চীনের মন্দাভাব কেন সবার জন্যই উদ্বেগজনক

206

চীনের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে যাওয়াটা কোনও বিশেষ খবর নয়। বেইজিং গত কয়েক কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে তারা উন্নয়নের গুণগত মানের ওপর জোর দিবে, পরিমাণের ওপর নয়।

Chinas slow growth should worry us all

কিন্তু তারপরও আমাদের চিন্তার কারণ আছে।

চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমা মানে বাকি দুনিয়ারও প্রবৃদ্ধির হার কমা।

দেশটি বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। চাকরি, রপ্তানি, পণ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো আমাদের জিনিস কেনার জন্য চীনের ওপর নির্ভর করে।

চীনের অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাওয়া মানে হচ্ছে, চীনের ঋণের পাহাড় নিয়ে হিমশিম খাবে দেশটি। এমনকি অর্থনীতি সামাল দিতে কম্যুনিস্ট পার্টি ক্ষমতা সন্দেহাতীত হলেও সংশয় থাকছেই।

এক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে চীনের কর্তৃপক্ষ যে তথ্য দেয় সেটি থেকে অনেক কিছু বাদ দিয়ে গ্রহণ করতে হবে। দেশটির প্রবৃদ্ধির হার বেইজিং যা বলে তার চেয়ে অনেক কম।

একটা ভালো পদ্ধতি হচ্ছে, অর্থনীতির আসল অবস্থা বুঝতে হলে সরকার যা বলছে তার চেয়ে ১০০ বেসিস পয়েন্ট (১ শতাংশ) বাদ দিয়ে গণনা করতে হবে।

এই হিসাবে, বর্তমানে পাওয়া তথ্য থেকে মনে হচ্ছে চীনের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার ৫.৬ শতাংশ।

ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, অপরিশোধিত তেল, লোহা ও তামা কিনে নেয়ায় গত এক দশকে চীন এশিয়ার বেশিরভাগ দেশেরই ব্যবসার বৃহত্তম অংশীদারে পরিণত হয়েছে।

অতএব, মন্থর গতির কারণে চীন যদি এই অঞ্চল থেকে আগের মতো জিনিস না কেনে, এসব জায়গার অর্থনীতিও ধীর গতির হয়ে যাবে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলছে, এবছর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রবৃদ্ধির হার আগের বছরের ৬.৩ শতাংশ থেকে নেমে ৬ শতাংশে এসে দাঁড়াবে।

যারা আরও হতাশাবাদী তারা মনে করেন এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিও চীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থ সংকটের পর এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধেও কারও লাভ হচ্ছে না। চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমার জন্য এটি যদি দায়ী নাও হয়, তবু এটি চীনের মনোবলকে এটি প্রভাবিত করতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এশিয়ার যেসব দেশের অর্থনীতি চীনের কাছে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি তারা এই মন্দাভাবে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ও ভিয়েতনামের।

বিভিন্ন তথ্য এখনই এই অনুমানকে সমর্থন করছে। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, চীনের অর্থনীতিতে মন্দাভাবে দেখা দিলে ক্রেতারা পণ্য কেনা কমিয়ে দিবে।

এশিয়ার কোম্পানিগুলোর আত্মবিশ্বাসও কমে যাচ্ছে। চীনের অর্থনীতি ধীর গতি আর চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধির জন্য অন্যতম উদ্বেগের কারণ।

তবে এশিয়ায় এখনও কিছুটা আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে।

ভারত চীনের কাছে এশিয়ার অন্যান্য কয়েকটি ছোট দেশের সমান জিনিস বিক্রি করে না বলে জানিয়েছে এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। দেশটির অর্থনীতি বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল।

বিশ্ব ব্যাংক আশা করছে, এবছর ভারতের বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি  ৭.৩ শতাংশে এবং আগামী বছর ৭.৫ শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে।

ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতিকে সহায়তা করবে। এবছর সেখানে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা ঘটার কথা থাকলেও এই স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ঘটতেই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীন তাদের অর্থ ব্যবস্থায় ৮০০ কোটি ডলার ঢেলেছে, যেন ব্যাংকগুলো কোম্পানিগুলোকে আরও টাকা ধার দিতে পারে। এই টাকা দিয়ে কোম্পানিগুলোকে আরও কর্মী ভাড়া করতে এবং আরও কারখানা বানাতে উৎসাহিত করা হবে।

এই কর্মকাণ্ড এখনই শুরু হয়ে যাওয়ার কোনও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই একমত যে এবছরের শেষ দিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবারও বেগবান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৯ সালে চীনে শুল্কও কমানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনুমান করছে জেপি মরগান।

জাপানের ব্যাংক নোমুরা বলছে, এবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এশিয়ার অর্থনীতি আবারও ‘দীপ্তিমান’ হয়ে উঠবে। এখানকার অর্থনীতি ‘বিশ্ব অর্থনীতির অবিসম্বাদিত ইঞ্জিন হয়ে উঠবে,’ মন্তব্য করেছে ব্যাংকটি।

একই সঙ্গে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধেরও একটা অপ্রত্যাশিত ভালো দিক আছে। এর ফলে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ভারত, ফিলিপাইনের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কারণ, শুল্ক এড়াতে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সাপ্লাই চেইন চীন থেকে এসব দেশে স্থানান্তর করছে।

তবে, চীনের অর্থনীতির মন্দাভাবের সঙ্গে বিশ্বকে আরও দীর্ঘদিন মানিয়ে নিতে হবে বলে মনে করেন ক্যাপিটল ইকোনমিকসের মার্ক উইলিয়ামস।

‘চীন ক্রমেই আরও ধনী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হবে। সব সফল অর্থনীতি এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরে তাদের প্রবৃদ্ধির গতি আরও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে,’ মন্তব্য করেন তিনি।

এর মানে হচ্ছে, চীনের প্রবৃদ্ধি ক্রমছে এমন সংবাদ শিরোনাম আবারও দেখলে অবাক হবেন না। প্রস্তুত থাকুন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.