ইতিহাস গড়ে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নিউজবিডিইউএস:ভারতের দেরাদুন থেকে হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশের ক্রিকেট পাগল অনেক ভক্তের ঈদ আনন্দ যখন মাটি হওয়ার জোগাড় তখনই মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশকে ঈদের উৎসব উপহার এনে দিলেন বাংলার বাঘিনীরা। রোববার দুপুরে এশিয়া কাপের ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা এখন এশিয়া সেরা। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন। এশিয়ার রাজত্ব তাদের! কিনরারা একাডেমি ওভালে টস জিতে বোলিং করে ভারতকে মাত্র ১১২ রানে অল আউট করে দিয়েছিল সালমা খাতুনের দল। এরপর শেষ বলের উত্তেজনায় ৩ উইকেট হাতে রেখেই শাসরুদ্ধকর জয় তুলে নেয় টাইগ্রেসরা। এর আগের ৬ এশিয়া কাপের প্রতিটিতেই জিতেছিল ভারত। বাংলাদেশের মেয়েরা এই প্রথমবার কোন বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেই চুমু খেলেন শিরোপায়।
বাংলাদেশের পুরুষ দল এই মালয়েশিয়া থেকেই ১৯৯৯ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের এখনো পর্যন্ত কোনো শিরোপা জেতা হয়নি। তিনটি ফাইনালে উঠেছে তারা। কিন্তু কোনোটিতে শিরোপার স্বাদ মেলেনি। বাংলার মেয়েদের হাত ধরেই প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা এলো।
বাংলাদেশের মেয়েদের টি-টুয়েন্টি অভিষেক ২০১২ সালে। এশিয়া কাপের এই ফাইনালের আগে তারা খেলেছেন মোট ৪০ ম্যাচ। এই টুর্নামন্টের লিগ পর্বে টানা ৪ জয়ের আগে বলার মতো তেমন কিছুই ছিল না। মোটে তিনটি জয় ছিল খাতায়। হার ছিল ৩৩টি। কিন্তু এবার গোটা এশিয়াকে শুধু নয় ক্রিকেট বিশ্বকেই চমকে দিলেন টাইগ্রেসরা। শ্রীলঙ্কার কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পর একে একে একে উড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াকে। আর এবার তো শাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে এশিয়ার রানী হয়ে গেলেন বাংলার বাঘিনীরা। আগের ৬ এশিয়া কাপেরই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এবার তাদের স্পম শিরোপাবঞ্চিত করে বাংলাদেশকে উৎসবে ভাসালেন সালমা রহমানের টি-টুয়েন্টি দল। প্রশ্ন নেই, এটাই বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজনক ও ঐতিহাসিক কীর্তি।
ক্রিকেট তো এমন ম্যাচই চায়। টান টান উত্তেজনার খেলা। শেষ বলে এসে নির্ধারিত হয় ম্যাচ জিতবে কারা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৯ রান। দ্বিতীয় বলে একটি চার মেরে সমীকরণটি অনেকটাই হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন রুমানা আহমেদ। পরের বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে তিনি ব্যাট করার সুযোগ দেন সানজিদা ইসলামকে। কিন্তু ওভারের চতুর্থ বলে সানজিদা উইকেট হারান। শেষ দুই বলে জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ৩ রানে। পঞ্চম বলে রুমানা ও সানজিদা এক রান নেন। রান পূর্ণ করার পর বোলিং প্রান্তে ক্রিজের বাইরে ছিলেন রুমানা। উইকেট ভেঙে তাকে রান আউট করেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর। বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য সমীকরণটি বেশ কঠিন হয়ে যায় তখন। শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন দুই রান। ব্যাট করছিলেন জাহানারা আলম। কাউরের করা শেষ বলে দুই রান নিয়ে টাইগ্রেসদের জয় এনে দেন এই ২৫ বছর বয়সী।
এর আগে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার মিলে যোগ করেন ৩৫ রান। পরপর দুই বলে দুজনেই উইকেট হারানোয় কিছুটা চাপে পড়ে যায় দল। ৫৫ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনের পর জুটি বাধেন নিগার সুলতানা ও রুমানা আহমেদ। এই দুজনের জুটি বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছিল নিশ্চিন্তে ম্যাচ শেষ করার। তবে দলীয় ৮৩ রানে আউট হয়ে যান নিগার। তিনি দলীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছিলেন। এরপর ৯৬ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ফাহিমা খাতুন সাজঘরে ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় দল। তবে রুমানার দক্ষ ব্যাটিং বাংলাদেশকে নিয়ে যায় শেষ ওভারের সেই উত্তেজনার সমীকরণে। আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ২৩ রান। আরও দুই উইকেট হারালেও শেষপর্যন্ত ৭ উইকেটে ১১৩ রান করে বাংলার টাইগ্রেসরা জিতে নিয়েছে নিজেদের প্রথম এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি।
এদিন দারুণ বল করেছেন ভারতীয় লেগস্পিনার পুনম যাদব। চার ওভার বল করে মাত্র ৯ রানে তিনি পেয়েছেন চার উইকেট। ২ উইকেট পেয়েছেন অধিনায়ক কাউর।
প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য দারুণ কাজে এসেছে। মাত্র ৩২ রানেই ভারতের প্রথম চার উইকেট তুলে নেন টাইগ্রেস বোলাররা। এরপর ভারতীয় অধিনায়ক কাউর ও ভেদা কৃষ্ণমূর্তির জুটিতে আসে ৩০ রান। এরপর আবার আঘাত হানেন সালমা-রুমানারা। মুহূর্তেই ভারতের স্কোরকার্ড হয়ে যায় ৭ উইকেটে ৭৪ রানে। দলটি আরো আগেই অল আউট হয়ে যেত যদি কাউর একপাশের উইকেট আগলে না রাখতেন। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিনি করেন ৪২ বলে ৫৬ রান। এই ইনিংসের বদৌলতেই ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ভারত ১১২ রান করে। বাংলাদেশের দুই স্পিনার রুমানা ও খাদিজা দুইটি করে উইকেট পান।
ব্যাট হাতে ২৩ রান, বল হাতে ২২ রান খরচায় ২ উইকেট- অল রাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে রুমানার হাতেই।