আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় যে পদ্ধতিতে…

569

🇺🇸আখতার,নিউইয়র্কঃ আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষদের একজন বলেই গণ্য করেন অনেকে। কিন্তু কীভাবে নির্বাচিত হন এই ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট…?

14699685_1122378511132432_328136526_o

🇺🇸এই পদ্ধতিটি নিশ্চয়ই সুচারু হওয়াটা জরুরি। কারণ আমেরিকার সরকার ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক। তিনি একই সঙ্গে দেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের প্রধান ও সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ইন-চিফ। কংগ্রেসের যে কোনো আইনকে অনুমোদন ও বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে তার। মন্ত্রিসভা গঠন এবং উপদেষ্টা নিয়োগেও রয়েছে একচ্ছত্র ক্ষমতা। সুপ্রিমকোর্টের বিচারক ও রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেন তিনিই। এমন ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতিটি খুবই জটিল। অনেকেই মনে করেন প্রেসিডেন্ট বুঝি সরাসরি ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হন। ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রয়েছে বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন জিতে নিতে হয় প্রার্থীকে। আর এই মনোনয়ন পেতেও প্রচারণা চালাতে হয় তাদের। দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার পদ্ধতিতে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

🇺🇸 সাধারণত কনভেনশনের মাধ্যমেই দলগুলো তাদের প্রার্থী নির্ধারণ করে থাকে। প্রথমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে ইচ্ছুক প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নের জন্য নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। আর এজন্য তাকে জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিক হতে হয়। বয়স হতে হয় কমপক্ষে ৩৫ বছর এবং অন্তত ১৪ বছর আমেরিকায় বসবাস করতে হয়। আর কেউই দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। দলীয় মনোনয়ন লাভের পরই ওই প্রার্থী চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরাই সাধারণত নিজেদের রানিংমেট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট বাছাই করে থাকেন। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভোট একসঙ্গে সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ও তার রানিংমেট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে এক টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটারদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য একটি টিকিট দেয়া হয়। তারা একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট দিয়ে তার রানিংমেট ছাড়া অন্য প্রার্থীর রানিংমেটকে ভোট দিতে পারেন না। আমেরিকার সংবিধানের ২ নাম্বার ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে। দেশটিতে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা সর্বমোট ৫৩৮টি। কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী হতে হলে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি পেতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটাররা ভোট দেন, কিন্তু প্রার্থীরা সরাসরি সে ভোট পান না। ভোট পড়ে তাদেরই মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজের সপক্ষে। পরবর্তী পর্যায়ে এই ইলেক্টোরাল কলেজের দ্বারা আলাদাভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ইলেক্টোরাল কলেজ কী ইলেক্টোরাল কলেজ নামে এই শব্দের সহজ বাংলা হচ্ছে নির্বাচক মণ্ডলী। বিভিন্ন রাজ্যে দলগুলোর রাজ্য শাখার মনোনীত প্রতিনিধিরাই ওই রাজ্যের ‘নির্বাচক’ হিসেবে ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য হন। সাধারণত নির্বাচনের আগের মাস গুলোতেই এই মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে থাকে। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক রাজ্য সেখানকার নির্বাচকদের মনোনয়ন দিতে কিংবা বেছে নিতে পারে। কোথাও কোথাও অন্যান্য প্রার্থীর মতোই এ নির্বাচকরাও প্রাইমারি বা দলীয় ককাসে নির্বাচিত হন। ওকলাহোমা, ভার্জিনিয়া এবং নর্থ ক্যারোলাইনার মতো কোনো কোনো রাজ্যে দলীয় কনভেনশনের মাধ্যমে এই নির্বাচন হয়ে থাকে।

🇺🇸আর পেনসিলভানিয়ায় দলীয় প্রচার শিবিরের কমিটি স্থানীয় নির্বাচকদের নাম ঘোষণা করে থাকে। বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচকদের সংখ্যা নির্ধারিত হয় কংগ্রেসে সেখানকার সিনেটর এবং ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ বা ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ সদস্য সংখ্যার অনুপাতে। রাজ্যে নির্বাচকের মোট সংখ্যা হবে ‘সিনেটর’ এবং ‘প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য’র সমসংখ্যক। এ হিসেবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘নির্বাচক’র সংখ্যা (৪৩৫ জন ‘প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য’, ১০০ সিনেটর, ওয়াশিংটন ডিসির জন্য সংরক্ষিত তিনজন নির্বাচক) মোট ৫৩৮ জন। অন্যান্য রাজ্যের মতো সিনেটর এবং প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য না থাকলেও ওয়াশিংটন ডিসির জন্য তিনজন নির্বাচক রাখার বিধান করা হয়েছে।

🇺🇸সংবিধানের ২৩ তম সংশোধনী অনুসারে দেশের সবচেয়ে ছোট রাজ্যের ‘নির্বাচক’ সংখ্যার সমসংখ্যক ‘নির্বাচক’ রাখার বিধান করা হয়েছে এই রাজধানী জেলার জন্য। নির্বাচক সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড় রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫)। এরপর ক্রমানুসারে বাকি ৬টি রাজ্য হলো টেক্সাস (৩৪), নিউইয়র্ক (৩১), ফ্লোরিডা (২৭), ইলিনয় (২১), পেনসিলভানিয়া (২১)। আলাস্কা, ডেলাওয়ার, মন্টানা, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, ভারমন্ট এবং ওয়াইওমিং রাজ্য ৭টির নির্বাচক সংখ্যা সবচেয়ে কম।

🇺🇸এ রাজ্যগুলোর প্রতিটির জন্য রয়েছেন মাত্র তিনজন নির্বাচক। সাধারণ মানুষের অনেকেই ভাবতে পারেন, নির্বাচনের দিন তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন। কিন্তু আসলে তারা ভোট দিচ্ছেন তাদের প্রার্থীর বা দলের নির্বাচককে। নির্বাচকদের নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক রাজ্য তার আইনসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদ্ধতি বেছে নিতে পারে। তবে বর্তমানে সব রাজ্যই কেন্দ্রীয় আইন অনুসারে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের নির্ধারিত দিনকেই এজন্য বেছে নিয়েছে। এদিনে বিভিন্ন প্রার্থী বা দলের মনোনীত নির্বাচকরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। প্রতি ৪ বছর পর পর নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রথম মঙ্গলবার পড়েছে ৬ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী এদিনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু মাসের ১ তারিখ যদি মঙ্গলবার হয়, তাহলে ওই দিন নির্বাচন হবে না, সেক্ষেত্রে পরবর্তী মঙ্গলবার নির্বাচন অনুষ্ঠান করাটাই বিধান।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.