কবি আনিস আহমেদের “অন্তরপুরের নিরন্তর স্বপ্ন”-এর মোড়ক উন্মোচন
এ্যন্থনী পিউস গমেজ, ওয়াশিংটনডিসিঃগত শনিবার, ৫ই আগষ্ট,২০১৭ মেরীল্যান্ডের গেইথার্সবার্গ রিজিওনাল লাইব্রেরী মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যলুমনাই ফোরাম ইঙ্ক (ডুয়াফি)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওয়াশিংটন প্রবাসী কবি আনিস আহমেদের চতুর্থ কবিতার বই “অন্তরপুরের নিরন্তর স্বপ্ন”-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। কবি আনিস আহমেদের এ কবিতার বইটি এবারের একুশের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে, প্রকাশক মিজান পাবলিশার্স এবং বইটির প্রচ্ছদশিল্পী সামিনা আমিন।
বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী (শিক্ষক, লেখক, কবি, বেতার সাংবাদিক, সংবাদ বিশ্লেষক, বাচিক শিল্পী, সঞ্চালক), স্বনামধন্য এবং সবার প্রিয় কবি আনিস আহমেদ আমাদের বিগত চার বছর ধরে আমাদের একটার পর একটা কবিতার বই উপহার দিয়ে যাচ্ছেন এবং বাংলা সাহিত্যের ভান্ডারে যোগ হচ্ছে এক প্রবাসী কবির সৃষ্টিসম্ভার। সৃজনশীলতার কোন ভৌগলিক সীমারেখা নেই সেকথা অনস্বীকার্য, তবে প্রবাসের সৃষ্টিশীলতায় যে বিষয়টি পরিলক্ষিত হতে পারে তা হচ্ছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাপ্রসূতঃ দৃষ্টিভঙ্গির এবং প্রকাশভঙ্গির- অনুভূতির, উপলব্ধির বা সৃজনশীল মননশীলতার নয়। তাই সাবলীলভাবেই তার লেখায় উঠে এসেছে স্বদেশ প্রেম, প্রকৃতি প্রেম, মানবতা, সমকালীন প্রেক্ষাপট, সামাজিক অন্যায্যতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, জীবনের গভীর পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি, সমাজ ও মানবিক সম্পর্কের ললিতকলা এবং জীবনের নানা রং-এর ক্যানভাস।
শতরুপা বড়ুয়ার প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটির চমৎকারভাবে পরিচালিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং তিনিই “অন্তরপুরের নিরন্তর স্বপ্ন” বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক এবং গবেষক ডঃ করুণাময় গোস্বামীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ডুয়াফি’র প্রেসিডেন্ট সাবরিনা রহমান শর্মী এবং প্রধান অতিথি অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্বাগ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।
প্রকাশিত কবিতার বই থেকে নির্বাচিত কিছু কবিতা নিয়ে কবি আনিস আহমেদের সাথে কথোপকথন এবং আলোচনা, গান, কবিতার বই থেকে আবৃত্তি আর কবিতার ছন্দে নৃত্যকলার যুগলবন্দীতে পুরো অনুষ্ঠানটি জুড়ে ছিল নান্দনিকতার ছোঁয়া। যারা “অন্তরপুরের নিরন্তর স্বপ্ন” থেকে আবৃত্তি করেন, তারা হলেন- সামিনা আমিন (অন্তরপুরের নিরন্তর স্বপ্ন), ইকবাল বাহার চৌধুরী (প্রথম প্রেমের কাব্য), একেএম আসাদুজ্জামান (কেবলই উপাখ্যান), মিজানুর রহমান খান (মাতাল মনের বেতাল বাক্য), শওকত দিপু (দূরের জানালা কাছের মানুষ), আতিয়া মাহজাবিন (অনুভবে এক শিল্পী সত্বা),
অদিতি সাদিয়া রহমান (অনুভবে পাওয়া সেই তুমি), সাবরিনা চৌধুরী ডোনা (সাপ ও সিঁড়ির সমীকরণ), সিলিকা কণা (স্বচ্ছ প্রতিবিম্বের নিয়ত সন্ধানে), হুমায়রা হায়দার (ফাগুন দিনের আগুন কথা), ডঃ মোহাম্মদ নকীবুদ্দীন (বিচলিত বিশ্বে নিত্য বসবাস), কুলসুম আরা খুকী (মনোজ উপলব্ধিতে এক ঐকতান), শাহনাজ ফারুক (আলো আঁধারের কথকতা), ইশরাত সুলতানা (কী বোর্ডে বেলী ফুল), আরিফুর রহমান স্বপন (তীরবিদ্ধ এক পাখীর কথা), শারমিন চৌধুরী (কবিতার শরীর ও অশরীরি সত্য), অদিতি সাদিয়া রহমান (বাষ্পে বিলীন বেদনা এখন)। এছাড়া স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন ডঃ আনিসুর রহমান (কবির উপর কবিতা)।
অনুষ্ঠানে যাদের সুরেলা কন্ঠের প্রাঞ্জল সঙ্গীত পরিবেশনায় অনুষ্ঠানটিতে যোগ হয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা, নান্দনিক আয়োজনের আবহে সৃষ্টি করেছে ভাল লাগার দ্যোতনা, তারা হলেনঃ আনন্দ খান, ডরোথি বোস, দেবশ্রী মিত্র, কুমকুম বাগচী, মধুমিতা মৈত্র, রুমানা সুমি এবং নাসিম সুলতান।
অনুষ্ঠানে ব্যঞ্জনাময় আবহের সৃষ্টি করে যারা নৃত্যের ছন্দে ছুঁয়ে যান সবার মন, তারা হলেন ওয়াশিংটনের সবার প্রিয় কোরিওগ্রাফার/নৃত্যশিল্পী রোজমেরী মিতু গনসালভেস এবং রোকেয়া জাহান হাসি।
অনুষ্ঠানের অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং বিশেষ পর্ব ছিল “কবি এবং কবিতাকে নিয়ে সংলাপ”- যেখানে কবি ও কবিতার উপর আলোচনা ও কথোপকথনে মেতে উঠেন কবি আনিস আহমেদ, আশীফ এন্তাজ রবি এবং ফারজানা মুসাওয়ির দীপা।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ছিল কবি আনিস আহমেদ এবং তার লেখা কবিতার উপর ওয়াশিংটন প্রবাসী স্বনামধন্য লেখিকা নাজমা রহমানের ব্যক্তিগত ভাবনা ও অনুভূতির চমৎকার প্রকাশ, ভয়েস আমেরিকার সাবেক বেতার সাংবাদিক, সম্প্রচারক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জনাব ইকবাল বাহার চৌধুরী এবং স্বনামধন্য মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ভয়েস আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দারের অভিজ্ঞতায় কবি আনিস আহমেদের উপর তাদের ভাবনার প্রতিফলনসহ অনেকের অনুভূতির সহভাগিতা, যা পুরো অনুষ্ঠানটিতে যুক্ত করেছে একটি ভিন্ন মাত্রা, প্রকাশ করেছে কবি আনিস আহমেদের কবি প্রতিভার বিকশিত দিকগুলো।
অনুষ্ঠানের শেষপ্রান্তে এসে কবি আনিস আহমেদ ডুয়াফি’র সকল কর্মকর্তা এবং সদস্য-সদস্যাদের এই আয়োজনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়া তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানা সকল অংশগ্রহনকারীদের, কলাকুশলীদের, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন- তাদের প্রতিও তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটিতে তবলায় সহযোগিতা করেন আশীষ বড়ুয়া, শব্দনিয়ন্ত্রনে ছিলেন আরিফুর রহমান স্বপন এবং রাশিক ইশরাক, ভিডিওগ্রাফীতে ছিলেন সফিকুল ইসলাম।
সর্বোপরি তিনি উপস্থিত সকল শ্রোতা-দর্শকদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠান শেষে কবিতার বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেন কবি আনিস আহমেদ… আর মুহূর্তগুলোকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে যান কবি আনিস আহমেদের সাথে ক্যামেরার সামনে!
অতঃপর সন্ধ্যার প্রাক্কালে একটি চমৎকার মোড়ক উন্মোচনের আনন্দ অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সবাই বিদায় গ্রহন করেন- অত্যন্ত সফল ও স্বার্থকভাবে অনুষ্ঠিত হলো ডুয়াফি’র আরেকটি আয়োজন।