কূটনীতিকদের প্রতি ঐক্যফ্রন্টের অনুরোধ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করে আরেকটা ‘ভালো’ নির্বাচন দিতে সরকারকে বুঝাতে কুটনীতিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। রোববার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে নির্বাচনের অনিয়মসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেন নেতারা।
এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ‘অনিয়ম’র ঘটনাগুলোর অডিও ও ভিডিও দেয়া হয়।
এছাড়া বৈঠকে নির্বাচনে ভোটের নানা অনিয়মের একটি ভিডিও পাওয়া পয়েন্টও উপস্থাপন করা হয়। আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্সে রাখার ভিডিও চিত্রও দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যারা এসেছিল তারা বন্ধুরাষ্ট্রের। তারা আমাদের বন্ধু, জনগণের বন্ধু এবং সরকারেরও বন্ধু। আমরা নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরেছি। তারা এ নিয়ে কোনো বিতর্ক করেনি। আমরা যা দেখেছি, তারাও তাই দেখেছে। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং বলেছেন গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাক তারাও সেটা চান। তারাও চান এদেশের মানুষ স্বস্তিতে, শান্তিতে থাক।
তিনি বলেন, তারা বলেছে যে, তোমরা কী চাও? আমরা বলি যে, এই নির্বাচন যেহেতু হয়নি। নির্বাচন নিয়ে আর কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না। যা হবার হয়ে গেছে। এখন আরেকটা ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক। সরকারকে চাপ দিয়ে নয়, যুক্তি দিয়ে বোঝাক তারা।
তিনি বলেন, আমরা কারও বিপক্ষে নই। সরকারকে আমরা বলব যে, আমরা মনে করি, সবার শুভাকাঙ্খি হিসেবে দেশে শান্তিপূর্ণভাবে আরেকটা নির্বাচন হলে তার যা ফলাফল হয় তার ভিত্তিতে একটা গণতান্ত্রিক সরকার হবে। সেই সরকারই মানুষের আকাঙ্খা পূরণ করতে পারে।
বৈঠক থেকে বের হয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি কূটনীতিকদের বুঝাতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তারা ও আমাদের কথা বুঝেছেন এবং আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তাদের কাছে নির্বাচনের কিছু ডকুমেন্ট দিয়েছে যে নির্বাচনের আগের দিন ও পরের দিন কী হয়েছে।
তিনি বলেন, সেই সঙ্গে ডকুমেন্ট অনুসারে আমরা তাদের একটা পেনড্রাইভ দিয়েছি, যাতে তারা দেখতে পারেন নির্বাচনের আগের এবং পরের দিন কী হয়েছিল। কূটনৈতিকরা সবাই ধৈর্য্য সহকারে আমাদের কথা শুনেছেন এবং শোনার পরে তারা আমাদের একটা প্রশ্ন করেছেন এখন কী করবেন নির্বাচন তো হয়ে গিয়েছে।
জাফরুল্লাহ বলেন, আমরা তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছি আমরা পুনরায় একটা ফেয়ার নির্বাচন চাই যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে। তারা এতটুকু বুঝিয়েছে যে নির্বাচনটা ফেয়ার হয়নি।
বৈঠকে কূটনীতিকদের তথ্য প্রমাণাদিসহ কাগজপত্র সরবারহ করা হয়। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাদেশে নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে লিখিত প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান। নির্বাচনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সরকার যে বিএনপির নিজস্ব ওয়েবসাইটসহ দেশের ৫৪টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে তাও জানানো হয়।
ভোটের অনিয়ম যেন প্রকাশ না পায় সে জন্য ভোটের দিন ইন্টারনেটে ফোরজি ও থ্রিজি বন্ধ করে দেয়া হয় বলে লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
এছাড়া নির্বাচনের দিন (৩০ ডিসেম্বর) রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ও খুলনা-১ আসনে ভোট নিয়ে নিউজ করায় গ্রেফতার হওয়া হেদায়েৎ হোসেন মোল্লাসহ সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন। নির্বাচনের পরে ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুসহ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়গুলোও রয়েছে।
গুলশানে হোটেল আমারিতে বিকাল ৪টা থেকে দেড়ঘণ্টা কূটনীতিকদের সঙ্গে এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড আর্ল মিলারসহ যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, সুইডেন, স্পেন, জার্মানি, নরওয়ে, ভারত, পাকিস্তান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ ৩০টি বেশি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ফ্রন্টের নেতারা।
এছাড়া বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আসাদুজ্জামান রিপন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, তাবিথ আউয়াল, গোলাম মওলা রনি, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নির্বাচনের প্রচারে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার শিকার ধানের শীষের প্রার্থী গয়েশ্বর রায়, আফরোজা আব্বাস, রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা, জেবা খানও উপস্থিত ছিলেন।