ওয়াশিংটনে আসছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী “মেজবান”

613

এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ভার্জিনিয়াঃ প্রথমবারের মত আগামী ২রা অক্টোবর, ২০১৬  ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার বাঙ্গালীদের জন্য আসছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী “মেজবান”। স্বদেশের প্রতি গভীর ভালবাসা আর অনুরাগে যখন আবিষ্টহয়আমাদের অনুভূতি-  সেখানে ঝরে পড়ে সকালের শিশির, টিনের চালে বেজে উঠে টুপ টাপ বৃষ্টির ছন্দ, ডাক দিয়ে যায় সবুজ বনানীর হাতছানি, কানে বেজে উঠে বাঁশ ঝাড়ে বসে থাকা পাখীর ডাক, নস্টালজিক ভাবনায় আমাদেরবহুদূর পেছনে টেনে নিয়ে যায় নদীর বুকে পাল তুলে বয়ে যাওয়া নৌকা, স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে গোধুলীর রঙ্গে রাঙ্গানো গ্রাম বাংলার চিরপ্রিয় মেঠোপথ। শুধু তাই নয়,আমাদের ভাললাগার অনুভবে নাড়াদিয়েযায়বহুযুগধরে পরম যত্নে লালিত ঐতিহ্যের ছোঁয়া। হাজার মাইল দূরে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের আয়েশী জীবনধারার মাঝেও বার বার ফিরে আসে আমাদের ফেলে আসা দিনগুলো, আবিষ্ট করে আমাদের আঞ্চলিক-জাতীয় প্রিয় ঐতিহ্যের প্রানরসে সিক্ত নির্মল আনন্দের রেশ.. ।  আমরা স্মৃতির বালুকা বেলায় এলিয়ে দিই আমাদের ভাবনারআঁচল- যেখানে আমাদের অস্তিত্বে্র শেখড়, আমাদের বেড়ে ওঠা ছেলেবেলা, আমাদের  স্মৃতিময় অতীত। তাই যখন কোন স্বদেশী ঐতিহ্যের আয়োজনের কথা এসে যায়… তখন আমরা ফিরে যাই আমাদের প্রানের স্বদেশভূমিতে, আমাদের ভাললাগার ভূবনে। এমনি এক ভাল লাগার ঐতিহ্যবাহী আনন্দ আয়োজন নিয়ে আসছে ওয়াশিংটনপ্রবাসীচট্টগ্রামবাসীরা- তাদের অঞ্চলের হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য “মেজবান” নিয়ে

14408974_1101844896519127_1168372620_n

বাংলাদেশের দক্ষিণে উপকূল অঞ্চল সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে সৌন্দর্যের কলসী কাঁখে দাঁড়িয়ে আছে যে পাহাড়ী কন্যা, তার নাম চট্টগ্রাম। উঁচু-নিচু ঢেউ খেলে যাওয়া পাহাড়, সবুজের সমারোহ আর কর্ণফুলীর আচলঘেরা চট্রগ্রাম শুধু বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বা নদীবন্দরই নয়, এখানে লুকিয়ে আছে তাদের অসংখ্য ঐতিহ্যের অহংকার।এমনি এক প্রাচীন ঐতিহ্য “মেজবান”- যার মূল ধারনা হচ্ছে এলাকাবসীদের নিয়ে বিশেষ উপলক্ষ্যে বিশাল আয়োজনে ভোজন-আপ্যায়নের আনন্দ আয়োজন। “মেজবান” শব্দটি এসেছে পার্সিয়ান শব্দ ভান্ডার থেকে, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “হোষ্ট” বা “আপ্যায়নকারী”। হাজার বছর আগে সমাজের বিত্তশালীরা তাদের যে কোন উৎসব আয়োজনে এলাকার সবাইকে নিমন্ত্রন করে বিরাট ভোজ-বিলাসের আয়োজন করতেন তাদের প্রভাশালী বিত্ত-বৈভব প্রকাশ করতে। সেটা কালের পরিক্রমায় পরিবর্তন হয়েছে অনেক, কিন্তু মৌলিকতা হারায়নি। এখনও এমনি আয়োজনে প্রচুর লোকসমাগম হয় এবং জনে জনে নয়,  কিন্তু ঢালাওভাবে প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে নিমন্ত্রন জানান হয়। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই অতিথি-   সবার সাথে সমানভাবে এমনি সহভাগিতা করার প্রচলন সত্যিই প্রসংশনীয়। এমন ঐতিহ্য শুধুই চট্টগ্রামের মাটিতে হয়ে থাকে এবং তাদের গর্বিত অহংকারের প্রতীক। আর নিমন্ত্রত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় সাদা ভাত, বিশেষ পদ্ধতিতে রান্নাকৃত মেজবান গরুর মাংস, চানার ডাল এবং মুরগী বা খাসীর তরকারীও হয়ে থাকে। কিন্তু প্রধান হচ্ছে সাদা ভাত, মেজবান গরুর মাংসের তরকারি এবং চানার ডাল।

14080870_1101844783185805_1239430952_n

ওয়াশিংটনের মাটিতেও সত্যি সত্যি এমনটি হতে যাচ্ছে? কে আয়োজন করছে এই মেজবান? কেমন আয়োজন করছে তারা? জানতে ইচ্ছে করছে? আসুন আপনাদের নিয়ে যাই আয়োজকদের কাছেঃ

এই “মেজবান” ঐতিহ্যের আয়োজনের চিন্ত্রাধারা যাদের মাথায় প্রথম এসেছে, তাদেরমধ্যেএকজনহচ্ছেনরেদোয়ান চৌধুরীএবংসাথেছিলেনতারকিছুবন্ধুরা, যারাআমাদের ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার সবার পরিচিত মুখ। বিস্তারিত জানার জন্য এক সন্ধ্যায় ফোনে যোগাযোগ করে রেদোয়ান চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করলামঃ

 

পিউস:

এই “মেজবান” আয়োজনের চিন্তা কিভাবে এসেছে? প্রবাসের মাটিতে এমনি আয়োজন অনেক কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়সাপেক্ষ! কিভাবে আয়োজন হচ্ছে?

রেদোয়ান:

আসলে এটা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে হঠাৎ করেই ক্যাজুয়ালী এসে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় আলোচনা শুরুকরে যখন প্রস্তাবনাটা করে বসলাম,সবাই আনন্দচিত্তে উৎসাহিত হয়ে তা গ্রহন করে নিল। ব্যস… তারপর শুরু হলো এনিয়ে আয়োজনের চিন্তা, সভা, পদক্ষেপগ্রহন, স্থান নির্বাচন, খাবারের মেন্যু নির্ধারনইত্যাদি। সবাই   আমরা অনেক বেশী আনন্দিত এবং দিনটির জন্য অপেক্ষা করছি।

14409213_1101844693185814_622052713_n

পিউসঃ

আপনার সাথে আর কারা এই আয়োজনে অংশীদার?

রেদোয়ানঃ
আমার সাথে আছে আমার ঘনিষ্ট সব বন্ধুরা, যেমন- সঞ্জয় বড়ুয়া, প্রনববড়ুয়া,মাহ্সাদরুপম,জীবক বড়ুয়া, অসীমবড়ুয়া, রাজিব বড়ুয়া, সরোজ বড়ুয়াসহ আরোঅনেকে।আয়োজনে আমরা হলেও এটাকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য সবার সাহায্য-সহযোগিতা এবং অংশগ্রহন একান্ত প্রয়োজন।

 

পিউসঃ

মূল আয়োজনটা কিভাবে সাজাচ্ছেন? কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

রেদোয়ানঃ

“মেজবান”-এর জন্য বড় একটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। ঠিকানাহচ্ছেঃ

Fort Hunt Park

8999 Fort Hunt Road

Alexandria, VA-22308 (Shelter# A)

 

আর আয়োজনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে ভালই। প্রচুর লোক সমাগম হবে বলে আশাকরছি

ফেইসবুক পেইজে অনেকেই সাড়া দিচ্ছেন। এপর্যন্ত বিপুল সংখ্যক লোক অনলাইনে ফ্রিটিকেট

সংগ্রহ করেছে, যা আমাদেরকে উৎসাহিত করছে অনেক। আর মেন্যু হচ্ছে- ঐতিহ্য  অনুযায়ী

মেজবান গরুর মাংস, খাশীর মাংস, মুরগীর মাংস, চানার ডাল এবং সাদা ভাত। আর রান্না হবে

তাজা আয়োজনের মাঠে সবার সামনেই, এটাই এর ঐতিহ্য এবং  বিশেষত্ব। আর আমরা চাচ্ছি যে

এটা হবে মূলতঃ “ফুড এন্ড ফান”। সবাই আসবে, সবার সাথে আনন্দেসোসালাইজেশন করবে,

সুস্বাদু ‘মেজবান’ খাবার খেয়ে তৃপ্ত হবে ব্যাস- এটাই আমরা প্রত্যাশা করছি। কোন বক্তৃতা নয়,

বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচার নয়, কোন পূর্ব আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান  নয়…

শুধু কিছু চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান পরিবেশন করা হবে চাটগাঁইয়া আমেজে আপনাদের মিশিয়ে

নেবার জন্য।

 

রাত হয়ে যাচ্ছে… পরের দিন ভোর বেলায় উঠতে হবে কাজে যাওয়ার জন্য, তাই অনুষ্ঠানের জন্য সাফল্য কামনা করে বিদায় নিলাম রেদোয়ান চৌধুরীর কাছ থেকে।

14429567_1101844969852453_683166978_n

 

আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছি চট্টগ্রামের ‘মেজবানের’ জন্য… একটি ঐতিহ্যবাহী

আনন্দ আয়োনের অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করার প্রত্যাশায়, যে আয়োজন হতে যাচ্ছে

গতানুগতিক আয়োজন থেকে সম্পূর্ন ভিন্নধারায়।

 

আপনারাও সবাই আমন্ত্রিত এবং চলে আসুন সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রামের এই ‘মেজবান’

অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে, সবার সাথে একটি আনন্দমুখর দিন অতিবাহিত করতে…

আর সুস্বাদু ‘মেজবানী’ খাবারতো থাকবেই!

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.