরকার এটা খুব কাজে লাগাচ্ছে। যতগুলো ঘটনা ঘটছে, এর প্রত্যেকটিতেই সরকারের উপর মহলের লোকজন পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকছে। কাজেই এগুলো চাপা না দিতে পারলে বিপদ। আর সরকারের কাছে, সময়ক্ষেপণ নীতিই এর ভালো ওষুধ। এই সরকার দুর্নীতি করছে সব ক্ষেত্রেই। এজন্যই থমকে আছে জাতীয় উন্নয়ন। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নানা কথা বলে, নানা ইস্যুর জন্ম দিয়ে একটির আড়ালে অন্যটিকে চাপা দিয়ে আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন।
লেখাটা পড়ে যদি ভালো না লাগে তাহলে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, কিন্তু দয়া করে ভুল বুঝে ভুল মন্তব্য করবেন না। আমি যদি আমার কোনো লেখায়, মন্তব্যে কাউকে বিন্দুমাত্র আঘাত করে থাকি তাহলে ক্ষমা চাচ্ছি। আসুন আমরা মুক্ত সুন্দর ও বাংলা লেখার মাধ্যমে সৃষ্টিতে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। বানান ভুল-জনিত ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থী। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। এমনকি আমার ঘরের দেয়ালে ঝুলে থাকা টিকটিকিটাও।