জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক, নিউ ইয়র্কঃ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী (৯৮তম জন্মদিন) ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৭ উদযাপন উপলক্ষে আজ জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত শতাধিক বাঙালি শিশু অংশ নেয়। পুরো মিশন পরিণত হয় শিশুমেলায়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের শুরুতে সকাল ১০:৩০ মিনিটে উপস্থিত শিশুদের রেজিষ্ট্রেশনের পর বেলা ১১ টায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার সূচনা করা হয়। বয়সের ভিত্তিতে শিশুদের ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। ‘ক’ গ্রুপের চিত্রাঙ্কনের বিষয় ছিল ‘বাংলা বর্ণমালা’ আর ‘খ’ গ্রুপের ‘শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরী’। রঙতুলি আর বর্ণিল সাজে আয়োজিত এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন কিংস্ বোরো কমিউনিটি কলেজের আর্ট প্রফেসর চিত্রশিল্পী জেমী উইলকিনসন, ফাউন্ডেশন ফর আর্ট এন্ড মেমরী এর পরিচালক চিত্রশিল্পী জ্যাক স্যাল এবং স্থানীয় চিত্রশিল্পী লেইন উইটকম। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে জাতির পিতার উপর একটি কুইজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সমেবেত শিশুরা। কুইজের প্রশ্নোত্তরে শিশুদের সক্রিয় সমবেত অংশগ্রহণ তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক সমন্ধে জানার সুযোগ করে দেয়।
‘ক’ গ্রুপে ২য় গ্রেডের ছাত্রী তাসনিয়া নুর এবং ‘খ’ গ্রুপে ৭ম গ্রেডের ছাত্রী নওশিন রহমান প্রথম স্থান অধিকার করে। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে “বঙ্গবন্ধু ক্রেস্ট” প্রদান করা হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় স্থানীয় প্রবাসী বাঙালি ও মিশনের অফিসিয়ালদের ৪৮ জন সন্তান অংশগ্রহণ করে।
মধ্যহ্ন বিরতি শেষে বেলা ২টায় শুরু হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মূল পর্ব – আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতে জাতির পিতার জীবনাদর্শ তুলে ধরে একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশিত হয়। এতে জাতির পিতার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের সাথে আন্তর্জাতিক ও কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনে জাতির পিতার ভূমিকার বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম -এর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি। প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের সন্তানদের আরও বেশী জাতির পিতার জীবন ও কর্মের বিষয়ে জানানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “যে দেশের সাথে নাড়ীর বন্ধন, যে দেশে বাপ-দাদার ভিটা, সে দেশের প্রকৃত ইতিহাস প্রবাসের এই নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। বাঙালি বীরের জাতি। আমাদের রয়েছে বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এসকল ইতিহাস তুলে ধরে তাদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে”।
এর আগে দিবসটি উপলক্ষে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতিসংঘে নিযৃুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে জাতির পিতাকে বছরের প্রতিটি দিনই স্মরণ করতে হবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। জাতির পিতার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে তাই আজকের সকল আয়োজন শিশুদের ঘিরেই করা হয়েছে”।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি বলেন, “মার্চ মাস বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মমাস। এ কারনে এবং শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁর জন্মদিনটিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু দিবস বলে ঘোষণা করেছেন”।
পরে স্থানীয় একটি ব্যান্ড দল ‘মাটি’, ম্যানহাটান বাংলা স্কুল ও বহ্নিশিখা সঙ্গীত নিকেতনের শিশু শিল্পীসহ স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটি, বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারির সন্তানদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তারা জাতির পিতাকে নিয়ে গান, দেশের গান, মুক্তিযুদ্ধের গান ও রবীন্দ্র সঙ্গীত, বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম নিয়ে কবিতা আবৃতি, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, নিউইয়র্কের বিশিষ্ট নাগরিক, মিডিয়া প্রতিনিধিসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।