আসছে বি,সি,সি,ডি,আই বাংলা স্কুলের ফান্ড রেইজিং ডিনার
এ্যন্থনী পিউস গমেজ,ভার্জিনিয়াঃ আমরা বাংলাদেশী- দেশ আমাদের ঠিকানা, আমাদের অস্তিত্বের শেকড়। বাংলা ভাষা থেকে শুরু করে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং এর গৌরবময় ঐতিহ্য আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।
আমাদের পরিচয়ের মূল সূত্র গাঁথা রয়েছে আমাদের দেশ এবং দেশের মা-মাটি-মানুষের সাথে। আমরা জীবন-জীবিকার টানে দেশমাতৃকা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি দীর্ঘ সময়ের জন্য কিন্তু স্বদেশপ্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবোনা কখনোই। তাইতো প্রবাসে থেকেও আমরা বুকের গভীরে ধারন করে আছি আমাদের দেশ, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যকে। আমাদের স্বপ্ন আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের এই দেশপ্রেম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাকে ভবিষ্যতের পথ ধরে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে, মূলস্রোতে মিশে গিয়ে তারা তুলে ধরবে তাদের পূর্বপুরুষের দেশ- আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে এবং আমাদের আজন্ম লালিত সংস্কৃতিকে। আর প্রবাসের মাটিতে স্বদেপ্রেমে স্পন্দিত এ সবুজ স্বপ্নের বাস্তব রুপায়নের জন্য সেই প্রত্যয় নিয়ে দীর্ঘ ২৬ বছর নিরন্তর পথ চলছে, কাজ করে যাচ্ছে বিসিসিডিআই বাংলা স্কুল! বিসিসিডিআই-এর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি মানুষকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য, অভিনন্দন এমনি সমাজ সেবামূলক আত্মত্যাগের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রযাত্রাকে।
একথা অনস্বীকার্য যে এদেশের প্রেক্ষাপটে এবং বাস্তবতায়ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের দেশের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভাবধারায় গড়ে তোলা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার । এদেশে জন্মগ্রহনকারী প্রতিটি বাঙালি ছেলেমেয়েরা একধরনের মূল্যবোধের টানাপোড়নে এবং সাংস্কৃতিক সংকটে ভোগে। আর আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই টানাপোড়নে জড়িয়ে পরার আগে অথবা টানাপোড়ন থেকে টেনে তুলে নিয়ে তাদের শেকড়ের সাথে সম্পৃক্ত করার অভিপ্রায়ে এক বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পথ চলছে বিসিসিডিয়াই বাংলা স্কুল।
কিন্তু সাড়া বছর জুড়ে এসব কার্য পরিচালনার জন্য, বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য, আমাদের ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার জন্য এবং এই কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখার জন্য তহবিল গঠন একান্তভাবে প্রয়োজন। শুধু চলমান কার্যক্রমকে বহমান রাখাই নয়, অর্থ তহবিল গঠন করতে পারলে তা বিসিসিডিআই-কে সাহায্য করবে আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য আরও কিছু উন্নয়নমূলক প্রয়াস হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতে। আর সেই জন্যই এই মহৎ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বিসিসিডিআই বাংলা স্কুল- আয়োজন করেছে তাদের ফান্ড রেইজিং ডিনার/“এ্যনুয়াল গ্যালা”। এছাড়া এই অনুষ্ঠানে আমাদের কম্যুনিটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন কিছু ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা দেয়ার আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে সবার প্রিয় এবং পরিচিত মুখ… রেদোয়ান চৌধুরীকে আহবায়ক করে তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে এই ফান্ড রেইজিং ডিনার বা “এ্যনুয়াল গ্যালা” অনুষ্ঠানটির পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে এবং অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।
অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে- এই তহবিল গঠন অনুষ্ঠানে কেন যাবো, গিয়ে কি লাভ? উত্তরে সহজভাবে বলা যায়- আমাদের প্রবাসী নতুন প্রজন্মের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্বদেশী সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে গড়ে তুলতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে, একজন সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে বিসিসিডিআই-এর কল্যানকামী কর্মপ্রয়াসের পথ সুগম করে নিজের ভূমিকা রাখতে, একজন বাঙ্গালী হিসেবে নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে স্বদেশী সংস্কৃতির প্রসারে অংশীদার হতে।
যদি কারো মনে এমন ভাবনা আসে… আমি বিসিসিডিআই-এর সাথে জড়িত নই, আমিতো অন্য সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত বা আমি কোন সংগঠনের সাথেই জড়িত নই- তাহলে আমি কেন যাবো? উত্তরটা এমন- মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কোন কল্যান কাজে হাত বাড়িয়ে সাহায্য করার জন্য কোন সংগঠনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতে হয় না বা সম্পৃক্ত থাকতে হবে এমন কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। আপনার কল্যানকামী মানসিকতাই যথেষ্ট। বিসিসিডিআই আমাদের হয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য কার্যক্রমগুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের ত্যাগ, সময় এবং শ্রমের বিনিময়ে- তারা শুধুই কর্ম বাহক বা কাজ এগিয়ে নিয়ে জাবার জন্য প্রতিনিধি মাত্র, মূল হচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়েদের কল্যান, তাদের গড়ে তোলা। আপনি ইচ্ছে করলেই এই মহতী উদ্যোগে সহভাগী হতে পারেন। আপনার সাহায্যের ফসল আপনাকে মানসিক শান্তি এবং তৃপ্তি দেবে।
এমন প্রশ্নও কারও কারও মনে আসাটা স্বাভাবিক- থাক, এক সন্ধ্যার ডিনারে গিয়ে এতগুলো টাকা খরচ করার কোন মানে হয়না। ভাবনাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এইটুকু আপনার সামনে তুলে ধরা যায়- আমাদের প্রতিদিনের দৈনন্দিন জীবনের অতিরিক্ত প্রয়োজন মেটানোর জন্য, নিজেদের শখ মেটানোর জন্য, অনেক সময় শুধুই নিজের বা পরিবারের সদস্যদের তৃপ্তির জন্য, অনেক সময় প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনেও আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অর্থ ব্যয় করে থাকি। সারা বছরের বাড়তি খরচের হিসেব আমরা কখনো করিনা… জীবন চলছে সময়ের স্রোতে। কিন্তু আপনার সাড়া বছরের বাড়তি আয়েসী খরচের একটি ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে আপনি একটি মহতী কাজের গর্বিত অংশীদার হতে পারেন। জ্ঞান দেয়ার উদ্দেশ্যে নয়, আপনাকে মহতী কর্মপ্রয়াসে যুক্ত করার জন্য বিনীত প্রচেষ্টা মাত্র। আপনার এই দান এবং অংশগ্রহন আপনাকে আর্থিকভাবে অনেক বেশী নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবেনা অংকের সীমানায়, কিন্তু আপনার সহযোগিতার প্রতিফলন ও প্রতিফল সমাজের জন্য, আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য বিরাট ভূমিকা রাখবে এতে কোন সন্দেহ নেই। মূলতঃ এটা হবে স্বদেশের ভাষা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের প্রসারে আপনার কল্যানকর অংশগ্রহন। আমরা সবাই মিলে অনেক মহৎ কাজ সম্পন্ন করতে পারি, প্রয়োজন শুধু কল্যানকামী মানবতাবাদী মানসিকতা।
পরিশেষে শুধু এইটুকুই বলতে চাই- আমাদের সমাজের যে কোন সংগঠন যে কোন সময়ে এধরনের কোন কল্যান পরিকল্পনা হাতে নিয়ে যদি সমাজের কল্যানে এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের সবার জন্য এটাই শ্রেয় যে- শুধু সমাজকল্যানের জন্য, মানবতাবাদী কর্মপ্রয়াসে হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য একজন মানুষ হিসেবে, একজন বাঙালি হিসেবে সবকিছু পেছনে ফেলে এগিয়ে আসা উচিৎ, ক্ষুদ্র চিন্তার বেড়াজাল থেকে আমাদের মুক্তির প্রয়োজন- এটা আমাদের একটি সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রাপ্তিতে নয়, ত্যাগেই আনন্দ, দানেই আনন্দ… কল্যানকামনাই মানবতাবাদের অন্যতম স্তম্ভ। মানুষের প্রতি ভালবাসা, মানবতার প্রতি মমত্ববোধের মাধ্যমে আমরা সুন্দর মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারি। আর আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক প্রসারে অংশীদার হয়ে আমরা স্বদেশপ্রেমী বাঙ্গালি হিসেবে গড়ে উঠতে পারি। আসুন আমরা সুন্দর মানুষ হয়ে, স্বদেশপ্রেমী বাঙালি হয়ে বিসিসিডিআই বাংলা স্কুল আয়োজিত এই ফান্ড রেইজিং ডিনারে সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এই মহতী উদ্যোগকে সফল করে তুলি।