গণতান্ত্রিক অধিকার হুমকির মুখে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে ও ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী মত প্রকাশের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় সহিংসতা রোধে এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও অন্যান্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করা হয় ঐ বিবৃতিতে।
‘প্রধান বিরোধী দলের সমর্থক ও সদস্যরা গ্রেপ্তার, হত্যা, এমনকি গুমের শিকার হচ্ছেন, যার ফলে এক ধরণের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে যা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পথে অন্তরায়।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই বিবৃতির বিষয়ে সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে জানা্ যায়নি।
‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ধরপাকড়’
অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রেপ্তার, সরকার বিদ্রোহ এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের শাস্তি দেয়া এবং ক্ষমতাসীন দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের দ্বারা সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযান এবং কার্যক্রমকে আইনি বৈধতা দেয়া অস্পষ্টভাবে বর্ণিত নীতিমালার কারণেও নির্বাচনের আগে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
এরকম অবস্থায় নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
বিরোধী দল বিএনপি’র বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং মামলার অধীনে কয়েক হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উঠে আসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে।
এসব মামলার অধিকাংশই বিধিবহির্ভূতভাবে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা যদিও ‘সবাই যেন নির্বাচনী আচরণবিধি’ মেনে চলে সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন, বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ কমিশন ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন দিচ্ছে।
এর উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা হয়, মনোনয়নপত্র বাতিলের দৌড়ে ১৪১ জন বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের সাথে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিলের বিষয়টি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর আগে ক্ষমতায় আসে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই। তার পর থেকেই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়টিকে পরিহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে তারা।’
মি. অ্যাডামস মন্তব্য করেন, সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মানবাধিকার খর্ব হওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর উচিত অতিসত্ত্বর মানবাধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া।
এছাড়া নির্বাচনের প্রচারণার শুরুতেই রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীন সংঘর্ষে বহু মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে বলেও বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।