আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভ : সংঘর্ষ, গাড়ি ভাংচুর
রাজধানী লাগোয়া শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় চতুর্থ দিনের মতো পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, মূল বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও সে হারে বৃদ্ধি ও মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি করে পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে আশুলিয়ার প্রায় অর্ধশত পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ব্যাপক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে পরিবহণ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। শ্রমিকদের সড়ক থেকে হঠাতে ও বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও জলকামান ব্যবহার করেছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে। ঘটনায় আশুলিয়ায় প্রায় অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও জানান তারা।
বুধবার সকাল ৭টায় শ্রমিকরা আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের পার্শ্ববর্তী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করেই তাদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, নতুন মজুরি কাঠামো পূণর্বাবাস্তবায়ন, বেসিক বৃদ্ধির সাথে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সে হারে বৃদ্ধি ও কারখানায় নিরাপত্তা পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে এ আন্দোলনে নেমে পড়ে শ্রমিকরা। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সড়কে রিকশা থেকে শুরু করে কোনো পরিবহণ চলতে দেয়নি শ্রমিকরা।
সকাল ৯টায় নিশ্চিন্তপুর ও নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, সোনিয়া গার্মেন্টস, নিট এশিয়া, ট্রাউজার লাইনস, জনরণ লিঃ, ম্যাগপাইসহ প্রায় ২০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নেমে পড়ে। এসময় ওই সড়কের পরিবহণ চলাচলে তারা বাধা দেয়। ঘটনায় ৮/১০টি পরিবহণ ভাংচুর করে। তাদেরকে ঠেকাতে পুলিশ মারমুখী হলে শ্রমিকদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ টিয়ারসেল ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী ওই এলাকায় এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চলে।
সকাল সাড়ে ১০টায় বেরন সরকার মার্কেট, ছয়তলা, জামগড়া, শিমুলতলা ও ইউনিক এলাকার প্রায় ৩০টিরও অধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থল এর উৎপাদন বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে পড়ে। এসময় শ্রমিকরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনায় ওই সড়কে চলাচলরত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহণ শাহ ফতেহ আলী ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৪২৫৩, সিমেন্ট ভর্তি কাভার্ডভ্যান ঢাকা মেট্রো উ-১১-৪৮৯০, পাজেরো জীপ ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-২২১৮, বরিশাল জ-১১-০০৫৫ মিনিবাসসহ ২৫-৩০টি গাড়ি ভাংচুর করে অবরোধকারীরা।
বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা একপর্যায়ে ইউনিক ও শিমুলতলা পলমল গ্রুপ এলাকা থেকে বিক্ষোভ নিয়ে জামগড়া চৌরাস্তায় এলে পুলিশের একটি দল তাদেরকে বাধা দেয়। বাধা পেয়ে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এসময় জলকামান গাড়ি ও পুলিশের গাড়ি এসে তাদেরকে সড়ে যেতে বললে তারা তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে বলেন। কারণ তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মস্থল থেকে রাস্তায় নেমেছেন। দাবি আদায় করেই তারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন বলে পুলিশকে সাফ জানিয়ে দেন।
কিছুক্ষণ পর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
শিমুলতলা এলাকায় শ্রমিকরা রাস্তায় বড় বড় পাথর ও ময়লা স্তুপের বস্তা ফেলে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সকাল থেকে ওই এলাকার সেড ফ্যাশন, উইন্ডি গ্রুপ, স্টালির্ং অ্যাপারেলস, স্টার্লিং স্টাইল, স্টালির্ং ক্রিয়েশন, সেতারা গ্রুপ, মেডলার অ্যাপারেলস, বান্দো ডিজাইন, এএম ডিজাইন, এনভয় গ্রুপ, ডিজাইনার জিন্স, দি রোজ ড্রেসেস, ডেকো গ্রুপ, হিয়ন অ্যাপারেলস, দি ড্রেস আইডিয়াস, পলমল গ্রুপ সহ প্রায় ৩০টি কারখানার প্রায় ২০ সহ¯্রাধিক শ্রমিক তাদের দাবিতে অটল থেকে বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষ জড়িয়ে পরে।
সকাল ১০টায় স্টার্লিং অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা কারখানা অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের সাথে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উৎপাদন কর্মকর্তা সহ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে। এসময় কর্মকর্তাদের রক্ষায় শাহিন নামে ওই কারখানার আয়রনম্যান এগিয়ে এলে তাকে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা মারধর করে। এতে তার মাথায় ও কপাল দিয়ে রক্ত ঝড়তে দেখা গেছে। তাকে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিকে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। ঘটনায় আরো অনেকেই আহত হয়েছেন বলে শ্রমিকরা নিশ্চিত করেছেন।
নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের চিকিৎসা কেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫ শ্রমিক আহতাবস্থায় এসেছে। এদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং গুরুতর আহতদের ভর্তি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আশুলিয়া থানা ইন্সপেক্টর জাভেদ মাসুদ বলেন, শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় পরিবহণ চলাচলে বাধা, ভাংচুর ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। গতকালের শ্রমিকদের এ আন্দোলন দমাতে বেলা সাড়ে ১০টায় পুলিশের সাথে বিজিবিকে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করতে দেখা গেছে।