দাবি পূরণ ছাড়া বিএনপির ভোটে আসা ছিল অপ্রত্যাশিত

451

বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’-এর ধারে-কাছেও নেই বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স। এক প্রতিবেদনে হাউস অব কমন্স এই মন্তব্য করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন তীব্র রয়ে গেছে। প্রতিবেদনে হাউস অব কমন্স বলেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজনসহ কোনো দাবি পূরণ না হওয়া স্বত্বেও নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের ঘোষণা অপ্রত্যাশিত।

2bed10efd810326408ba26c72f28f580-5c013f33c5d21বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের এই প্রতিবেদন ‘রিসার্চ ব্রিফিং’ নামে পরিচিত। দেশটির এমপিদের অবগতির জন্য এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে গত বুধবার বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে।

১৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে কোনো পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, ইইউ’র এমন সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি দেওয়া হয় যে, আন্তর্জাতিক মহলে এই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে ইইউ দুই সদস্যের ‘এক্সপার্ট মিশন’ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কমনওয়েলথ এখনো কিছু বলেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজনসহ কোনো দাবি পূরণ না হওয়া স্বত্বেও বিএনপি অপ্রত্যাশিতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে নির্বাচন তুলনামূলক বিশ্বাসযোগ্য হবে। কিন্তু ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বা সমান সুযোগ নিশ্চিতের বিষয়টি অনেক দূরে।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বহু আগ থেকেই যে বিরোধীদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে—সেই প্রসঙ্গটিও বাদ যায়নি প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। বিএনপি এর বিরোধিতা করে আসছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়মের প্রতি (রুলস অব গেইম) সার্বিক আস্থার মাত্রা তলানিতে রয়ে গেছে। এর ফলে নির্বাচনী প্রচারকালে বা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপর সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বলেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনের ১৫ দিন আগে সেনা নামবে।

হাউস অব কমন্সের এই প্রতিবেদনে বিএনপির দাবি-দাওয়া, খালেদার মামলা ও সাজা, সংলাপের আয়োজনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। দলগুলোর আদর্শিক পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে স্বাগত জানিয়েছে। এর বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির জোরালো দাবিদার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সম্প্রতি রক্ষণশীল ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সখ্য। এ অবস্থা উল্টো পথে মোড় নেওয়ার মতো।

এ ছাড়া এই প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিও উঠে এসেছে। আছে কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে পুলিশি বলপ্রয়োগ এবং ছাত্রলীগের হামলার প্রসঙ্গও। প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে এক শ দিনের বেশি কারাবন্দী রাখার বিষয়টিও আছে প্রতিবেদনে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চেষ্টায় বাধা পড়ার বিষয়ে আছে বিস্তারিত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী-জঙ্গি উৎপাতের ঘটনা কমলেও ঝুঁকি শেষ হয়ে যায়নি।

সূত্র: প্রথম আলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.