উত্তরাঞ্চলে বিএনপি ও জামায়াতে টানাপোড়েন

472

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের উত্তরাঞ্চলে আসন ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের টানাপোড়েন চলছে। এ ইস্যুতে উভয় দলের নেতারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। এ নিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

স্থানীয় জামায়াত নেতারা বলছেন, বিএনপি জোটগতভাবে তাদের ৯টি আসন ছেড়ে দিলেও বুধবার দলের নেতারা ৮টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছেন। এসব আসনে বিএনপিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের ব্যাপারেও জামায়াত অনড় অবস্থানে।

জামায়াত বলছে, রাজশাহী-১ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে সেখানে নির্বাচন করবে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান। এদিকে বিএনপি বলছে, উত্তরাঞ্চলটি হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি।

এই অঞ্চলের সব আসনেই বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আসন ভাগাভাগি হয়নি। উত্তরাঞ্চলে শেষ পর্যন্ত তাদের ক’টি আসন দেয়া হবে তার হিসাব মেলাচ্ছেন বিএনপির হাইকমান্ড।

তবে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, আগামী ৮ ডিসেম্বর জামায়াতের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। জামায়াত বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনটি বিএনপি যদি না ছাড়ে তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেবে তারা। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ওই আসনে।

কথা হয় জামায়াতের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তারা যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে তারা সাংগঠনিকভাবে উত্তরাঞ্চলে কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও মাঠের অবস্থা ভালো। রাজশাহী বিভাগের ৩৯টির মধ্যে ১৮টি এবং রংপুরের ৩৩টির মধ্যে ১৪টিতে তাদের নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে। দুই বিভাগে ৩২টি আসনে জামায়াতের প্রস্তুতি ছিল প্রথমদিকে।

সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত বিএনপির কাছে ২৩টি আসন দাবি করেছে। বিএনপির হাইকমান্ড জামায়াতকে ৯টি আসন ছেড়ে দিতে সম্মত হলেও তৃণমূল এতে রাজি নয়। ৯টির মধ্যে রংপুর-৫ আসনে জামায়াত প্রার্থী গোলাম রাব্বানী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে না পারায় আসনটি হাতছাড়া হয়ে গেল জামায়াতের। তবে উত্তরাঞ্চলে জামায়াতের পক্ষ থেকে ১৫টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে।

জামায়াতের একটি সূত্র বলছে, উত্তরাঞ্চলের ২৩টি আসনে বিএনপির চেয়েও তাদের অবস্থান ভালো থাকার পরও আমরা ৮টি আসনেই ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। আসনগুলো হচ্ছ- ঠাকুরগাঁও-২ (আবদুল হাকিম), দিনাজপুর-১ (মোহাম্মদ হানিফ), দিনাজপুর-৬ (আনওয়ারুল ইসলাম), নীলফামারী-২ (মনিরুজ্জামান মন্টু), নীলফামারী-৩ (আজিজুল ইসলাম), গাইবান্ধা-১ (মাজেদুর রহমান) সিরাজগঞ্জ-৪ (রফিকুল ইসলাম খান ও পাবনা-৫ (ইকবাল হুসাইন)। এর বাইরে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়ন আইনি ঝুঁকির মধ্যে থাকায় ওই আসনেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের অধ্যাপক মজিবুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সমর্থন না পেলেও জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের আমীর ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল স্বতন্ত্র ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হারুনুর রশীদ ও আবদুল ওয়াহেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনটি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে এ আসনে দু’বার জামায়াতের লতিফুর রহমান এমপি হন। বুলবুল বলেন, আমি নিজেই এ আসনের প্রার্থী। এজন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ বিএনপিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন নিয়ে ঝামেলা হলে উত্তরাঞ্চলে জোটের ভোটের ওপর প্রভাব পড়বে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী মিজানুর রহমান মিনু বলেন, জামায়াতের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের আলোচনা হতে পারে। আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে জামায়াতের কতজন ধানের শীষ নিয়ে ভোট করবেন সেই নির্দেশনা আসতে পারে। দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে তা মেনে নেয়া হবে।

সূত্র: যুগান্তর

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.