কোটিপতি মাদকসম্রাটদের তালিকা পাচ্ছে না দুদক

224

মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিকদের খোঁজে নেমে অনেকটাই হতাশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কারণ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেয়া তালিকায় দেশের অন্যতম মাদকপ্রবণ এলাকা রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের কারও নাম নেই।

এর বাইরে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এক হাজারের বেশি মাদকসম্রাট রয়েছে, নামে-বেনামে যাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে। সরবরাহকৃত তালিকায় তাদের কারও নাম আসেনি। ফলে দুদক এক্ষেত্রে কিছুই করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে দুদক রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুল করিম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা পাওয়া গেছে তাতে কোটিপতি মাদকসম্রাটদের কারোরই নাম আসেনি। আর দুদক নিজেরা কোনো তালিকা করছে না আইনি বাধ্যবাধকতায়। তাই কোটিপতি মাদকসম্রাটদের প্রকৃত তালিকা পেতে দুদক থেকে আবারও সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে।জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩ জুলাই কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা চেয়ে দুদক থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর প্রথম চিঠি পাঠানো হয়। সাড়া না পেয়ে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর দুদক থেকে আরেক দফা চিঠি দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট দফতরে। একই সঙ্গে দুদক থেকে পুলিশের কাছেও কোটিপতি মাদকসম্রাটদের তালিকা চাওয়া হয়। দ্বিতীয় দফা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতর থেকে ৩১ ডিসেম্বর দুদক মহাপরিচালক বরাবর সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা পাঠানো হয়, যাতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মাত্র ২২ জনের নাম রয়েছে।

এদিকে দুদক সচিবালয় থেকে তালিকাটি চলতি বছরের ১৮ ফেব্র“য়ারি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে যায়। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসে পাঠানো হয় ৩ মার্চ। এরপর ৭ মে এই ২২ জনের তালিকা নিয়ে অনুসন্ধানে নামেন দুদক কর্মকর্তারা। কিন্তু মাঠে নেমেই হতাশ হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা সরেজমিন তদন্তে নেমে দেখতে পান, যে ২২ জনের তালিকা মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতর দুদকে পাঠিয়েছে, তাদের অধিকাংশই মাদকসেবী, বহনকারী অথবা ক্ষুদ্র মাদক ব্যবসায়ী, যারা কোনো না কোনো সময় খুব কম পরিমাণ মাদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন। তাছাড়া উল্লেখ করার মতো তাদের তেমন কোনো সম্পদও নেই। ফলে তা দুদকের কাজের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

রাজশাহী অঞ্চলের দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে হেরোইনের একমাত্র আন্তর্জাতিক গেটওয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতেই রয়েছে দেড় শতাধিক কোটিপতি হেরোইন ও ইয়াবা ব্যবসায়ী, যাদের কারও কারও অবৈধ সম্পদের পরিমাণ কোটি টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকা। গোদাগাড়ীর মাদকসম্রাটদের অধিকাংশেরই রাজশাহী মহানগরীতে রয়েছে বহুতল বাড়ি-ফ্ল্যাট, দামি প্লট ও বিভিন্ন নামকরা মার্কেটে বড় বড় দোকান। রয়েছে দামি দামি গাড়িও। স্থানীয়ভাবে রয়েছে মার্কেট ও বড় বড় পাকা বাড়ি, যাদের বৈধ আয়ের দৃশ্যমান কোনো উৎস নেই। এসব মাদকসম্রাটের নামের তালিকা পেতে দুদক একই সময়ে পুলিশেরও দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকেও কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি। দুদক সূত্রে জানা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে দুদকে পাঠানো ২২ জনের তালিকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ জন, রাজশাহীর ৯ জন, দিনাজপুরের ২ জন, বগুড়ার ২ জন, নওগাঁর পত্নীতলার ১ জন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ১ জন, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১ জন, রংপুর মিঠাপুকুরে ১ জন এবং কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর ১ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। মাদকপ্রবণ পঞ্চগড়, নাটোর, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও পাবনা জেলার কারও নাম এ তালিকায় নেই।

প্রকৃত মাদকসম্রাটদের নাম বাদ দিয়ে দুদকে অসম্পূর্ণ তালিকা পাঠানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, দুদক কেন্দ্রীয়ভাবে কোটিপতি মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা চেয়েছিল। সেই তালিকা দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। সেখানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মাদক ব্যবসায়ীদের নাম রয়েছে। তবে দুদক স্থানীয়ভাবে কোনো তালিকা তাদের কাছে চায়নি বলে দাবি করেন তিনি। রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বৃহস্পতিবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, দুদক স্থানীয়ভাবে পুলিশের কাছে মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো তালিকা চায়নি। তবে জেলা পুলিশের এ ধরনের তালিকা থাকার কথা নিশ্চিত করে এসপি আরও বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালিকা চাওয়া হলে পুলিশ তা দুদকের কাছে সরবরাহ করবে।

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.