ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন একজন নারী

778

।। খাতুনে জান্নাত কণা ।।

নারীকে যোগ্য সম্মান দিতে আজও কুন্ঠা বোধ করে আমাদের সমাজ, সংসার। যেখানেই নারী সম্মান অর্জন করে, তার পেছনে তাকে অনেক ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তা আদায় করে নিতে হয়। অথচ, ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের তুলনায় নারীর বুদ্ধিমত্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অগ্রসর বলে প্রমাণিত। তাই তো ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে একজন নারীকেই আমরা দেখি। যিনি ছিলেন রাসূল (সা.)এর প্রিয় সহধর্মিনী হযরত খাদিজা (রাযি.)। তেমনি, নিজের ঈমান রক্ষা করতে গিয়ে প্রথম যিনি শহীদ হয়েছিলেন, তিনিও ছিলেন একজন নারী- হযরত সুমাইয়া (রাযি.)।

ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর জন্ম হয়েছিল তৎকালীন আরবের নিম্নগোত্রের পরিবারে। যাদেরকে দাস অথবা দাসির কাজ করতে হতো। অভিজাত বংশের প্রভাব বা ছায়া তাঁর মাথার উপর ছিল না। রাসূল (সা.) দ্বীন ইসলাম প্রচার করার সাথে সাথে হযরত সুমাইয়া (রাযি.) ও তাঁর স্বামী এবং ছেলেরাও মুসলমান হয়ে যান।

হযরত সুমাইয়া (রাযি.) ছিলেন শুরুর দিক থেকে ইসলাম গ্রহণ করার মাঝে ১৭তম ব্যক্তি। ইসলাম গ্রহণ করার পর হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর উপর আবু জেহেল অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। আবু জেহেল তাদেরকে মক্কার আল-বাতহা উপত্যকার মরুভূমির তপ্তবালুর মাঝে লোহার পোষাক পরিয়ে শুইয়ে রাখত। যেহেতু হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর কোন নিজস্ব গোত্র ছিল না, তাই আবু জেহেল তার ইচ্ছামত হযরত সুমাইয়া (রাযি.)কে অত্যাচার করত।

রাসূল (সা.) যখন হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর পাশ দিয়ে যেতেন তখন বলতেন-”হে ইয়াসিরের পরিবার-পরিজন! ধৈর্য্য ধর। তোমাদের জন্য সুসংবাদ। তোমাদের জন্য রয়েছে জান্নাত!” রাসূলুল্লাহ(সা.) যখন হযরত সুমাইয়া (রাযি.)কে জান্নাতের সুসংবাদ দিতেন, তখন হযরত সুমাইয়া (রাযি.) রাসূল (সা.)কে বলতেন- “ইয়া রাসূলুল্লাহ(সা.)! আমি জান্নাতের সুগন্ধ এই তপ্তমরুভূমির বুকে শুয়েই পাচ্ছি।”

দীর্ঘদিন অত্যাচার নির্যাতন করার পরও যখন হযরত সুমাইয়া (রাযি.) দ্বীন ইসলাম পরিত্যাগ করলেন না, তখন একদিন নরাধম আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে উনাকে শহীদ করে দেয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)।
হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর মৃত্যুর পর নরাধম আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর স্বামী হযরত ইয়াসীর ইবনে আমির (রা.)কেও তীরবিদ্ধ করে শহীদ করে।

হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর শাহাদাতের ঘটনাটা ঘটে ৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে। অর্থাৎ রালূলুল্লাহ (সা.)এর নবুওয়্যাত লাভের ৫ বছর পর হযরত সুমাইয়া (রাযি.) শাহাদাত বরণ করেন।

বদর যুদ্ধে আবু জেহেল নিহত হলে রাসূল (সা.) হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর ছেলে হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন- “আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন তোমার মায়ের ঘাতককে হত্যা করেছেন।”

হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর একমাত্র সন্তান হযরত আম্মার (রাযি.)এর তত্ত্বাবধানেই মদীনার কুবা শহরে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম মসজিদ তৈরি হয়। আজ থেকে ১৪০০ বছরপূর্বে এই মহান নারী সাহাবীয়্যাহ হযরত সুমাইয়া (রাযি.) ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হয়ে যান।
ইসলাম গ্রহণ করার কারণে, আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া (রাযি.)এর প্রতি কত অত্যাচারই না করেছিল। কিন্তু হযরত সুমাইয়া (রাযি.) দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে যাননি।

রাসূল (সা.) যখন দ্বীন ইসলাম প্রচার করা শুরু করেন, তখন মক্কার একদম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকেরাই প্রথম দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
হযরত সুমাইয়া (রাযি.), হযরত বেলাল (রাযি.); এরা ছিলেন মক্কার সেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোক।
এই মহান মহিলা সাহাবীয়্যাহ মক্কা বিজয় দেখে যেতে পারেননি।

হযরত সুমাইয়া (রাযি.) যখন শহীদ হন, তখন সারা পৃথিবীতে ১০০ জনেরও বেশী মুসলমান ছিলেন না।

আমরা মুসলমানরা তখন এতই অসহায় ছিলাম যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে হযরত সুমাইয়া (রাযি.)কে লোহার বর্ম পরিয়ে মরুভুমির উত্তপ্ত বুকে শুইয়ে রাখা হত, কিন্তু সাহাবীরা চোখের পানি ঝরানো ছাড়া কিছুই করতে পারতেন না। কিন্তু মক্কার সেই চরম প্রতিকূল ও রুঢ় পরিবেশেও হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাযিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে দাঁড়াননি। [তথ্য- নেট থেকে সংগৃহীত]

খাতুনে জান্নাত কণা, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।economic_right-2017-10-27-22-55-21

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.