কালো পোশাকে ছিল তুরস্কে হামলাকারী
নিউজবিডিইউএস ডেস্কঃ
তুরস্কে আতাতুর্ক বিমানবন্দরে হামলাকারী ছিল কালো পোশাক পরা। তাকে দেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পল রুস। এলোপাতাড়ি গুলি করার পর সে একটি কাউন্টারের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। তারপর এস্কেলেটর দিয়ে নিচে নেমে যায়। করিডোরের ভিত দিয়ে তাকে বন্দুক হাতে এগিয়ে যেতে দেখা যায়।
কিন্তু তখনই তাকে পিছন থেকে গুলি করে নিরাপত্তা রক্ষীরা। সঙ্গে সঙ্গে সে পড়ে যায় মেঝেতে। তারপর মাত্র ২০ সেকেন্ড। এ সময়ের মধ্যেই সে কোমরে বাঁধা বিস্ফোরক বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। এভাবেই সন্ত্রাসীরা অভিযান চালায় ওই বিমানবন্দরে। এ হামলার পর শোকে ভাসছে তুরস্ক। নৃশংস হামলায় কমপক্ষে ৪২ জনের মৃত্যুতে বুধবার জাতীয় শোক পালন করেছে দেশটি। মঙ্গলবার আতাতুর্ক বিমানবন্দরে তিন সন্ত্রাসী নৃশংস হামলা চালায়। এতে ১৩ বিদেশী সহ নিহত হন ৪২ জন।
এর মধ্যে রয়েছেন তুরস্কের ২৪ জন নাগরিক, ৫ জন সৌদি আরবের নাগরিক, ২ জন ইরাকি। এ ছাড়া একজন করে নিহত হয়েছেন চীন, জর্ডান, তিউনিশিয়া, উজবেকিস্তান, ইরান, ইউক্রেনের নাগরিক। একজন ফিলিস্তিনি নারীও নিহত হয়েছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আহত ২৩৯ জনের মধ্যে ৪১ জনকে রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ অবস্থায় বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত করার মধ্য দিয়ে আজ শুরু আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট উড্ডয়ন শুরু হয়েছে।
এখনও পরিষ্কার নয় যে, কে বা কারা ওই হামলা চালিয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিদেশী গোয়েন্দারা এ জন্য জিহাদি গ্রুপ ইসলামিক স্টেটের দিকেই ইঙ্গিত করছে। তুরস্কের তদন্তকারীরা এখন সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দেখছে। নিচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য। হামলার সময় যেসব যাত্রী তাদের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেরছিলেন তা পরীক্ষা করে তদন্তকারীরা হামলাকারীদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, হামলাকারীরা ছিল বিদেশী নাগরিক।
কিন্তু তাদের এ দাবির পক্ষে নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। ওদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগান বুধবার সারাদেশে শোক ঘোষণা করেন। তিনি এদিন বলেন, এ হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বকে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি টার্নিং পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তিনি আঙ্কারায় ভাষণ দেন। সেখানে এ হামলাকে জঘন্য নৃশংস হামলা আখ্যায়িত করে বলেন, সন্ত্রাসকে পরাজিত করতেই হবে। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা মুসলিম নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার এক নাগরিক ওইদিন দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিমানবন্দরে। তিনি বলেছেন, এক হামলাকারীকে তিনি দেখেছেন। তার বর্ণনামতে, ওই হামলাকারীর পুরো পোশাক ছিল কালো। তার মুখে কোন মুখোশ ছিল না। সে একটি কাউন্টারের আড়ালে নিচু হয়ে ছিল। পল রুস বলেন, এক পর্যায়ে সে বেরিয়ে আসে এবং আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। সে তার জ্যাকেটের ভিতর বন্দুক লুকিয়ে রেখেছিল। তাকে কেউ দেখে ফেললো কিনা বা কেউ তাকে থামানোর চেষ্টা করছে কিনা তা নিয়ে হয়তো সে ছিল উদ্বিগ্ন। এরপর সে এস্কেলেটর দিয়ে নিচে নেমে যায়। আমরা আরও গুলির শব্দ শুনতে পাই। তারপরই বিস্ফোরণ। এরপর সব শেষ।
এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের এই নেটওয়ার্ক ভেঙে না দেয়া পর্যন্ত আমরা শান্ত হবো না। কারণ, তাদের প্রভাব পড়েছে পুরো বিশ্বের সভ্য সমাজের ওপর। শোক প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগানকে ফোন করে শোক প্রকাশ করেন।