দুর্নীতি সূচকে অবনতি, ১৩তম বাংলাদেশ

404

দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের আরও অবনতি হয়েছে। চার ধাপ পিছিয়ে এবারের দুর্নীতি ধারণা সূচকে ১৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

CPI 2018_TIB Picture (1)

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে একযোগে মঙ্গলবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) এই প্রতিবেদন তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ চ্যাপ্টার টিআইবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮০টি দেশের মধ্যে নিম্নক্রম (খারাপ থেকে ভাল) অনুযায়ী সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। দেশটির স্কোর ২৬। গতবছর ২৮ স্কোর করে এই অবস্থান ছিল ১৭।

সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৯ নম্বরে। গতবার ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৩ নম্বরে।

বাংলাদেশ ২০১৬ সালে ১৫তম হলেও তার আগের বছর, ২০১৫ সালে ছিল ১৩তম অবস্থানে। এর আগে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে সেরা অবস্থানের কলঙ্ক মাথায় নিয়েছিল।

১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার ২ পয়েন্ট কমে ২৬ হয়েছে। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ কেবল আফগানিস্তান। ১৬ স্কোর নিয়ে দেশটির অবস্থান উর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ১৭২।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবারের সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ৬৮ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে।

এরপর ভারত ৭৮ (স্কোর ৪১), শ্রীলঙ্কা ৮৯ (স্কোর ৩৮), পাকিস্তান ১১৭ (স্কোর ৩৩), মালদ্বীপ ১২৪ (স্কোর ৩১) ও নেপাল ১২৪ (স্কোর ৩১)।

২৬ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা।

এবারের সূচকে দুর্নীতিতে সেরা সোমালিয়া। দেশটির স্কোর ১০। এরপর রয়েছে সিরিয়া (স্কোর ১৩) ও দক্ষিণ সুদান (স্কোর ১৩)।

দুর্নীতির ধারণা সূচকে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। দেশ দুটির স্কোর যথাক্রমে ৮৮ ও ৮৭।

টিআই বলছে, তাদের এবারের সমীক্ষায় দুই তৃতীয়ংশের বেশি দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে। আর প্রতিবেদনের ১৮০টি দেশের গড় স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪৩।

প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। এখানে আত্মতুষ্টির কোনো অবস্থা নেই।’

এবারের সূচকে বাংলাদেশের অবনমনকে ‘বিব্রতকর’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা থাকলেও এটার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই। উচ্চ পর্যায়ের লোকদের বিচারের আওতায় আনার সে রকম উদাহরণ কম। ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারি ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি এক ধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুদক ও অন্যান্য জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল। গণমাধ্যম ও নাগরিক প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রও সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগতভাবে অর্থ পাচার হচ্ছে।’

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুদকের কাজ নিম্ন ও মধ্য পর্যায়ে সীমাবদ্ধ, উচ্চ পর্যায়ে নেই। প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্সের’ যে ঘোষণা আছে সেটা কার্যকর করার জন্য পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সংসদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। আসামিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা বিভাগের পরিচালক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.