কোর্টে অবৈধ প্রার্থীদের আসনে পুনঃতফসিল চায় বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৈধ ঘোষণা করলেও হাইকোর্ট যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থীকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন, সেসব আসনে বিকল্প প্রার্থী দেয়ার অথবা পুনঃতফসিল ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে দলটি।
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা একটা বিশেষ অনুরোধ নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের বেশকিছু প্রার্থী আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের আটজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেসব প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধতা ঘোষণা করেছেন। তাদের মধ্য থেকে একজন করে আমরা প্রত্যেক আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছি। এখন এই প্রার্থী যদি অবৈধ ঘোষিত হয়। তাহলে এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?’
নজরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে বৈধ। আদালত বললেন অবৈধ। তাহলে ভুল করলে নির্বাচন কমিশন করেছে। কিন্তু, শাস্তিটা আমাদের পেতে হবে কেন? আমরা সে কথাই নির্বাচন কমিশনকে বলেছি, আপনারা এখন দুটি কাজ করতে পারেন। একটি হলো, ওই নির্বাচনী এলাকায় আমাদের আরও যারা প্রার্থী বৈধ হয়েছেন আপনাদের বিবেচনায়। তাদের মধ্য থেকে যেকোনো একজনকে নির্বাচন করার সুযোগ দিন। কিংবা কেউ মরে গেলে যেমন ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে পুনঃতফসিল (রিসিডিউল) হয়, এটাও এক ধরনের মৃত্যুই বলা হয়। কারণ, তাদের প্রার্থিতা বাতিল করে এক ধরনের প্রার্থী হিসেবে তাদেরকে হত্যাই করা হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তারা আর জীবিত নাই। সেই কারণেও সেখানকার নির্বাচন স্থগিত করে রিসিডিউল করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘এ দুটি বিষয় নিয়ে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের সঙ্গে আজ কথা বলেছি।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা আমাদের যুক্তিকে অগ্রাহ্য করেননি। তারা বলেছেন, একসঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা তাদের অনুরোধ জানিয়েছি, খুব দ্রুত যেন তারা এ সিদ্ধান্ত নেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন মানেই হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সমানে সমানে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে বিএনপি, ধানের শীষ। সেই প্রার্থীদের এভাবে অবৈধ ঘোষণা করে সরকারি দল বা সরকারি দলের যে প্রতীক, সেটাকে ওয়াকওভার দেয়ার ব্যবস্থা চলছে। আমরা মনে করি, এটা গ্রহণযোগ্য না। এর একটা প্রতিকার থাকা উচিত এবং প্রতিকার যা হতে পারে, অলরেডি সে প্রস্তাব আমরা করেছি। আমরা আশা করছি, প্রতিকার পাব।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বিএনপির যেসব প্রার্থী বৈধ হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮টি আসনের ৮ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আদালত।
বিএনপি প্রার্থী শূন্য আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে, জামালপুর-৪, বগুড়া-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, রংপুর-১, ময়মনসিংহ-৮, ঝিনাইদহ-২, জয়পুরহাট-১ ও রাজশাহী-৬।
এ সময় ব্যালট পেপার প্রস্তুত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী, গুজব ছড়ালে শাস্তি হয়। এখন প্রধানমন্ত্রী গুজব ছড়ালে শাস্তি হয় কি না জানি না। কেন না, ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো যে ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কাজেই বিএনপির ব্যালট পেপার ছাপানোর বিষয়টি গুজব।’
বিএনপি জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নিন, নৌকায় ভোট দিন— প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে টাকা নেয়ার কথা বলেন, এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন।’
সর্বকালের সেরা নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আইজিপির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নজরুল বলেন, ‘এখনো নির্বাচন শেষ হয়নি। কাজেই ভবিষ্যতে যেটা হবে, তা নিয়ে তো এখনই বলা যায় না। মাহবুব উদ্দিন খোকনকে পুলিশ নিজেই গুলি করেছে, কাজেই সেরা পরিবেশ কিভাবে বলা যায়?’
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে প্রতিনিধি দলে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার উপস্থিত ছিলেন।