চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনের দরবার হলে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
নিয়ম অনুসারে প্রথমে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী এবং পরে গোপনীয়তার শপথ পাঠ করেন।
এই শপথের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন। এর মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার এবং ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিল আওয়ামী লীগ।
বেলা সাড়ে ৩টায় শপথের আনুষ্ঠানিকা শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি আসার পর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
শুরুতে তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানাসহ আগত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা সাইদুল কবির।
এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, তার শহীদ পরিবারের সদস্য, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের।
এরপরই সংবিধানের আলোকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেন শেখ হাসিনা। পরে পর্যায়ক্রমে পূর্ণ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন।
শেখ হাসিনা শপথ নেয়ার পর ছোট বোন শেখ রেহানা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং পরস্পরের আলিঙ্গনে আবদ্ধ হন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুকে জড়িয়ে নেন, গালে চুমু খান। পরে হাত নেড়ে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ রেহানা ছাড়াও তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সস্ত্রীক এসেছিলেন নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সিইসি কেএম নূরুল হুদা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা নতুন সরকারের এই অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বেলা সোয়া ৩টার দিকে বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি তাকে স্বাগত জানান। শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে চা চক্রে যোগ দেন সবাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন।
নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়ায় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত পুরনো সরকারের দায়িত্ব শেষ হলো।
শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরের ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছরের মাথায় সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের সময়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হন।
তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯০ সালে, বিএনপির সঙ্গে মিলে একনায়ক এরশাদ সরকারের পতন ঘটায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে গিয়ে আবার বিরোধী দল হয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করলে তৃতীয়বারের মতো বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা।
ওই সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আরও অনেক রাজনীতিবিদের মতো শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হয়। দুই বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
এরপর বিএনপি এবং বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলই অংশ নেয়। ভোটের ফলাফলে ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পায় ২৮৮ আসন।
গত ৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথের পর আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে টানা তৃতীয় মেয়াদে তাকে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়। সোমবার শপথগ্রহণের মাধ্যমে তিনি রেকর্ড চারবার প্রধানমন্ত্রী হলেন।