আ’লীগ অফিসের টিভি চুরি, যুবককে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন

150

ঝিনাইদহে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ের টেলিভিশন চুরির অভিযোগে ক্ষেত থেকে ধরে এনে রানা নামে এক যুবককে গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেছেন ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা।

Capture

গত ২৮ ডিসেম্বর জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে করা ওই নির্যাতনের ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এরপর এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী।

ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবকের সহায়তায় আওয়ামী লীগ নেতা তুহিন রানার হাত-পা বেঁধে গাছে ঝুলাচ্ছেন। শীতের মধ্যে তার পরনে একটি টাওজার ও গেঞ্জি রয়েছে।

গাছে ঝুলানোর সময় থেকেই কাঁদতে থাকেন রানা। কান্না থামাতে তুহিন তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, তোকে মাইরে ফেলব, কেউ কিচ্ছু করবার পারবি নে।

এরপর শীতের কাপড় পরা তুহিন এক যুবকের হাত থেকে লাঠি নিয়ে রানাকে বেদম পেটাতে থাকেন। আর রানা ‘ও মাগো’, ‘ও আল্লাহ গো’, আমি চুরি করিনি বলে চিৎকার করতে থাকেন।

পাশে দাঁড়িয়ে তুহিন এবার আওয়াজ দেন, এই ভাল একটা লাঠি নিয়ে আই। নতুন লাঠি আসার আগেই তিনি হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ফের রানাকে মারতে থাকেন।

এ সময় সেখানে অনেকেই থাকলেও তুহিনকে কেউ বাধা দেননি। ধারণা করা হচ্ছে, উপস্থিতদের কেউ একজন এ ঘটনার ভিডিও করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে, নির্যাতনের ঘটনায় রানার (২৪) বাবা কৃষক ওমর আলী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার প্রধান আসামি শাহিনুর রহমান তুহিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নির্যাতনকারী তাহেরহুদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান তুহিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজারে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় থেকে একটি টেলিভিশন খোয়া যায়। পরদিন সকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান তুহিন গ্রামের কৃষক ওমর আলীর ছেলে রানাকে চোর সন্দেহে ক্ষেত থেকে ধরে আনেন।

পরে তিনি শ্রীপুর বাজারের একটি কাঁঠাল গাছে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে সবার সামনে বেদম মারধর করেন। পরে তাকে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়।

পুলিশ হরিণাকুণ্ডু থানায় এনে রানাকে নিয়ে টিভি উদ্ধারে গেলেও সেটি উদ্ধার করতে পারেনি। পরে তাকে পরিবারের জিম্মায় ফেরত দেয়া হয়।

নির্যাতনে রানা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তাহেরহুদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মনজের আলী বলেন, ‘ভোটের দু’দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে মাঠে কাজ করছিল রানা। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান তুহিন টেলিভিশন চুরির অভিযোগে রানাকে ধরে নিয়ে আসেন এবং গ্রামের একটি গাছে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেছেন, বলে জেনেছি। ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্যাতনের পর পরিবারের সদস্যরা তাকে কুষ্টিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন।’

রানার বাবা ওমর আলী বলেন, ‘আমার ছেলে চুরির সঙ্গে জড়িত নয়। তাকে অন্যায়ভাবে মারা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনুর রহমান তুহিন বলেন, ‘ভোটের ৫ দিন আগে নির্বাচনী ক্যাম্পের টিভি চুরি হয়ে যায়। আমরা জানতে পারি, রানাই টিভিটি চুরি করেছে। কিন্তু, উদ্ধার না হওয়ায় আমি তাকে সামান্য মেরে, পরে চিকিৎসাও করিয়েছিলাম।’

তিনি দাবি করেন, ‘কিন্তু, সেটিকে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ভিন্নভাবে তুলে ধরে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন।’

হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘স্থানীয় আওয়াম লীগ নেতা তুহিন ভোটের কয়েকদিন আগে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পের টিভি চুরির অভিযোগে রানাকে ধরে থানায় আনেন। আমরা তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়েও কোনো টেলিভিশন পাইনি। পরে রানাকে পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় ফেরত দেয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর কি হয়েছে, আমার জানা নেই। রানাকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তুহিনকে গ্রেপ্তার করেছে।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.