কানাডায় স্থায়ীভাবে বসাবসে আগ্রহীদের যে তথ্য জানা জরুরী
ডাঃজাহিদ দেওয়ান শামিম,নিউইয়র্ক
জীবন-যাপনে শীর্ষ ও স্বপ্নের দেশ কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ ও কিছু তথ্য বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ইমিগ্রেশন নিয়ে কিভাবে যাওয়া যায়। এই প্রশ্ন প্রায় বা প্রতিনিয়ত অনেক আমাকে করে থাকেন। এনিয়ে কিছু লেখা বা তথ্য দিতে চাই এখনে।
আপনেরা জানেন, ইউএস নিউজ এন্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের গবেষণা এবং জরিপে জীবন-যাপনে কানাডা এবার পৃথিবীর শীর্ষ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যাই হউক আসল কথায় আসি। এখানে কানাডায় ইমিগ্রেশন ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিয়ে কিছু তথ্য দেয়া প্রচেষ্টা মাত্র। হয়তো আগ্রহী কারো কাজে আসলে আসতেও পারে। ইমিগ্রেন্ট ফ্রেন্ডলি “জাস্টিন ট্রুডু” ২০১৫ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ইমিগ্রেশন পদ্ধতি আগের তুলনায় অনেক সহজ করা হয়েছে।
ফলশ্রুতিতে, পৃথিবীর অনান্য দেশের নাগরিকদের মত বাংলাদেশীদেরও স্বপ্নের দেশ কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশটি ২০২০ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে বিভিন্ন ক্যাটাগরিত ১০ লাখ বিদেশী দক্ষ শ্রমিক নেবে। তারা এতে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ করার অনুমতি ও পরিশেষে নাগরিকত্ব পাবেন। সম্প্রতি কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রী আহমেদ হুসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন। হাই স্কিল্ড, ফ্যামিলি মাইগ্রেশন, ট্রেড স্কিল্ডসহ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ৬০ ধরণের প্রোগ্রামের আওতায় এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সিআরএস (Comprehensive Ranking System) পয়েন্টের নিম্নমুখী স্কোরের প্রবণতা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর সবচেয়ে কম পয়েন্ট দিয়েও কানাডায় আবেদনের সুযোগ পাওয়া যাবে। তিন বছরে কানাডিয়ান সরকার দেশের বিভিন্ন প্রদেশে পর্যায়ক্রমে ১০ লাখের বেশি পেশাজীবী বিভিন্ন খাতে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
২০১৭ সালে তারা ২ লাখ ৮৬ হাজার ইমিগ্রেন্টকে (অভিবাসী) স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বীকৃতি দিয়েছে। এজন্য পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের অভিজ্ঞ পেশাজীবীরাও ১০ ক্যাটাগরির যেকোনও এক ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন। সাধারণত এক্সপ্রেস এন্ট্রি ও পিএনপি এই দুই ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বেশি আবেদন করা হয়। যেসব ১০ ক্যাটাগরিতে আবেদনের মাধ্যমে দ্রুত যাওয়া যাবে সেগুলো হলোঃ- সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট ম্যানেজার, বিজনেস এনালিস্ট, কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ, আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার, সিনিয়র অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে দক্ষ। এছাড়া অন্যান্য দক্ষ পেশাজীবীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে কানাডায় নাগরিকত্ব পাবার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিজের আছে কিনা তা জানতে জন্য কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহনের পাশাপাশি বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, অনান্য দেশের মত কানাডাতেও সবসময় আবেদনের তারিখের ওপর ভিত্তি করে ইমিগ্রেশন (অভিবাসন) কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় মানে আগে করলে আগে হবে। বিল সি-৬ (Bill C-6) অনুযায়ী কানাডা আসার পর সটিজেনশিপের আবেদন করতে ৫ বছরের মধ্যে অন্তত ৩ বছর বসবাস করতে হবে। এর আগে ৬ বছরের মধ্যে ৪ বছর বসবাস করতে হত। এছাড়া কানাডায় যারা অস্থায়ী মর্যাদায় তথা ওর্য়াক (Work) অথবা স্টাডি (Study) পারমিটে ছিলেন, তারাও তাদের কানাডায় বসবাসের সময়টুকু ৩ বছর মেয়াদের একটি অংশ হিসেবে গণনা করতে সক্ষম হবেন। কানাডায় অভিবাসনের আবেদন করতে লাগে সাধারণত একটি পূর্ণাঙ্গ বায়োডাটা, পরিবারের তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি পাস, আইইএলটিএস, ইসিএ সার্টিফিকেট, কমপক্ষে দুই বছরের চাকুরীর অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, মেডিকেল রিপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি। অনলাইনে আবেদন করা যায়। তবে জব (Job) অফার ছাড়া আবেদন করে লাভ নেই।
আবেদনের জন্য যোগ্য কিনা তা সঠিক ভাবে জানার পরই প্রোফাইল তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে লটারি ড্র-এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে সবকিছুর আগে চাকরির অফারের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ কানাডায় পদার্পণের পরই যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাবেন-এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে। মূলত যেকোনও ডিপ্লোমাধারী অথবা ডিগ্রি পাসধারী দক্ষ ও অভিজ্ঞ পেশাজীবীরা সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। যেসব বাংলাদেশি কানাডায় ইমিগ্রেশন আবেদন করার যোগ্য বলে মনে করেন এবং আবেদন করতে চান, তাদের দেরি না করে দ্রুততা ও দক্ষতার সাথে আবেদন প্রসেস করতে হবে। তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে কানাডার ইমিগ্রেন্ট ভিসা পাওয়া নিশ্চিত আছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ-ভিত্তিক ভ্রমণ প্রকাশক রাফ গাইডস পাঠকদের দ্বারা ভোট হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা সুন্দর নির্বাচিত হয়েছে কানাডা।