‘গেল বছর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭৭৯৬ জন’

129

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নেয়া ২০১৮ সালে সারাদেশের সড়কগুলোতে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন। আর সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশপথ মিলে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭ হাজার ৭৯৬ জন।

accident-home

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮’শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

অনুষ্ঠানে সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে সারাদেশে মোট ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।

আর গেল বছরটিতে সড়ক, রেল, নৌ এবং আকাশপথ মিলে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭৯৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর রেল পথে দুর্ঘটনা ঘটে ৩৭০টি। এতে মারা যান ৩৯৪ জন, আহত হন ২৪৮ জন।

নৌ-পথে ১৫৯টি দুর্ঘটনায় মারা যান ১২৬ জন, আহত হন ২৩৪ জন। এসব দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ৩৮৭ জন।

আর ২০১৮ সালে আকাশ পথে ৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ৫৫ জন, আহত হন ৩২ জন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২৫২ জন চালক ও শ্রমিক, ৮৮০ শিক্ষার্থী, ২৩১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৭৮৭ নারী, ৪৮৭ শিশু, ১০৬ শিক্ষক, ৩৪ সাংবাদিক, ৩৩ চিকিৎসক, ৯ প্রকৌশলী, ২ আইনজীবী ও ১৯২ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে, মোটরসাইকেল ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, বাস ১৮ দশমিক ৯২, অটোরিকশা ৯ দশমিক ৬১, কার জিপ মাইক্রো ৭ দশমিক ৯৩, নছিমন-করিমন ৫ দশমিক ৮০ এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনায় গাড়িচাপার ঘটনা ঘটেছে, ২৯ দশমিক ৭২ মুখোমুখি সংঘর্ষ আর ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ খাদে পড়ে ঘটেছে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।

সুপারিশ গুলো হলো:
১। ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য, মসজিদ, মন্দির, গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।

২। টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্রসমূহে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা।

৩। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ করা, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করা।

৪। রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রাক্রসিং অংকন করা।

৫। গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

৬। যাত্রী ও পথচারী-বান্ধব সড়ক পরিবহন বিধি প্রণয়ন।

৭। গাড়ির ফিটনেস ও চালদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।

৮। জাতীয় মহাসড়কে স্বল্পগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।

৯। অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করা।

১০। সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠনপূর্বক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

১১। লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নকালে চালকের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা।

১২। পর্যাপ্ত মানসম্মত গণপরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেয়া।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.