গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি”র দুর্গোৎসব উদযাপন
এ্যন্থনী পিউস গমেজ,উডব্রীজ,ভার্জিনিয়াঃ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য এবং আনন্দ আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেট্রো ওয়াশিংটন এলাকার অন্যতম সংগঠন “গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি”র (GWHS) আয়োজনে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার হিন্দু ধর্মালম্বীদের সব চেয়ে প্রধান ধর্মীয় উৎসব- দুর্গা পূজা বা দুর্গোৎসব।
গত শনিবার, ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভার্জিনিয়ার আলেক জান্দ্রিয়ায় অবস্থিত মার্কটোয়েন মিডল স্কুল মিলনায়তনে এই দুর্গোৎসব উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছিল। পূজায় পৌরহিত্য করেন মহাদেব ঘটক। পূজা অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলী, আরতি দান, ধুপ-ধোয়া, প্রসাদ বিতরণ, শঙ্খ ও ঢাকের আওয়াজ, উলুধ্বনিসহ মাঙ্গলিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চমৎকার আয়োজনে এই দুর্গোৎসব পালন করা হয়। মানুষের মিলন, সহভাগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মালা দিয়ে সাজানো হয়েছিল সারাদিন ব্যপি এই পূজা অনুষ্ঠান টিকে।ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এই সর্বজনীন পূজা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। অত্যন্ত সফল আয়োজনের মধ্য দিয়ে “গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি”র এই পূজা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। বিপুল সংখ্যক লোক সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছিল মিলনায়তন।
দুর্গা পূজা হলো দুর্গতিনাশিনি মা দুর্গার চরণে ভক্তি নিবেদন এবং তাঁর আরাধনা করা। পূজার দিন সকাল থেকেই মন্দির প্রাঙ্গনে পূজা মন্ডপে ঢোল, কাশি আর শঙ্খের নিনাদে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো দেবীর মন্ডপ। পূজা মন্ডপে মা দেবীর চরণে যখন প্রার্থনা উৎসর্গ করা হয়, মনটা তখন ভক্তির সে আপ্লুত হয়ে যায় সবার।ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার মিলনে, দেবী মার আরাধনায়, সবার সাথে সহ ভাগিতায় পুরো অনুষ্ঠানটিতে ফুটে উঠে সর্বজনীন উৎসবময়তা। এখানেই সকল ধর্মের মূল সুর- ভালবাসা, শান্তি, আনন্দ। পূজা অর্চনা শেষে সবার সাথে মধ্যাহ্ন ভোজনে সহভাগিতা করেন উপস্থিত সবাই।এরপর দুপুর সাড়ে তিনটায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটিকে সাজানো হয়েছিলো কয়েকটি পর্বে। শামীম চৌধুরী এবং কৃষ্ণা দত্তের বলিষ্ঠ ও সাবলীল সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠানটি সুন্দর ভাবে পরিচালিত হয়।
প্রথম পর্বে ছিল ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের দলীয় সূচনা সঙ্গীত, আবৃতি, গীতিনাট্য, এককনৃত্য, দলীয়নৃত্য, তবলা বাদন ইত্যাদি।এরপর পরিবেশিত হয় তরুন-তরুনীদের এবং বড়দের একক ও দলীয় সঙ্গীত, একক ও দলীয়নৃত্য, আবৃত্তি।এপর্বে ভক্তিগীতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, লালন গীতি, দেশের গান,আধুনিক গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।সঙ্গীতের সুর লহরীতে এবং নৃত্যের ঝংকারে মেতে উঠে মঞ্চের আঙ্গিনা।
যারা এই সারা দিন ব্যাপি আয়োজনের সাংস্কৃতিক পর্বগুলোতে অংশগ্রহন করেন, তারা হলেনঃ শ্যামা, হৃদিতা, শারবনী, অবন্তিকা, রুদ্র, ধ্রুব, অপরাজিতা, অর্ক, সঞ্জু, শৈলী, স্বস্তিক, মিথিল, সোমিয়া, সানি, শির্শ, স্বগতা দত্ত, প্রিয়াংকা সরকার, অনুষা দাসগুপ্ত, পুলস্থা সরকার, অঙ্কিতা দাস, সোহিনি, দীপ, বিউ, ঐশী, সীমা দাস, তপতি দাসগুপ্ত, কৃষ্ণা দত্ত, শুভ্র দাসগুপ্ত, মৌসুমী মিত্র, মৌমিতা দেব, শর্মিলা বণিক, বাবুল ঘোষ, রাজদীপ ভাদুরী, শ্যামা বিশ্বাস, প্রিয়াংকা বোস, বিপ্লব দত্ত, স্তুতি ব্যানার্জি, অনন্যা বিশ্বাস, সৌমিক, জয়, সামু, নীলয়, প্রান্ত, নীলাঞ্জনা ঘোষ দস্তিদার, রাজদীপ চ্যাটার্জি, শাশ্ব্ত, রাহুল, শম্পা, টনি, প্রেমা এবং সেতু।
বাদ্যযন্ত্রে ছিলেনঃ তবলায়- পুলস্থা, আশীষ বড়ুয়া, রামকৃষ্ণ দাস, হারমোনিয়ামে- সীমা দাস, অনুসা, অংকিতা, মৃদঙ্গ- জয় বড়ুয়া, , কিবোর্ড- প্রসেনজি ঘোষ দস্তিদার।
অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষন ছিল কোলকাতার দুই তারকা- “ইন্ডিনিয়ান আইডল” ফাইনালিস্ট রাজদীপ চ্যাটার্জি এবং “সা-রে-গা-মা-পা”-র বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষনকারী প্রতিভাময়ী গায়িকা নীলাঞ্জনা ঘোষ দস্তিদার। দু’জনেই তাদের গানের ঝংকারে মাতিয়ে তুলেন শ্রোতা-দর্শকদের। দীর্ঘ সময় ধরে তারা বিভিন্ন ধরনের গান পরিবেশন করে সবাইকে বিমোহিত করেন। সবাই তাদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হয়ে করতালিতে তাদের বার বার অভিনন্দিত করেন।
“গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি”র বর্তমান সভাপতি মিঃ তপন দত্তের সাথে কথা হলে তিনি জানান, পূজোর পুরো অনুষ্ঠানটি সবার অংশগ্রহন ও সহভাগিতায় সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি অতিশয় আনন্দিত এবং সবার কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই ধরনের সর্বজনীন উৎসবের মধ্য দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের মাঝে একতা ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হয় এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের এই পথ অনুসরন করবে বলে তিনি আশাবাদী এবং বিশ্বাসী। এছাড়া ওয়াশিংটনের হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য “গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি” ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলস ভাবে তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। “গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি”র সারা দিন ব্যপী আয়োজিত দূর্গা পূজার অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সফল ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় এবং সবাই সুন্দর একটি দিনের মাঙ্গলিক অনুভূতি ও আনন্দঘন অভিজ্ঞতা নিয়ে বিদায় গ্রহন করে, সার্থক হয়ে উঠে “গ্রেটার ওয়াশিংটন হিন্দু সোসাইটি”র দুর্গোৎসবের আয়োজন।