এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ওয়াশিংটনডিসি:গত ২১শে জানুয়ারী,২০১৮ ভার্জিনিয়ার স্প্রিং ফিল্ডস্থ হলিডে ইন একপ্রেস হোটেলের বলরুমে ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার সর্বজন পরিচিত এবং অন্যতম জনপ্রিয় সংগঠন ধ্রুপদ এবং বাই- এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “নজরুল সম্মেলন-২০১৮”-এর প্রথম প্রস্তুতি সভা বা ‘কিক-অফ মিটিং’। আগামী ১১ই এবং ১২ই আগষ্ট,২০১৮ ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনস্থ কেনমোড় মিডল স্কুল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৭তম “উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন”। অনুষ্ঠানে স্থানীয় অনেক গন্যমান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী এবং সংস্কৃতিপ্রেমী অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের যোগ্য উত্তরসুরী, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারিনী তাঁর পৌত্রি অনিন্দিতা কাজী এবং তার স্বামী শাহীন তরফদার। আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার সবাইকে “নজরুল সম্মেলন-২০১৮”-এর বিশাল আয়োজনে সম্পৃক্ত করার জন্য তাদের অনুষ্ঠান পরিকল্পনার উপর আলোকপাত করে সবাইকে অবহিত করা এবং আয়োজনে সবার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করা। আয়োজনের সার্বিক সমন্বয়ে ছিলেন ধ্রুপদের কর্ণধার মিঃ হিরণ চৌধুরী এবং বাই-এর সভাপতি মিঃ শফি দেলোয়ার কাজল।
অনুষ্ঠানটিকে দু’টি পর্বে ভাগ করে নেয়া হয়েছিল- প্রথম পর্বে নজরুল সম্মেলনের উপর আলোচনা ও বক্তব্য, দ্বিতীয় পর্বে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । মিঃ দিপু খানের উপস্থাপনায় পরিচালিত হয় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব এবং প্রভাতী দাসের উপস্থাপনায় পরিচালিত হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। অনুষ্ঠানে শুরুতে নজরুল সম্মেলনর আয়োজন, অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, সম্মেলনের তাৎপর্য এবং নজরুল ইসলামের সৃষ্টি সম্ভারের ব্যপ্তি ও গভীরতার উপর আলোকপাত করে বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভয়েস অব আমেরিকার বর্তমান বাংলা বিভাগের প্রধান, স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রোকেয়া হায়দার, উত্তর আমেরিকা নজরুল সম্মেলন কমিটির সভাপতি- ডঃ সুলতান আহমেদ, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগে তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে কাজ করে এখন অবসরপ্রাপ্ত মাসুমা খাতুন, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের বর্তমান সংবাদ বিশ্লেষক এবং ব্রডকাস্টার জনাব আনিস আহমেদ, বাই-এর সভাপতি জনাব শফি দেলোয়ার কাজল, কবি পৌত্রি অনিন্দিতা কাজী এবং শাহীন তরফদার প্রমুখ। জনাব শফি দেলোয়ার কাজল নজরুল সম্মেলনের মত একটি বিশাল আয়োজনে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য এবং সক্রিয় সহযোগিতা করে একে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য বিশেষ আহবান এবং অনুরোধ জানান। তার বক্তব্যে রোকেয়া হায়দার বাংলা সাহিত্যকে কাজী নজরুল ইসলাম তার অসামান্য সৃষ্টির অবদানে সমৃদ্ধ করে গেছেন বলে উল্লেখ করে সবাইকে এই নজরুল সম্মেলনের মত মহতী আয়োজনকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানান। ডঃ সুলতান আহমেদ তার বক্তব্যে আসন্ন এই নজরুল সম্মেলনকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য তাদের কমিটির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন। জনাব আনিস আহমেদ বাংলা সাহিত্যের দুই সম্পদ, রবিন্দ্র-নজরুল দু’জনেরই অপরিসীম অবদানের কথা উল্লেখ করে নজরুল সম্মেলন আয়োজনের তাৎপর্য সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন এবং এর সার্বিক সফলতায় তার সম্পৃক্ততা এবং সহযোগিতার পূর্ন প্রতিশ্রুতি দান করেন। এছাড়া মাসুমা খাতুনও তার বক্তব্যে কবি নজরুলের ইসলামের সৃষ্ট সম্ভার সবার কাছে, বিশেষ করে কাজী নজরুলের উপর ইংরেজী ভাষায় রচিত বইগুলোর মাধ্যমে তরুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য এমনি আয়োজনের গুরুত্বের উপর সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারিনী (সঙ্গীত শিল্পী, বাচিক শিল্পী, সঞ্চালক, লেখক) কবি পৌত্রি অনিন্দিতা কাজী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, তার দাদুর সৃষ্টিকে সবার মাঝে আরও বেশী করে ছড়িয়ে দেবার জন্য, তার দাদুর অনেক অজানা কথা সবাইকে সহভাগিতা করার জন্য তিনি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেছেন উত্তর আমেরিকায় এবং সম্প্রতি তিনি এবং তার স্বামী শাহীন তরফদার মিলে পারিবারিক উদ্যোগে স্থাপন করেছেন “কাজী নজরুল ফাউন্ডেশন” এবং গান ও বাচিক শিল্প শিক্ষার জন্য শুরু করেছেন তাদের স্কুল- “সঞ্চিতা”। তিনি আয়োজিত এবারের “নজরুল সম্মেলন”-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন এবং পূর্ন সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। শাহীন তরফদার তার বক্তব্যে কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির ব্যাপ্তি ও গভীরতার উল্লেখ করে বলেন যে, কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টির যথাযথ মূল্যায়ন এবং আরো বেশী প্রচার ও প্রসার প্রয়োজন এবং কাজী নজরুল ইসলামকে, তার সৃষ্টিকে সবার কাছে আরও বেশী করে পৌছে দেয়ার জন্যই তাদের “কাজী নজরুল ফাউন্ডেশন”-এর গঠন এবং পথচলা। এরপর ছিল সংক্ষিপ্ত পরিসরে অনুপম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক আয়োজন জুড়ে ছিল নজরুল ইসলামের কবিতা, গান, গানের সাথে নৃত্য পরিবেশনা এবং সব শেষে নজরুল ইসলামের গানের ছায়ায় সুরের লহরী পরিবেশিত হয় যন্ত্র সঙ্গীতে- সরোদ আর তবলার যুগলবন্দীতে। সাংস্কৃতিক পর্বে প্রথমেই নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার সবার পরিচিত এবং সবার প্রিয় নৃত্য শিল্পী, কোরিওগ্রাফার রোকেয়া হাসি। তিনি নজরুল গীতি “অঞ্জলী লহ মোর সঙ্গীতে” গানটির সাথে অত্যন্ত চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করে সবাইকে মোহিত করেন। এছাড়া যারা জনপ্রিয় নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন, তারা হলেন- দিনার মনি, তাপস গোমেজ এবং অনিলা চৌধুরী।
দরাজ কন্ঠে নজরুলের কালজয়ী “বিদ্রোহী” কবিতাটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে আবৃত্তি করে সবাইকে মুগ্ধ করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চীফ অব মিশন, জনাব মাহবুব হাসান সালেহ। এছাড়া চমৎকার আবৃত্তির আবহে সবাইকে আচ্ছন্ন করেছিলেন মিসেস সিলিকা কণা। আর সবার শেষে সরোদ এবং তবলার যুগলবন্দীতে নজরুল সঙ্গীতের ছায়ায় অসাধারণ পরিবেশনায় সবাইকে বিমুগ্ধ করে দেন শ্রীমান সৌম্য চক্রবর্তী এবং জনাব মোনির হোসেন। সরোদ পরিবেশনায় ছিলেন অত্যন্ত গুনী শিল্পী, সরোদবাদক শ্রীমান সৌম্য চক্রবর্তী এবং তবলায় ছিলেন আন্তর্জাতক খ্যাতিসম্পন্ন তবলাবাদক, জনাব মনির হোসেন। তাদের পরিবেশনায় মুহূর্মুহূ করতালিতে ঝরে পড়ছিল দর্শক-শ্রোতাদের অভিনন্দন ও ভালবাসা।
উল্লেখ্য, সাংস্কৃতিক পর্বে তবলায় সংগত করেছেন মিঃ পল ফেবিয়ান গোমেজ এবং শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন ওয়াশিংটনের স্বনামধন্য সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার জনাব জামিল খান।
অবশেষে সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি টানা হয়। সবারই প্রত্যাশা- ধ্রুপদ এবং বাই (বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইঙ্ক) আয়োজিত এবারের “নজরুল সম্মেলন-২০১৮” আয়োজনের নান্দনিকতায় এবং পরিবেশনার সৌকর্য্যে হবে অন্যন্য এবং সাফল্যমন্ডিত।