আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সেমিনারে বক্তারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
নিউইয়র্ক: নির্বাচনী বৈতরণী পার হতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাশ করানো হয়েছে। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারি দল এমন আইন পাশ করেছে। এই আইন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করাই এর মূল উদ্দেশ্য। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়, তারা মুক্ত গণমাধ্যম চায় না। অথচ মুক্ত গণ মাধ্যম থাকলে গুজব তৈরি হয়না। দেশের বিশিষ্ট টক-শো আলোচক, কলাম লেখক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেছেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব আয়োজিত-মুক্ত সাংবাদিকতা শীর্ষক রাউণ্ড টেবিল বৈঠকে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি হলে এই রাউণ্ড টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল আরো বলেন, ২০১১ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হলেও সাংবাদিকরা ৫৭ ধারার ভয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। বর্তমান সরকার এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন ধারা রেখেছে-একজন পুলিশ অফিসার যে কোন সময়, যে কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। গ্রেপ্তারও করতে পারবে। অপরাধ করুক বা না করুক, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তা করতে পারবে পুলিশ। আর মামলায় সাজা হলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড। এই আইন থাকলে ভবিষ্যতে সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করতে পারবেন না। দুর্নীতির সংবাদও লিখতে পারবেন না। যে কারো বিরুদ্ধে আইনটির প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে পুলিশ। এমন আইন কেন পাশ হলো-সেটাই বিস্ময়ের।এই বৈঠকে একই বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে টক শো-আলোচক ও কলাম লেখক সুভাষ সিংহ রায় বলেছেন, সাংবাদিকদের সব সময় লড়াই করেই চলতে হয়। উন্নত সমাজ ব্যবস্থায়ও সাংবাদিকরা লড়াই করেন। তিনি বলেন-বর্তমান সরকারের আমলে মিডিয়া জগতের উত্তরণ ঘটেছে এবং মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে তথ্য। তিনি আরো বলেন-কোন আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গেলে তা প্রতিরোধ করতে হলে সাংবাদিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ-বিদেশে সাংবাদিকরা বিবাদে লিপ্ত।রাউণ্ড টেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর এবং সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান রচি। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আজকাল পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর। অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয়ে আরো বক্তব্য রাখেন আজকাল পত্রিকার প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকো, সম্পাদক মনজুর আহমদ, প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, প্রবীণ সাংবাদিক মইনুদ্দীন নাসের, বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসের ব্যুরো প্রধান ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন, লেখক আহমদ মাজহার, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, দেশকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর সভাপতি ও কলামিষ্ট আবু জাফর মাহমুদ, সাংবাদিক ইমরান আনসারী, মানবাধিকার কর্মী কাজী ফৌজিয়া প্রমুখ।বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় চেতনা হচ্ছে গনতন্ত্র, বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সম্পদ কুক্ষিগত না করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা। আমরা যদি এসবের কথা বলি-তাহলে মামলা-হামলার শিকার হতে পারি। তিনি বলেন, আজ যারা আইন করছেন, কাল ঐ আইনে তারাও ফেঁসে যেতে পারেন। অতীতে দেখেছি-বিশেষ ক্ষমতা আইনে সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বিএনপি র্যা ব বানিয়েছিল-এর সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমন উদাহরণ আরো আছে।
আসিফ নজরুল বলেন, যে আইন অস্পস্ট, যে আইন একটি বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে এবং আইনটি প্রয়োগে জবাবদিহিতা নেই-এমন আইন কখনই জনগর পক্ষে যায় না। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।