দেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না: শেখ হাসিনা
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে তার সরকার কাজ করছে। আগামীতে এদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না।
শনিবার বিকেল ৪টা তিন মিনিটে সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
এর আগে সকালে সিলেট পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) এবং হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন (রহ.)- এর মাজার জিয়ারত করেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান জনসভা পরিচালনা করেন।
নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইতে এসেছি। ডিসেম্বর মাসে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাদের শ্রদ্ধা জানাই। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পান। ’৭৫- এর ১৫ আগস্টের পর দেশে অরাজকতা শুরু হয়। আমরা দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে এনেছি। জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সম্মান নষ্ট করা হয়। এরপর শুরু হয় বোমাবাজি, হত্যার রাজনীতি। জঙ্গিবাদ করে অপশক্তি বাংলাদেশের মানুষের সম্মান নষ্ট করে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ খুন করে। তারা শাহ এএমএস কিবরিয়াকে বোমা মেরে হত্যা করে। মানুষ খুন করে তারেক জিয়া বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকার বাজেট করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।
সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট-ঢাকা চার লেন প্রকল্প নিয়েছি। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। আমরা সিলেটের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছি।
তিনি বলেন, সারা দেশে মসজিদ কাম ইসলামিক সেন্টার করেছি। কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি দিয়েছি, যাতে তারা সনদ নিয়ে দেশে-বিদেশে কাজ করতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মোবাইল ফোন এখন আমরা সহজলভ্য করে দিয়েছি। ফলে দেশের সকলের হাতে মোবাইল ফোন। ব্রডব্যান্ড চালু করে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আকাশে স্থাপন করেছি। আগমীতে ফাইভ-জি চালু করব। আমরা তথ্য প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন, হাওরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতে কাজ করছি। বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে এদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা উন্নয়নের প্রতীক, নৌকায় ভোট দিলে মানুষের উন্নয়ন হয়। একটা সময় বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্নীতি, লজ্জা। আর এখন বাংলাদেশ মানে উন্নয়ন। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করলে আমি বলি, নিজের নয়, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। কারও সাহায্য ছাড়া পদ্মা সেতুর সিদ্ধান্ত বিশ্বে সাধুবাদ পায়। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ধানের শীষ মানে সন্ত্রাস-অগ্নিসংযোগ। সবাইকে তিনি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।
প্রায় ৩৫ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মহাজোট প্রার্থীদর পরিচয় করিয়ে দেন। মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে উপস্থিত জনতা নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার ওয়াদা করেন।
নির্বাচনী জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন, সিলেট-১ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. একে আবদুল মোমেন, সিলেট-২ মহাজোট প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, সিলেট-৩ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী, সিলেট-৪ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমরান আহমদ, সিলেট-৫ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার, সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
মাজার জিয়ারত শেষে বেলা সোয়া ১টার দিকে সিলেট সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিশ্রাম ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন তিনি।
শেখ হাসিনার জনসভা উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থীরা তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হন।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এক জনসভায় ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা।
সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভাস্থলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
জনসভাস্থলের সকল প্রবেশ পথে বসানো হয়ে মেটাল ডিটেক্টর। তল্লাশি করে সভাস্থলে ঢুকানো হয় নেতাকর্মীদের।