কেউ মেয়াদ উত্তীর্ণ করে ক্ষমতা ত্যাগ করেনি : প্রধানমন্ত্রী

128

আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেনছেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরে কেউ মেয়াদ উত্তীর্ণ করে ক্ষমতা ত্যাগ করেনি। একমাত্র আমিই নিয়মিতভাবে, সংবিধান অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাই।

pm-01

তিনি বলেন, এই ঘটনার পর থেকে কি অত্যাচর শুরু হয়েছিল। সব থেকে দুঃখজনক যে, আমরা যখন ১৫ জুলাই শপথ অনুষ্ঠানে গেলাম। সাথে সাথে খবর আমরা যখন ক্ষমতা থেকে চলে এলাম। তখন শুনলাম ১৩ জন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে। এমনকি যারা গণভবনে গেছে গণভবন থেকে ফিরে যেতে কোনো ব্যবস্থাও তারা করেনি।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে প্রশাসনের তিন শতাধিক সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সংহতি প্রকাশ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এটা যে শুধু অসামারিক প্রশাসনে হয়েছে তেমন না সামরিক প্রশাসনেও হয়েছে। ওদের (বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার) হিসেব ছিল- আমরা যাদের প্রমোশন দিলাম। প্রমোশন পাওয়াটাই তাদের অপরাধ ছিল। এমন অনেকের ওএসডি দিয়েছিল যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়নি। এমন অনেক আছে যাদের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। এমন একটা প্রতিহিংসা পরায়ন ছিল ওই বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ অনুষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য রয়েছেন ৫৭ জন, সাবেক রাষ্ট্রদূত নয়জন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব রয়েছেন ৭৫ জন।

এছাড়াও স্বাস্থ্য ক্যাডারের ১৪ জন, শিক্ষার ১৪ জন, প্রকৌশলী ২৭ জন, বন ও ডাক বিভাগের ১১ জন, পুলিশ ১০ জন, কর ও তথ্যের ১১ জন, কৃষি ক্যাডারের ৬৭ জন এবং টেলিকম, শুল্ক ও আবগারি, অডিট ও একাউন্টস, রেলওয়ে, খাদ্যের ১১ জনসহ মোট ৩০৭ জন রয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জনতার মঞ্চ কোনো করা হয়েছিল? জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার জন্য। কারণ ১৯৯৬ সালে যে নির্বাচনে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সারাদেশে আর্মি দিয়ে বলতে গেলে একেবারে জনশূন্য অবস্থায় ভোটের বাক্স ভরে দিয়ে একটা ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হলো যে তারা জিতে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা তো জনগণ মেনে নিতে পারে না। একটা দেশের এটা কখনোই হতে পারে না। জনগণ যখন দেখেছে তাদের ভোট দেওয়া অধিকার ছিল না । সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে গেলো যে এই নির্বাচন আমরা মানি না। ফলে খালেদা জিয়াকে দেড় মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে তাদের এই অবস্থা হতো না।

তিনি বলেন, এরপর যখন আবার নির্বাচন হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় এলো তখন তারা আবার ক্যু শুরু করতে থাকে। একটা ক্যু দিয়ে আরেকটা ক্যু সমাধান হয় না বলেই আমরা সেটা চাইনি। আমরা চেয়েছি গণতন্ত্র। গণতন্ত্র ধারা অব্যাহত থাকুক। আবার আমাদের সংগ্রাম করতে হলো। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারলাম। কিন্তু তারা প্রতিশোধটা নিলো সবার উপর। যেমন; আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে একটি ছোট্ট শিশুও বাদ যায়নি। তাদের অত্যাচার থেকে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, কিন্তু ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে অনেক পিছিয়ে নেয়। সেখান থেকে ২০০৮ সালে যখন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসি তখন অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করি। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ার জন্য কাজ করতে থাকি।

এবারও নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার জন্য আমরা পথ তৈরি করছি। অনেক অপমানের পরও আমরা যারা আমাদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছে আমি তাদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন সংলাপ করি। তাদের বক্তব্য শুনি।

বিএনপির চরিত্র কেমন তাতো আমরা দেখেছি। আন্দোলনের নামে কীভাবে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। আর আমরা কীভাবে দেশের জন্য কাজ করেছি। শুধু উন্নয়ন করলেই হয় না। মানুষকে তা মনে করিয়ে দিতে হয়। আপনারা ভোটারদের তা মনে করিয়ে দিতে হয়। তারপরও যদি কেউ ভোট না দেয় নাই। জনগণ যাদের ভোট দিবে তারা ক্ষমতায় আসবে।

এখানে অধিকাংশ সকল আমি চিনি। বিশেষ করে ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন অনেকেই আমার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অবসরে গেলেও অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। খুব ভালো লাগছে অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এ ইশতেহারের দিয়েছিলাম দিন বদলের সনদ। ত্তত্বাধায়ক সরকারের সমালোচনা করার কারণে আমাকে জেলে নেওয়া হয়। সেখানে বসে আমি লিখেছিলাম ক্ষমতায় এলে আমরা কী কী করবো। যদিও জানতাম না আমার কী হবে। আমরা নির্বাচন করতে পারবো কি না। তারপরও ভবিষ্যতের জন্য আমার আমাদের রূপরেখা তৈরি করি। তৈরি করি দিন বদলের সনদ। দিন বদলের সনদের বাস্তবায়নের দিকে আমর এগুচ্ছি। যতটুকু না দারিদ্রের হার একেবারে কমাতে না পারবো ততদিন আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ঠিক সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু সেই পদ্মা সেতুর কাজ আমরা করে যাচ্ছি। আমরা আসলে আমাদের ভাগ্য বদলাতে চাই।

এসময় তিনি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিজ দায়িত্বে নিজেদের এলাকার মানুষকে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও সফলতা তুলে ধরতে বলেন। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চাওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।

তিনি বলেন, যখনেই মনে করবেন চলে আসবেন। নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করবেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। আমরা চাইনা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিম খুনির দল পুনরায় ক্ষমতায় আসুক।

সাবেক মূখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর পরিচালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল প্রমুখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.