কামাল কাদের রব কি সাম্প্রদায়িক শক্তি?
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) উল্টা-পাল্টা কথা বলেন, তার কোনো কথার উত্তর আমি দিতে চাই না।
প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাদের সাহেবের একটা কথায় আমি আঘাত পেয়েছি। তিনি বলেছেন— ঐক্যফ্রন্টে সব সম্প্রদায়িক শক্তি। তাহলে তার কাছে আমার প্রশ্ন, ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতান মুহাম্মদ মনসুর, তারা কি সাম্প্রদায়িক শক্তি? সেটি হলে আওয়ামী লীগই সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে প্রথম সম্পর্ক করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের সামনে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে গণতন্ত্রহীনতা। এটির মতোই আরেকটি বড় সমস্যা বিচারহীনতা। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় আইনের শাসন অবশিষ্ট নেই। সরকার তার ইচ্ছামতো বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নিম্ন আদালতে উপর মহল থেকে যা হুকুম হয়, আইন মন্ত্রণালয় থেকে একজন সরকারের প্রভাবশালী সচিব যা নির্দেশ দেন, বিচারকদের ঠিক তাই করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আজ হাইকোর্টে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে যাওয়া হয়, সেটা বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, সেটা শুনানির দিন দেয়া হয় দুই মাস, তিন মাস পরে। আমরা সবাই ভোগ করছি এটা, সবাই জানেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতা আজ কারাগারে, তারা নির্বাচন করতে পারবেন কি না বুঝতে পারছি না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার মামলা দিনের পর দিন বিলম্বিত করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ বিপদে পড়লে আদালতের দিকে তাকিয়ে থাকে আশ্রয় পাবে বলে। কিন্তু, দুর্ভাগ্য আদালতে আজকে আমরা আশ্রয় পাচ্ছি না। তাই বিচার ব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বলেন, ‘আইনজীবীরা দেশের ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ঠিক তেমনি এই ক্রান্তিকালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে তারা এগিয়ে এসেছেন। আপনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অন্যায়ভাবে মিথ্যা রায় দেয়া হবে, আগে থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। কারণ, সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট ছিল। এজন্য জেলে যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন— আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, ক্ষমতা চাই না। আমি চাই আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আর আওয়ামী লীগের কোনো ফাঁদে আপনারা পা দিবেন না। আমার সৌভাগ্য হয়েছে, জেলে তার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করার। প্রত্যেকবার তিনি আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সর্বশেষ যেদিন দেখা করেছি, সেদিনও তিনি ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাজ করে যেতে বলেছেন। তিনি ড. কামাল হোসেনকে সালাম জানিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন রংপুরের কারাগারে আছেন। আমাদের ভাইস-চেয়ারম্যান আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ রায়কে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দুভার্গ্য আমাদের আইনজীবীরাও সরকারের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।’
নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা ওঠে দাঁড়ান, নিজের মতো নির্বাচন পরিচালনা করুন। সরকার যা বলে, তাই করবেন না। জাতি আপনাদের আজীবন মনে রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, এবার স্থায়ী সেন্টারে ফলাফল নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে সেন্ট্রাল থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এটা কেউ মেনে নেবে না। জনগণ মেনে নেবে না।’
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ বক্তৃতা করেন।