ওয়াশিংটনে একতারা’র মনোমুগ্ধকর মঞ্চ নাটকে খুশি প্রবাসীরা

307

নিউজবিডিইউএস:
ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রবাসীদের নাটকের মঞ্চায়ন সঙ্গত কারণেই খুব একটা চোখে পড়ে না। নাটক মঞ্চায়নের গোটা প্রক্রিয়াটি একটি যৌথকলা বা সমন্বিত শিল্পপ্রয়াস; যার জন্য প্রয়োজন প্রলম্বিত পূর্বপ্রস্তুতি। নির্দেশকের উপস্থিতিতে পাত্র-পাত্রী ও আনুষঙ্গিক কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত অনেক মানুষের দীর্ঘদিনের পৌনঃপুনিক মহড়া এবং টিমওয়ার্কের পর নাটক মঞ্চে আসে। এখানকার কর্মব্যস্ত জীবনে এমন লম্বা সময় বের করার সুযোগ সীমিত। তাই নাটকের মঞ্চায়নও এখানে বিরল ঘটনা।

সম্প্রতি ৩রা জুন (শনিবার) মঞ্চায়িত হয়ে গেলো শাকুর মজিদ রচিত একতারার আয়োজন ‘হাছন জানের রাজা’। ভার্জিনিয়ার থমাস এডিসন হাই স্কুল অডিটোরিয়ামে নাটকের সফল মঞ্চায়ন করেন একতারার শিল্পী কলাকুশলীরা। সংলাপ-গান ও নাচের সমন্বয়ে দুই ঘন্টা ব্যাপী সম্পূর্ণ হল ছিল প্রবাসী দর্শকদের উপস্থিতিতে পিন পতন নীরবতা।

একতারার কর্ণধার শেখ মাওলা মিলনের কঠোর পরিশ্রম আর নির্দেশনা ও পরিচালনায় আয়োজনটি ছিলো শিল্পসুধায় পরিপূর্ণ। নাটকের সকল কলাকুশলীরাই ছিলেন স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ। ইভেন্ট ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন রাচনা মাওলা।

নাটকের শুরুতে একতারার সহযোগীদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করে সম্মাননা প্রদান করেন মোহাম্মদ ইমরান ও আব্দুল মুহিত। পদক গ্রহণ করেন পিপল এন টেক এর চ্যান্সেলর আবু বকর হানিফ ও ফারহানা হানিফ , লোন অফিসার আব্দুল মতিন,ডঃফাইজুল ইসলাম ও ইনারা ইসলাম, সংগঠক আক্তার হোসেন,পারভীন ও কবির পাটোয়ারী ও লাভ শেয়ার বিডি। দীর্ঘ সাত মাস কঠোর অনুশীলন শেষে নাটকটি মঞ্চায়নে সফলতার ছাপ ফুটে উঠে শিল্পী-কলাকুশলীদের চোখে-মুখে। নাটকে হাছন রাজার চরিত্রে অভিনয় করেন শেখ মাওলা মিলন।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তার শুভেচ্ছা বাণীতে বলেন, হাছন, লালন, দূরবীন শাহ, কানাই লাল আমাদের সংস্কৃতির অংশ। লোক সংস্কৃতি প্রবাসের বুকে পরিবেশন কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। এই কঠিন কাজটি করতে পেরেছে একতারা। জাতি সংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত বলেন এই নাটকটি আমেরিকার প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে মঞ্চায়িত হোক। তিনি এই বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
নাটক শেষে পরিচালক শেখ মাওলা মিলন বলেন, আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে সকল নাট্যকর্মী ও দর্শকদের সহোযোগীয়তায়। তিনি কৃতজ্ঞচিত্রে স্পনসর, অভিনয় শিল্পী, মিডিয়া, দর্শকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মঞ্চ নাটক সময়ের সাথে হারিয়েছে জৌলুশ। তবে, সংস্কৃতি প্রেমী মানুষের মাঝে এখনো রয়েছে সেই সুধা। বিশেষ করে একতারার অনুষ্ঠানটি একটু হলেও ব্যতিক্রমী ছিল। যার কারণে দেখা যায়- লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাইরের থেকে শিল্পী না এনেও, হল ভর্তি করানো যায়। এমনকি দর্শকরা আগ্রহের সাথেই প্রবেশমূল্য দিয়েই ভিতরে প্রবেশ করেন।উল্লেখ্য যথাসময়ে শুরু হওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনদের জন্য আলাদাভাবে সিট বরাদ্দ করা হয়েছিল। এজন্য উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা আয়োজকদেরকে ধন্যবাদ জানান।

নাটকের অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ভয়েস অব আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, সরকার কবির উদ্দিন, আনিস আহমেদ, ব্যবসায়ী জাহিদ খান প্রমুখ।

নাটক দেখে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেউ কেউ সেই খুশির কথা তুলে ধরেছেন সোশ্যাল মিডিয়াতেও। তাদেরই একজন- ডাক্তার সোমা বস। তিনি লেখেন- একটি ভালো অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে শিল্পীরাও যেমন উৎসাহী, ঠিক তেমনি করেই একটি উন্নতমানের অনুষ্ঠান দেখতে শিল্পপিপাসু দর্শকবৃন্দরাও কিন্তু সমানভাবেই আগ্রহী। হ্যাঁ, মানছি, আমাদের কমিউনিটিতে অনেকেই আছেন যারা ঘরোয়া “বিরানী পার্টি” ফেলে অথবা ফ্রি অনুষ্ঠান না হলে এ ধরনের উন্নতমানের কোনও অনুষ্ঠানেই যান না, তবে তাদের কথা আলাদা। তাদের প্রায়োরিটি তাদের কাছে।

‘আমরা যারা শিল্পসংস্কৃতির পূজারী, তারা মোটামুটি স্থানীয় সংগঠন দ্বারা আয়োজিত সব অনুষ্ঠানগুলোতেই যোগদান করে আনন্দ পাই। দেশ থেকে আগত কোন পছন্দের শিল্পী থাকলেও আমরা যাই, আবার স্থানীয় শিল্পীদেরকেও তাদের যোগ্য সম্মান দিতে আমরা কৃপণতা করি না। একতারাকে আমি কুর্ণিশ জানাই এ জন্য যে, একতারা স্থানীয় অনেক গুনী শিল্পীদের জন্য সুন্দর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছিলো, যেখানে তাদের প্রতিভা প্রকাশে উজ্জ্বলিত হয়ে উঠেছিলো হাছন জানের রাজার মঞ্চ। তাদের পরিবেশনা মুগ্ধ করে দর্শক সারিতে বসে থাকা প্রতিটি মানুষকে। মঞ্চে এবং মঞ্চের আড়ালে থাকা একতারার প্রতিটি কলাকুশলীদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন ডিএমভি এলাকাবাসীদের অত্যন্ত সফল একটি অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.