ড্রেস না থাকায় যশোরে স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে জখম

635

অনলাইন ডেস্কঃগরিব মেধাবী ছাত্র মেহেদী ড্রেস না পরে স্কুলে আসায় যশোরের শার্শা উপজেলা সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। মঙ্গলবার বিকালের এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকার কাগজপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিক দরিদ্র পিতা মহিনুর রহমান। ছেলে মেহেদী হাসান সাগরকে (১৫) উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি করেন যশোরের শার্শা উপজেলা সরকারি মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

(প্রধানশিক্ষকের পিটুনিতে জখম মেহেদী হাসপাতালে)
(প্রধান শিক্ষকের পিটুনিতে জখম মেহেদী হাসপাতালে)

মেহেদী হাসান ওই স্কুলের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে স্কুল ড্রেস বানানোর জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দেন। অভাবের সংসার তারপরও অনেক কষ্ট করে ছেলেকে একটি স্কুল ড্রেসের শার্ট বানিয়ে দেন। গত মঙ্গলবার শুধুমাত্র স্কুলড্রেসের প্যান্ট ছাড়া শার্ট পরে স্কুলে যাওয়ার কারণে মেহেদী হাসানকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তাকে ক্লাসরুম থেকে ডেকে নেন। এরপর স্কুলের ল্যাবরুমের মধ্যে তাকে পশুর মতো পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরে গুরুতর আহত ছাত্রকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনরা। এর আগেও অনেক ছাত্রকে এভাবে মারধরের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান জানায়, স্কুলড্রেসের প্যান্ট ছাড়া শার্ট পরে স্কুলে যাওয়ার কারণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম স্যার আমাকে ক্লাস থেকে ডেকে স্কুলের ল্যাবরুমের মধ্যে নিয়ে পশুর মতো পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। সে আরও বলে, আমার বাবা গরিব, ইটভাটায় কাজ করেন, অনেক কষ্ট করে বাবা আমাকে একটি শার্ট কিনে দিয়েছেন কিন্ত প্যান্ট কিনতে পারেননি। তবে সামনের মাসে কিনে দেবেন বলে আমাকে কথা দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানকে মারধরের কথা স্বীকার করে জানান, ‘যা করেছি তার মঙ্গল ও ভালোর জন্য করেছি’। এ ছাড়া আর কোনো কথা বলতে চাননি তিনি। মেহেদীর পিতা মহিনুর রহমান বলেন, আমি গরিব মানুষ, ইটভাটায় কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলে, অনেক কস্ট করে একটি শার্ট কিনে দিয়েছি ছেলেকে। কিন্ত প্যান্ট কিনে দিতে পারিনি। তাই বলে এত অত্যাচার করা বলে ছেলের ওপর, আমরা গরিব বলে কি ন্যায়বিচার পাব না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ফোনে বলেন, আমি ঢাকাতে অবস্থান করছি, তবে ঘটনা শুনেছি। বিষয়টি অমানবিক। ইউএনও তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মণ্ডল বলেন, এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.