এটাই কী নির্বাচন কমিশনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বাস্তব নমুনা : ডা. শফিকুর রহমান

546

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের জাতীয় সংসদ সদস্য পদ প্রার্থীদের সারা দেশেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বাধা প্রদান এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল এবং ঢাকা-১৫ আসনে ২০-দলীয় জোটের মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান মঙ্গলবার প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সরকার ও নির্বাচন কমিশন মুখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললেও দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো পরিবেশ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। বরং তার উল্টা চিত্রই আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। সকল দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরো বলেছেন যে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ইতিহাস সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।

371664_164

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। অথচ ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই অব্যাহতভাবে গ্রেফতার করছে। গত ৪ ডিসেম্বর রাতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী এড. বেলায়েত হোসাইনসহ ৫ জন নেতা-কর্মীকে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা থেকে পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আটক করার পর তাদের এখনো আদালতে সোপর্দ করা হয়নি। তাদের নিখোঁজ করে রাখা হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা জজকোর্ট চত্বর থেকে মিরপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আব্দুল, সাধারণ সম্পাদক ওয়াইজ উদ্দিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ মুকুলসহ কয়েক জন নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। মিরপুর ১২, ১৩, ১৪ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচিত কাউন্সিলার মাসুদা আক্তার ও কামরুন্নাহার নামক একজন মহিলা কর্মীকে শিশুসহ পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে।

গত ৯ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের ২টি ছাপাখানা থেকে ধানের শীষ প্রতীকের ১৮ হাজার পোস্টার ও ৩ হাজার প্রচারপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও-এ বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ৬টি গাড়ি ভাংচুর করেছে। অতি সম্প্রতি নোয়াখালীতে বিএনপির নেতা সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদূদ আহমদের গাড়িতে ও মুন্সীগঞ্জে শাহ মোয়াজ্জেমের গাড়ির উপরে গুলি বর্ষণ করে তাদের হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ ধরনের সন্ত্রাসী তাণ্ডব বন্ধের কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করছে না। এটাই কী নির্বাচন কমিশনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বাস্তব নমুনা!

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা হয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি তো দুরের কথা, ২০ দলীয় জোটসহ অন্যান্য সকল বিরোধী দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদেরকে কোন ধরনের নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের কার্যক্রমে সকল পদে পদে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মামলা, হামলা, মারপিট, ভাংচুর এবং বিরোধী দলগুলোর অফিসে তালা ঝুলানো থেকে শুরু করে সরকারী দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক উগ্র সন্ত্রাসী কার্যকম অব্যাহত রয়েছে।

আমি নির্বাচন কমিশনকে উল্লেখিত সকল বাধা দ্রুত অপসারণ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এ নির্বাচন ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনকে এর দায়ভার বহন করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আমাদের আহবান, সকল প্রকার ভয়ভীতি ও চাপ উপেক্ষা করে আপনাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্ত করার এই উদ্যোগে আপনারাও সক্রিয়ভাবে অবদান রাখুন।

তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে লেভেন প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ জামায়াত-বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলের গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.