তিন বাংলাদেশী সাংবাদিকের হোস্টরাইটার পুরস্কার ২০১৬ অর্জন

627

আব্দুল হাই,জার্মানিঃ বার্লিন, ২৭ নভেম্বর, জীবন বাজি রেখে পাহাড়, জঙ্গল, সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে আসা শরণার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবনপরিক্রমা তুলে ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড হোস্টরাইটার পুরস্কার ২০১৬ জয় করেছেন বাংলাদেশি-জার্মান তিন সাংবাদিক।

15281848_1163150313721918_367281748_n
“জার্মানিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশী শরণার্থীরা” শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি জার্মানির বন নগরী থেকে তিন ভাষায় প্রকাশিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘আওয়ার ভয়েস’এ বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করা হয়।

15226400_1163177177052565_1200623883_n
হোস্টরাইটার কর্তৃপক্ষ এই গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারের জন্য সেরা প্রতিবেদন বাছাই করতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। অবশেষে শুক্রবার বিচারকদের মন্তব্য সম্বলিত এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তারা চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে। হোস্টরাইটার এর নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় তারা উল্লেখ করেছে, এই পুরস্কারের জন্য সারা পৃথিবী থেকে শতাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জমা পড়ে। এগুলোর মধ্য থেকে প্রথমে পাঁচটি প্রতিবেদনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিচারের জন্য মনোনীত করা হয়। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে কর্মরত হোস্টরাইটার এর কর্মকর্তা, উপদেষ্টা এবং গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ সহ দশ সদস্যের বিচারক প্যানেল এই পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত বিজয়ী নির্বাচন করেন।

15281174_1163187923718157_379576477_n
চূড়ান্ত বিচারে হোস্টরাইটার পুরস্কার ২০১৬ এর বিবেচনায় সেরা প্রতিবেদনটির জন্য যৌথভাবে পুরস্কার জয় করেছেন ডয়চে ভেলের সাবেক সাংবাদিক রিয়াজুল ইসলাম, হোসাইন আব্দুল হাই এবং কবি ও সাংবাদিক মীর জাবেদা ইয়াসমিন।
প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রণয়নের উপকারিতা সম্পর্কে পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিকদের পর্যবেক্ষণ, এই একই প্রতিবেদন যদি কেউ একাকী তৈরি করতো, তাহলে সেটি কোনভাবেই এতোটা সমৃদ্ধ হতো না এবং শরণার্থীদের দুর্গম পথের চরম দুর্ভোগের এমন বাস্তব চিত্র হয়তো ফুটে উঠতো না। হোস্টরাইটার এর প্লাটফরম ব্যবহারের ফলে প্রতিবেদনটি আরও সমৃদ্ধ হয়েছে, যা নীতি নির্ধারকদের এবং সুশীল সমাজের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হবে, বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
সাবেক ডিডাব্লিউ সাংবাদিক এবং প্রবাস ম্যাগাজিন ‘সীমান্ত’ এর সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম পুরস্কার জয়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশের শরণার্থীদের কষ্টের চিত্রধারক এই প্রতিবেদনটিকে সেরা হিসেবে মনোনীত করায় হোস্টরাইটার কর্তৃপক্ষ এবং বিচারক মণ্ডলীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। এই পুরস্কার আমাদেরকে এবং অন্যান্য সাংবাদিকদের শরনার্থীদের এসব অপ্রকাশিত দুর্ভোগের চিত্র নিয়ে আরও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরিতে অনুপ্রাণিত করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশী-জার্মান কবি এবং আওয়ার ভয়েস এর নির্বাহী সম্পাদক মীর জাবেদা ইয়াসমিন এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য যেসব শরণার্থী সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী শরণার্থীদের মৃত্যুকূপ থেকে বেঁচে আসার ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরা সহজ ছিল না। এমনকি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় কিছু শরণার্থী তাঁদের সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেছিলেন। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, আমাদের বেঁচে থাকার কোন আশাই ছিল না’।
ডিডাব্লিউ এর সাবেক সাংবাদিক এবং বর্তমানে নিউ জার্মান মিডিয়ামেকার এনডিএম ফেলো হোসাইন আব্দুল হাই এই উচ্চমানের পুরস্কার ও স্বীকৃতির জন্য এনডিএম এবং হোস্টরাইটার কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এই স্বীকৃতি নীতি নির্ধারক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং আশু পদক্ষেপ গ্রহণে চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে করে মানবপাচারকারীরা এভাবে ভুয়া তথ্য দিয়ে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণের দেশগুলো থেকে অর্থনৈতিক শরণার্থীদের এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যুকূপের দিকে ঠেলে দিতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রতিবেদনটিতে এমন লোম-হর্ষক ভয়ঙ্কর শত শত ঘটনার মাত্র কয়েকটি বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়েছে মাত্র। আরও অসংখ্য শরণার্থী এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে বন-জঙ্গল কিংবা সমুদ্রে প্রাণ হারাচ্ছে, যাদের কোন হদিস আর কখনও আত্মীয়স্বজন পায়না। তাই তিনি এব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং দক্ষিণের দেশগুলোতে সচেতনতা বাড়াতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

এ এইচ এম আব্দুল হাই
শিক্ষা সমন্বয়ক
হাউজ অফ ইন্টেগ্রেশন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.