কোটি টাকা ছড়ানোর পেছনে আটকদের একজন হাওয়া ভবনের: র‍্যাব

130

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ১৪০ কোটি কালো টাকা এসেছে বাংলাদেশে। এই বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের বেশ কয়েকটি আসনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য।

Protom Hundiএই চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে হাওয়া ভবনের সাবেক কর্মচারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন, মতিঝিলের ইউনাইটেড কর্পোরেশনের এমডি আলী হায়দার, হাওয়া ভবনের এক সময়ের কর্মচারী ও গুলশানের আমেনা এন্টারপ্রাইজের জয়নাল ও ইউনাইটেড কর্পোরেশনের অফিস ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন।

মঙ্গলবার দুপুরে মতিঝিলের সিটি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)-এর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

 তিনি বলেন, আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত দুই দিন ধরে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, এমন একটি চক্রকে অনুসরণ করছিলাম। আজ অভিযান চালিয়ে নগদ আট লাখ টাকা এবং ১০ কোটি টাকার চেকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এসব কালো টাকা একটি গোষ্ঠীর পক্ষে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

যেখান থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ইউনাইটেড কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির বয়স মাত্র দুই মাস। আসলে নির্বাচনকে ঘিরে কালো টাকা ছড়ানোর জন্যই মূল এই অফিসটা নেওয়া হয়েছে। দুই মাস আগে একটি বড় রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ের পাশেই এই প্রতিষ্ঠানটির অফিস ছিল। মনে হয় নিরাপত্তাজনিত কারণেই নির্বাচনের আগে অফিসটি পরিবর্তন করে মতিঝিলে আনা হয়।

গত দুই মাসে এই অফিস থেকে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানে আমরা দেখেছি, ইউনাইটেড কর্পোরেশনের সো-কলড মালিক মাহমুদ, তার একটি অ্যাকাউন্টে গত মাসে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা ট্রানজেকশন হয়েছে। আর গত দুই মাসে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কালো টাকা ছড়িয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো।

সর্বশেষ শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী তারেক রহমানের সাবেক এপিএস মিয়া নুরুউদ্দিন অপুকে সাড়ে তিন কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। তাকে টাকা পাঠানোর তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব এবং ওই আসনে টাকা পাঠানোর পর গত রাত থেকেই ওই নির্বাচনী এলাকায় সহিংসতামূলক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামসহ আরও কয়েকটি জেলায় এই টাকা পাঠানো হয়েছে, সেসব আসনেও সহিংসতামূলক পরিস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

মোট টাকার বেশির ভাগ অংশই দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায় থেকেও কিছু অ্যামাউন্ট এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নথিপত্র পর্যালোচনার পর তাদের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।

অনেক বড় ষড়যন্ত্র চলছিল, যা এই অভিযানের মধ্য দিয়ে বানচাল করা গেছে বলে আশা করছি। এই টাকাগুলো আগামী চার দিন পরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহৃত হবে। তাই সব সচেতন নাগরিক ও ভোটারদের অনুরোধ করব, আপনারা সচেতন থাকবেন, কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হলে আমাদের জানাবেন। যাতে করে অন্যায়ভাবে এই কালো টাকা দিয়ে যাতে তারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.