চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩:এগিয়ে বুলবুল,আশাবাদী ওদুদ,লড়াইয়ের বাইরে হারুন
অনলাইন ডেস্কঃভোটের বাকি ১দিন। নির্বচনী প্রচারণা শেষ এখন ভোটের দিনের অপেক্ষায় সারাদেশ। অপেক্ষায় রয়েছেন মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের ভোটররাও। সুষ্ঠ ভোট প্রদাণের মাধ্যমে পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করবেন তারা।
জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে মূলত জামায়াত, বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ – এই তিন দলেরই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
জামায়াত অধ্যুষিত এ এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের লড়াই বহু পুরোনো। বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলেও এ আসনে কখনোই তাদের জোটগত নির্বাচন হয়নি।
এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবার নির্বাচনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুল। আপেল মার্কা নিয়ে লড়ছেন তিনি। বুলবুল বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমীর। তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে অবস্থিত নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ছিলেন।
অন্যদিকে গত নির্বাচনে বিনা ভোটে এমপি হওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস এবং এলাকায় বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বও দেন তিনি। এমনকি এবার নির্বাচনী প্রচারণায় জামায়াত- বিএনপিকে বধাগ্রস্ত করায় ও সহিংসতায় তার জনপ্রিয়তা তলানিতে।
এদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অন্যতম দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সাংসদ হারুনুর রশীদ বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার মানুষের দাবি, নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত আলাদা আলাদা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা জামায়াত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর দল মত নির্বিশেষে সবাই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় চায়।
জামায়াত : আশির দশকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক উত্থান ঘটে। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনের মধ্যে দুটি আসন দখলে নেয় জামায়াত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির লতিফুর রহমান। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সদর আসনে আবার নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা লতিফুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে রয়েছে জামায়াতের একটি বিশাল ভোট ব্যাংক।
তাই এবার জামায়াতে ইসলামী চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে আপেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন নুরুল ইসলাম বুলবুল। সদর উপজেলা এবং পৌরসভা নিয়ে এ আসন গঠিত, তার উভয়টিরই বর্তমান জনপ্রতিনিধি জামায়াতের। জামায়াত নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, উপজেলা এবং পৌরসভার ন্যায় সংসদ নির্বাচনেও জনগণ জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর উপরেই আস্থা রাখবেন।
দৃশ্যমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকলেও জামায়াত তাদের এই ‘দুর্গে’ গোপনে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। প্রার্থী চূড়ান্তের পর থেকেই সংগঠনের নেতাকর্মীরা তৎপরতা চালিয়ে গেছে। তবে নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় বেশ সতর্কতার সাথে প্রচারণা করেছে তারা।
জামায়াতের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে সুস্পষ্ট কোন্দল থাকলেও জামায়াত এ সমস্যা থেকে একেবারেই মুক্ত। সাধারণ মানুষের কাছে তাই বুলবুলের জনপ্রিয়তাও অনেক বেশী। বিভিন্ন সময় নির্বাচনী প্রচারণায় হামলায় শিকার হলেও বিমূখ হয়নি সাধারণ মানুষ।
আওয়ামী লীগ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনে দীর্ঘ ৩৫ বছর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভালো অবস্থান করতে পারেনি। উপরন্তু ব্যাপক গ্রুপিংয়ের কারণে তারা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এখন জেলা সদরে ক্ষমতাসীন দলটি দুটি ধারায় বিভক্ত।
দলীয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদের হাত ধরে বিতর্কিত অনেক ব্যক্তি আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন। তাঁরা সংসদ সদস্যের ছত্রচ্ছায়ায় সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করছেন বলে অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীদের। এ নিয়ে দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব।
তাদের এই বিভক্তি জনগণের অসন্তোষ অনেক আগে থেকেই। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ নেতার বিভিন্ন অনৈতিক কর্যক্রমে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। এবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিভিন্ন সহিংসতা কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় ক্ষিপ্ত তারা।
বিএনপি : প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই ধারার কর্মকাণ্ড থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। প্রয়াত সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন ও সুলতানুল ইসলাম মনি ধারায় বিভক্ত জেলা বিএনপি নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে হারুনুর রশীদ ও তাঁর স্ত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিএনপির মূলস্রোত হারুন-পাপিয়ামুখী হলে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে সুলতানুল ইসলাম মনি ধারা। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন জামায়াতের সংসদ সদস্য লতিফুর রহমানকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন হারুনুর রশীদ। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির দলীয় ভঙন হারিয়েছে সেই জনপ্রিয়তা।
তাদের দ্বিমুখী আচরণে সাধারন মানুষ আজ বিএনপি বিমুখ। তারা বলছেন, দলীয় দ্বিধা দন্দ নয় বরং আমরা দল মত নির্বিশেষে এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় চাই।