ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ফজলে রাব্বী আর নেই

607

সাবেক মন্ত্রী ও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্ল্যাপুর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি. আই. এম. ফজলে রাব্বী চৌধুরী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাত ২টা ৭ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। (ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বৎসর।

gaibandha-home

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের উত্তর জনপদের বলিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সমাজসেবক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.টি.আই.এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী ১৯৩৪ সালে ১ অক্টোবর গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার তালুকজামিরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা ছিলেন।

তিনি গাইবান্ধা-৩ আসন থেকে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি হাঁস-মুরগীর সংক্রামক মরণব্যাধি “রাণীক্ষেত” রোগ  নিরসনে নতুন ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে রাণীক্ষেত রোগের প্রকোপ কমে গেছে। গাইবান্ধা আদর্শ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাথপুরে তার নিজ নামে দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাদুল্ল্যাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, ব্রিজ-কালভার্ট ও স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির প্রভৃতি নির্মাণ-পুণঃনির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগসহ নিঃস্ব মানুষের সাহায্য প্রদান, গৃহহীনকে গৃহ নির্মাণে ঢেউটিন প্রদান, শীতবস্ত্র দানসহ জনকল্যাণমূলক কাজ সাধ্যমতো করে জনগণের পাশে ছিলেন। জনসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ “জাতীয় ব্যক্তিত্ব স্মৃতি পরিষদ” কর্তৃক ২০০৫ সালে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার স্মৃতিপদক লাভ করেন।

তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, জর্ডান, মিশর, ওমান, সৌদি আরব, জার্মানি, অস্ট্রোলিয়া, কানাডা, আলজেরিয়া এবং আমেরিকাতে পার্লামেন্টে ডেলিগেট হিসেবে গমন করেন।

 ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অ্যানিম্যাল হ্যাজব্যনটিতে ২য় স্থান অধিকার করে বি.এস.সি (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে আমেরিকা সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯৬৩ সালে টেকসাস এন্ড এস হতে এম.এস.সি এবং ১৯৬৫ সালে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে এ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে এবং ১৯৬৯ সালে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এ ছাড়াও ডীন, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি উলফসন কলেজের ফেলো নির্বাচিত হন। একজন সদালাপী ও স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে তিনি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।

পরবর্তী সময় তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমিমন্ত্রী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ও সংস্থাপন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সভাপতি সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটি, কৃষি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

তার ভাতিজা রায়হান কবীর চৌধুরী রুপন বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে ফজলে রাব্বী চৌধুরী গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি রাত ২টা ৭ মিনিটে মারা যান।

উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম মিয়াকে ২২,৮২৫ ভোটে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফজলে রাব্বি।

এরপর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাকশালপন্থী প্রার্থী আবু তালেব মিয়াকে ১৬,৯৯৭ ভোটে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলামকে ৩৭,০৯০ ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন তিনি।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. ইউনুছ আলী সরকারকে ১৪,৬৭০ ভোটে পরাজিত করে এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামকে ১,০২,৬৩৫ ভোটে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.