দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করা হবে: শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের একদল তরুণের সঙ্গে মতামত ও ভাব-বিনিময় করেছেন। তিনি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কোন পথে চলবে তা নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। গত ২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত লেট’স্ টক উইথ হাসিনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি তরুণদের সঙ্গে এ মতবিনিময় করেন।সিআরআই আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানটির অডিও, ভিডিও এবং অনুলিখন প্রকাশ করে। খবর: বাসস
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপক ছিলেন ডা. নুজহাত চৌধুরী।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো শঙ্কা কাজ করে কি না- এ প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চেয়েছি দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। কিন্তু সারা দেশে যখন একযোগে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়, বোমা পুতে রাখা। এ ধরনের কাজ আমি পছন্দ করিনি। আর আমি এর আগে ক্ষমতায় এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি করে সেখানকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবেশী দেশে হামলা করা হতো। আমি বুঝেছিলাম, জঙ্গিবাদ থাকলে কোন দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। বিরোধী দলে থাকি, আর সরকার দলে; যেটা নীতির ব্যাপার সেটার বিষয়ে সোচ্চার হওয়া শুধু সরকারি দলে আসলেই করব, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় করব না এমন নয়। আমার দেশকে আমি ভালবাসি। আর সে কারণেই এ বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সব সময় প্রতিবাদ করেছি।
আর আমাকে ত অনেক বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। কয়েকবার না অনেকবার। এমনকি সামনে থেকে গুলি করেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে আমাকে। যখন বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি তখনও বাধা পেয়েছি। কিন্তু একটা বিষয়, এ দেশের মানুষ, যেখানে গিয়েছি সেখানে এত ভালবাসা পেয়েছি। এই ভালবাসা আমার শক্তি। সেটাই আমার প্রেরণা।
আজকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। এটাওত বড় বিষয়।
রাজনীতিতে না আসলে কি করতেন? ছোটবেলায় কি হতে চেয়েছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ছোট বেলায় ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হবো। এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, তখন দেখলাম অঙ্কে কাঁচা। আর বন্ধুরা সবাই আর্টসে ছিলো, আমিও আর্টসে ভর্তি হই। এরপর ইচ্ছা ছিলো শিক্ষক হবার। আবার শিক্ষক মানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। বাচ্চাদের পড়াব।
মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কোটা তুলে দেয়া হয়েছে। এটি পুন বিবেচনা করবেন কিনা- এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, কোটা বাতিলের জন্য আন্দোলন করা হয়েছে। সে কারণে কোটা তুলে দেয়া হয়েছে। অনেকে বলেছে, এই দাবি মেনে নেয়া মানে হেরে যাওয়া। আমি বলেছি, না হেরে যাওয়া নয়। কেননা বাচ্চা দাবি করেছে। সেই দাবির প্রেক্ষিতে কোটা বাতিল করা হয়েছে। যারা প্রতিবন্ধী, নৃ-তাত্বিক গোষ্ঠী বা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আছেন তাদের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে নতুন দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রান্তিক পর্যায়ের উন্নয়নে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে চাই। আমরা কাজ করছি। গ্রাম আর গ্রাম থাকবে না, শহরে পরিণত হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়ার সময় শহর কেন্দ্রিক বা রাজধানী কেন্দ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়না। বরং দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কথাও ভাবা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। বাংলাদেশ নিয়ে যে দীর্ঘ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, আমি হয়ত ততদিন বাঁচব না। কিন্তু তোমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার পথ কিভাবে বন্ধ হবে, কবে বন্ধ হবে- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারো ভেতরে যদি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বা দেশের প্রতি ভালবাসা না থাকে, তারা কখনও দেশের উন্নয়ন করবে না, করতে চাইবেও না। পরাজিত শক্তির দোসর যারা তারা তে দেশকে পিছিয়েই রাখতে চায়। এর ফলাফল আমরা দেখেছে ৭৫ সাল থেকে পরবর্তীত বছরগুলোতে। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি দাবি করতে পারি আমরা প্রমাণ করেছি, সরকার জনগণের সেবক। গত ১০ বছর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের চিত্র একবার খুঁজে দেখার চেষ্টা করলে তোমরাই দেখতে পাবে কতটা এগিয়েছি আমরা। এর একমাত্র কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি। আগে যারা ছিলো, সেখানে ভেজাল ছিলো। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে শক্তি, মুক্তিযোদ্ধা সব মিলিয়ে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা।
কবে দুর্নীতি মুক্ত হবে বাংলাদেশ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমার লক্ষ্য আছে। আমি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আভিযান চালিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করা হবে। আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের আয় উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেখানে দুর্নীতি করার দরকার কী? অসুস্থ প্রতিযোগীতা থেকে সরে আসতে পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব।
তরুণ উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা
দেশকে ভালোবাসতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে কি পেলাম না পেলাম আমি দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটা দিতে পারলাম তা ভাবতে হবে। পরশ্রী কাতরতা থেকে বের হয়ে এসে নিজেকে নিজের বলতে হবে, আমি পারি। আমি আমার মত করেই ভালো করব। কেউ দ্রুত উপরে উঠে গেলো দেখে আমাকে একটা অসুভ প্রতিযোগিতা করতে হবে সেটা ঠিক নয়। সেই সাথে দেশ প্রেম এবং মানুষের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হই তাহলে একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। আর তোমাদের দায়িত্ব নিজের মাঝে সেই ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করে দেশের প্রতি দায়িত্ব, নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব এবং প্রতিবেশি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। আর সব সময় একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে দেশকে কিছু দিতে পারবে, নিজেও জীবনে কিছু করতে পারবে। হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। জীবনে অনেক ঝড় ঝাপ্টা আসবে। কিন্তু ইচ্ছা শক্তি প্রবল থাকলে যে কোন বাধা অতিক্রম করা যায়। একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে যদি কেউ এগিয়ে যায়। তাহলে কোন বাধাই বাধা বলে মনে হবে না। দেশকে এতদূর নিয়ে আসতে পেরেছি তার প্রধান কারণ এই ইচ্ছা শক্তি। জাতির জনক বলে গেছেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। ত্যাগের মধ্যে দিয়েই অর্জন করা যায়। আর সৎ থাকতে হবে। যদি সৎ না থাকতাম, তাহলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করতে পারতাম না। পদ্মা সেতুর কাজও শুরু করতে পারতাম না। আমার এই একটি সিদ্ধান্ত বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদাকে অন্য এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আমি তোমাদের কাছে এটাই চাই, যে সেই আত্মমর্যাদা তোমরা ধরে রাখবে। যেখানে আমরা বাংলাদেশকে রেখে যাচ্ছি, তোমরা সেখান থেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। তোমাদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দিচ্ছি কারণ তোমরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।