চলচ্চিত্রের এক অনন্য অধ্যায় সুচিত্রা সেন

1,240

suchitra-3senবিনোদন ডেস্কঃ

 

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। কিন্তু রেখে গেছেন চলচ্চিত্রের এক অনন্য অধ্যায়। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। কিন্তু প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। তবে পরের বছরেই মুক্তি পায় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। আর এই ছবির মাধ্যমেই ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে শুরু হয় উত্তম-সুচিত্রা জুটির পথচলা।

প্রকৃত নাম রমা দাশগুপ্ত। জন্ম ১৯৩১ সালে বাংলাদেশের পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে করুনাময় দাশগুপ্ত আর ইন্দিরা দাশগুপ্তের ঘরে। পাঁচ সন্তানের মধ্যে রমা ছিলেন তৃতীয়। তার শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে পাবনার আলো-বাতাসেই। পড়াশোনা করেছেন পাবনার মহাখালী পাঠশালা ও পাবনা গার্লস স্কুলে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় আরও অনেক হিন্দু পরিবারের মতো রমার পরিবারও পাড়ি জমায় কলকাতায়। একই বছরে কলকাতায় থিতু হওয়া ঢাকার আরেক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় রমার। নামের শেষে স্বামীর উপাধি যোগ করে তিনি হয়ে যান রমা সেন। দিবানাথের মামা বিমল রায় ছিলেন তখনকার খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা। ভাগ্নেবধূ রমাকে তিনিই নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রের পর্দায়। শ্বশুরের আগ্রহ আর স্বামীর উৎসাহে রূপালী জগতে নাম লেখানো রমা হয়ে যান সুচিত্রা সেন। এরপর ২৫ বছর যুক্ত ছিলেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সঙ্গে।

 

 

২৫ বছর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর রহস্যজনকভাবে প্রায় ৩৫ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ১৯৭৮ থেকে ২০১৪ সাল প্রায় তিনটি যুগ ঠিক কোন অভিমানে তিনি অন্তরালে জীবনযাপন করেছেন এই কাহিনী আজও  রহস্য সৃষ্টি করে আছে সুচিত্রা ভক্তদের মধ্যে। অন্তরাল ভেঙে প্রথমে তিনি বাইরে আসেন মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর।মাঝরাত পর্যন্ত বসেছিলেন তার মরদেহের পাশে।সুচিত্রা শেষ জনসমক্ষে আসেন ১৯৮৯ সালে তার গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর। ২০০৫ সালে সুচিত্রাকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হলেও ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে বাড়ির বাইরে দিল্লি যেতেও রাজি হননি তিনি।

 

১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সুচিত্রা সেন। প্রথম অভিনীত ছবিটি পরে আর মুক্তি পায়নি।১৯৫৫ সালে বিমল রায়ের পরিচালনায় হিন্দি ‘দেবদাস’ ছবিতে দীলিপ কুমারের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পান সুচিত্রা। ‘পার্বতী’ চরিত্রে তার অভিনয়ে বিমোহিত হয় দর্শক। এ ছবি তাকে এনে দেয় জাতীয় পুরস্কার। এরপর একে একে অভিনয় করেন শাপমোচন,সাগরিকা,পথে হলো দেরি,দীপ জ্বেলে যাই,সবার উপরে,সাত পাকে বাঁধা,দত্তা,গৃহদাহ,রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্তর মতো দর্শকপ্রিয় সব ছবিতে। ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে এসে ‘আঁধি’ ছবিতে রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান সুচিত্রা। ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছিল বিহারের রাজনীতিক তারকেশ্বরী সিনহার জীবনী অবলম্বনে। কিন্তু সুচিত্রা সেন পর্দায় হাজির হয়েছিলেন ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ‘স্টাইল’ নিয়ে।চলচ্চিত্রটির কয়েকটি দৃশ্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে মুক্তি দেওয়ার ২০ সপ্তাহ পরে ‘নিষিদ্ধ’ হয় আঁধি।‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৬৩ সালে ‘মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভালে’ সেরা অভিনেত্রীর সম্মান পান সুচিত্রা। ভারতীয় কোনো অভিনেত্রীর জন্য সেটিই ছিল বড়মাপের প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তিনি ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কার পান ১৯৭২ সালে; ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ পুরস্কার বঙ্গবিভূষণ অর্জন করেন। দুই যুগের অভিনয় জীবনে বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে ৬০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা। সবশেষ ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা।

 

এরপর ৩৫ বছর অন্তরালে থাকার পর ২০১৪ সালে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.