খেলার রাজনীতিতেও ধরাশায়ী সৌদি
ফুটবল মানেই আলাদা আগ্রহ, টান টান উত্তেজনা। সেটি যদি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা কিংবা ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ হয়, তাহলে তো কথায় নেই। এসব ম্যাচে যতটা না স্পোর্টস মেজাজ, তার চেয়েও বেশি কাজ করে দুই রাষ্ট্রের দীর্ঘ বৈরিতা।
ঠিক এমনি একটি ম্যাচ হয়ে গেল বৃহস্পতিবার রাতে। মধ্যপ্রাচ্যের দুই বৈরি রাষ্ট্র সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে। অবশ্য আগে থেকেই এই ম্যাচে আরববাসী পাখির চোখ করেছিল।
যে সৌদি আরব এবং তার মিত্রদের কাছে প্রায় দেড় বছর কোণঠাসা কাতার। তারাই মাঠে সৌদি আরবকে উড়িয়ে দিল। এক কথায় পাত্তাই পেল না সৌদির ফুটবলাররা।
একচেটিয়া খেলে কাতার ম্যাচটি ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে। একইসঙ্গে তারা এএফসি এশিয়ান কাপের ‘ই’ গ্রুপ সেরা হয়ে শেষ ষোলতে জায়গা করে নিয়েছে।
২০১৭ সালের জুন থেকে সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলে আসছে। এমন উত্তেজনার মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজধানী আবুধাবিতে গতরাতে আসরে প্রথম মুখোমুখি হয় সৌদি আরব ও কাতার।
কাতারের ফরোয়ার্ড আলময়েজ আলী প্রথমে গোলের খাতা খোলেন। ডানপ্রান্ত থেকে সতীর্থের থ্রো ধরে ডি-বক্সের সামনে থেকে তিনি ডান পায়ের টোকায় বল জালে জড়ান। এরপর আবদেলাজিজ হাতিমের অসাধারণ ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ব্যবধান বাড়ান আলময়েজ আলী। শেষ পর্যন্ত ওই ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠে ছাড়ে কাতার।
এই জয়ে কূটনীতির মতো খেলার রাজনীতিতেও তিনবারের এশিয়া কাপ বিজয়ী সৌদি আরবকে ধরাশায়ী করল কাতার।
এই ম্যাচের আগে ২২ বছর বয়সী আলময়েজ আলী আসরে ৫টি গোল করেছেন। জোড়া গোলের মাধ্যমে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ২০০০ সালের পর গ্রুপপর্বে প্রথম ৭ গোল করলেন।
আলময়েজে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন ফুটবলের স্পেশাল ওয়ানখ্যাত কোচ হোসে মরিনহো। সদ্য চেলসি থেকে বরখাস্ত এই কোচ টুইট করেছেন, ‘প্রথম গোলের চেয়ে দ্বিতীয়টি অসাধারণ ফিনিশিং।’
পরে মরিনহো বিইন স্পোর্টসকে বলেন, ‘আর্জেন্টিনা উরুগুয়ের বিপক্ষে, পর্তুগাল স্পেনের কিংবা ইংল্যান্ড স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলছে, ম্যাচটি প্রীতি না প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির, সেটি কোনো বিষয় না; ফলাফলই বলে দেবে ম্যাচটি আপনি কতটা নিজের করে নিয়েছেন।’
কোচ ফ্লেক্স সানচেজের অধীনে কাতার এই আসরে দারুণ করছে। এর আগে তারা উত্তর কোরিয়া ও লেবাননের বিপক্ষে দারুণ খেলে জয় তুলে নিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননকে প্রথম ম্যাচে কাতার ২-০ ব্যবধানে হারায়। পরের ম্যাচে উত্তর কোরিয়াকে ৬-০ গোলে স্রেফ উড়িয়ে দেয়।
২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ কাতার আগামী ২২ জানুয়ারি শেষ ষোলোর খেলায় ইরাকের মুখোমুখি হবে। তার আগের দিন সোমবার ‘ই’ গ্রুপের রানার্সআপ সৌদি আরব খেলবে জাপানের বিপক্ষে।
দীর্ঘ দেড় বছর ধরে চলা গালফ সঙ্কটও এই ম্যাচে ঢেকে দেন দর্শকরা। ভূমি, সাগর ও আকাশ পথের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিপুলসংখ্যক কাতারের দর্শক মাঠে উপস্থিত হন। তারা নিজ দেশের পতাকা উড়িয়ে, গলা ফাটিয়ে খেলোয়াড়দের সমর্থন জুগিয়েছেন।
তবে কাতারের জনগণ এই ম্যাচ তাদের টিভি চ্যানেলে দেখার সুযোগ পাননি। কারণ, আমিরাত কর্তৃপক্ষ কাতারের কোনো মিডিয়াকে এই আসর কাভারের সুযোগ দেয়নি।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব, তাদের মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর ২০১৭ সালের জুনে ইরানকে সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ‘সন্ত্রাসবাদে’ উস্কানির অভিযোগ এনে কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
তবে কাতার তাদের এই অভিযোগ বরাবর নাকচ করে দিয়ে আসছে। দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেছেন, যেকোনো সময় তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। তবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে তিনি কোনো সমঝোতা করতে রাজি নন।