ওয়াশিংটনে শেখ হাসিনার সংবর্ধনার গুজব ছড়াচ্ছে আওয়ামীলীগ
নিউজবিডিইউএস:যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের একটি অংশ। প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি স্থানীয় মেট্রো ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া ও ম্যারিল্যান্ড ষ্টেট আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিরা অথচ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের একটি অংশ এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য ভার্জিনিয়ায় গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও পালন করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ভার্জিনিয়ায় পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসায় ঘনিষ্ঠজনদের সাথে জন্মদিন পালন করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে গত বুধবার সন্ধ্যায় ভার্জিনিয়ার স্প্রীংফিল্ডের একটি রেস্তোরাঁর স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মিদের এক যৌথ প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়।এ সভায় ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে এমন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়নি। ঢাকা কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড থেকেও এ ধরনের কোন নির্দেশ আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের পর স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত হবে বলে দলের স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু এ ঘটনাকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নেতারা ঢাকঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছেন ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। অত্র এলাকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা নানা ধরনের বিভ্রান্ত্রের শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের গুজবের ফলে প্রধানমন্ত্রীকে দূর দুরান্ত থেকে দেখতে আসা প্রবাসীরা প্রতিবছরেই নানা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। তাই এ ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন মেট্রো ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়া ও ম্যারিল্যান্ড ষ্টেট আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মিরা।
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে আসছেন। ১৪ দিনের যুক্তরাষ্ট্রে সফরে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেবেন তিনি। ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষন দেবেন। ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বৈঠক করবেন। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সাথেও দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক হবার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
প্রতি বছরের ন্যার এবারো বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা দেবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটনের টাইমস স্কোয়ার এলাকায় ম্যারিয়ট মারকুইসের বলরুমে অনুষ্ঠিত হবে এ সংবর্ধনা। ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে আগমন উপলক্ষ্যে জেএফকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনারও আয়োজন করেছে আওয়ামীলীগ।
অপরদিকে, চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রে সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নেতাকর্মিদের মাঝে সৃষ্ট কোন্দল কোন ভাবেই মেটানো যাচ্ছে না। দিনদিন তা বেড়েই চলছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন নিয়ে কোন বিভক্তি ও মতবিরোধ নেই বলে নেতারা দাবি করলেও বাস্তবে তা নেই। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মিদের কোন্দল এখন ওপেন সিক্রেট। প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক সফর করবেন।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম চৌধুরী নিজেদের আখের গোছাতেই বছরের বেশী ভাগ সময় বাংলাদেশে অবস্থান করে থাকেন। ফলে ব্যক্তিগত ভাবে তাঁরা দু’জন লাভবান হলেও দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। তৃণমূলের নেতাকর্মিদের মতামতের তোয়াক্কা না করে একক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরই চলছে এ দলটি।
আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিজেদের ব্যবসা-বানিজ্য, দেন-দরবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে তৃণমূল নেতাকর্মিদের অভিযোগ। তবে নিউ ইয়র্কে আওয়ামীলীগে কর্মির চেয়ে নেতার সংখ্যাই বেশি। কমিটি নিয়ে দলটিতে রয়েছে নানা কোন্দল। পদ-পদবী নিয়েও অনেক সময় ঘটে যায় নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা বেশির ভাগ সময়েই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকায় দলটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষে নিজাম চৌধুরী, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, লুৎফুল করিম, চন্দন দত্ত, আইরিন পারভীন, আব্দুল হাসিব মামুন, এ্যাড. শাহ বখতিয়ার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, জাকারিয়া চৌধুরী, আব্দুর রহিম বাদশা ও তৈয়বুর রহমান টনি এবং অপর পক্ষে রয়েছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান, আকতার হুসেন, সৈয়দ বসারত আলী, ডা, মাসুদুর রহমান, মোহাম্মদ সোলেয়মান আলী ও ফারুক হোসেন প্রমূখ। এই পক্ষে ড.সিদ্দিকুর রহমান তার একক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজেকে ব্যাপক সমালোচিত করেছেন। তার ঠিক-বেঠিক সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তার উপর নেমে আসে নানা দূর্যোগ। কথায় কথায় তিনি তার অধিন্যস্ত নেতকর্মিদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভয় দেখান। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব-বিভেদের কারণে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলে এর সকল দায়-দায়িত্ব সিদ্দিকুরকেই নিতে হবে বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া দলের এই নাজুক অবস্থার জন্য নিজাম চৌধুর, সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ গংদেরও দায়ভার নিতে হবে বলে জানান কয়েকজন পরীক্ষিত নেতা। তবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছামাদ আজাদ তার পদ ধরে রাখতে সুবিধাবাদী অবস্থানে আছেন। তিনি কারো আগেও নেই, পিছেও নেই। দুই গ্রুপের সাথেই ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলছেন।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি না হলে দলটি বিপর্যয়ের দাড়প্রান্তে পৌঁছাবে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
একটি সুত্র জানায়, বিদ্রোহী এবং পদবঞ্চিত নেতাকর্মিদের দাবির প্রেক্ষিতেই ‘যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে’- এই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। তিনি দেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে সাধারন কর্মিদের ধারনা দলে যে সকল নোংরা বিষয় নিয়ে মতভেদ চলছে তাতে অচিরেই দলটি নাজুক অবস্থায় পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।(সুত্রঃবাংলাপ্রেস)