আশরাফ আহমেদ এর নতুন বই ‘পাণ্ডুলিপির একাত্তর’ প্রকাশিত
এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ওয়াশিংটনডিসি :এবারের বইমেলা উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসি এলাকার প্রবাসী বাঙালি লেখক ডঃ আশরাফ আহমেদ এর ‘পাণ্ডুলিপির একাত্তর’ নামে স্মৃতিচারণমূলক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে ঢাকার আগামী প্রকাশনী। লেখকের প্রকাশিত সপ্তম এই বইটি সহরোয়ার্দী উদ্যানে আগামী প্রকাশনীর ১০ নম্বর প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। চার বছর আগের লেখকের ‘জলপরি ও প্রাণপ্রভা’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণও একই সংস্থা প্রকাশ করেছে এই বছর। যুদ্ধকালে লেখক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯-২০ বছরের এক টগবগে তরুণ ছাত্র। সূচনালগ্নে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সসস্ত্র প্রস্তুতি নিতে থাকলেও মূলত বাম রাজনীতি-মেরুকরণের ফলে তাঁর শেষ পর্যন্ত আর অস্ত্র হাতে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনি। আবার তা না করতে পেরে দুঃসহ মর্মপীড়া থেকেও তিনি মুক্ত ছিলেন না। তাই মনেপ্রাণে পাকিস্তানের পতন কামনা করেও আভিধানিক সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ছিলেন না এবং এখনো নন। কিন্তু একাত্তরের মার্চের এক তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ষোল এবং এর পরবর্তী অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী তিনি হয়ে আছেন। অবরুদ্ধ দেশে একদিকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন পাকিস্তানিদের হাত থেকে বেঁচে থাকতে, অন্যদিকে আলোচনা করেছেন সসস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের বিরূপ মনোভাব মোকাবেলা করতে। পাকসেনা এবং আলবদরের হাতে নৃশংস মৃত্যুর দুয়ার থেকে বেঁচে এসেছেন নেহাতই ভাগ্যক্রমে। সাক্ষী হয়ে আছেন সাধারণ লোকজনের যুদ্ধাবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রাত্যহিক সংগ্রামের।
যুদ্ধের সর্বগ্রাসী প্রভাব প্রকাশ করতে লেখক এই সব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন কোন রাখঢাক না করেই। এমন কী নিজের এবং তাঁর পরিবারের চরিত্রের দুর্বলতম ঘটনা ও দিকগুলোও তুলে ধরেছেন একজন নির্মোহ দর্শকের দৃষ্টিতে। দীর্ঘ ছেচল্লিশ বছর পরে স্মৃতিচারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত লেখা তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র, লেখকের ছোটভাইয়ের সম্পূর্ণ অবিকৃত ১৯৭১ এর একটি ডাইরি।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সামরিক দিক নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। সেই তুলনায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন, বেঁচে থাকার চিন্তা ভাবনা, ন্যায়-অন্যায়ের টানাপোড়ন, ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে লেখা বই খুব একটা নেই। সেই অভাবটুকু আশরাফ আহমেদ পূরণ করার চেষ্টা করেছেন এই বইয়ের মাধ্যমে। এখানে বহুল জানা ঘটনাগুলো পরিহার করে এপর্যন্ত সম্পূর্ণ অজানা সব ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ৩০৪ পৃষ্ঠার বইটিকে পঞ্চাশটি অধ্যায়ে গল্পের আকারে এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে যেন প্রতিটি একটি বিশেষ ঘটনা বা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে। ফলে পাঠকরা গল্পের মত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অজানা কথা জানতে পারবেন। সুদূর ভবিষ্যতে যে ‘একাত্তর’ ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকবে, একাত্তরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েও এই বইয়ের অনেক কিছুই তা থেকে হারিয়ে যাবে। তাই বইটির নামকরণ করা হয়েছে ‘পাণ্ডুলিপির একাত্তর’ কারণ পাণ্ডুলিপির সবকিছুই মূল বইতে স্থান পায় না।