দ্বিতীয় বিতর্কেও হিলারির কাছে ধরাশায়ী ট্রাম্প
নিউজবিডি ইউএসডেস্কঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই প্রার্থীর দ্বিতীয় দফার বিতর্কেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কাছে ধরাশায়ী হলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম বিতর্কের মতো অতোটা
নৈপুন্য দেখাতে পারেননি হিলারি। অন্যদিকে জয় না পেলেও ট্রাম্প ধারণার চেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন। স্থানীয় সময় গত রবিবার মিসৌরির সেন্ট লুইস ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে মুখোমুখি হবার পর হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতি উপস্থাপনের চেয়ে একে অপরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেই কথা বেশি বলেছেন তারা। বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ই-মেইল কেলেঙ্কারির জন্য হিলারির কারাগারে থাকা উচিত। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি হিলারির বিষয়ে তদন্ত চালাতে একজন স্পেশাল প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন। ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের জবাবে হিলারি বলেন, ট্রাম্প যা বলেছেন সেটা একেবারেই মিথ্যা। এতে আমি বিস্মিত হইনি। এটা বরং খুবই ভালো হয়েছে যে, ট্রাম্পের মতো একজন বদমেজাজি লোক আমাদের দেশের সর্বময় কর্তা হতে পারেন না। হিলারির এমন বক্তব্যের মাঝপথেই ফের হিলারিকে জেলে পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। বিতর্ক চলার সময় ট্রাম্পকে ২০০৫ সালে এক অডিও সাক্ষাৎকারে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। আত্মপক্ষ সমর্থন করে ট্রাম্প উল্টো তীব্র আক্রমণ করেন হিলারি দম্পতিকে। নারীদের সঙ্গে নিজের যে কোনও ধরনের যৌন অসদাচরণের কথা অস্বীকার করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান দলীয় এ প্রার্থী বলেন, ২০০৫ সালের অশালীন মন্তব্য নিয়ে তিনি গর্বিত নন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে বিল ক্লিনটন সবচেয়ে বেশি নারী নির্যাতন চালিয়েছেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রবিবারে এ বিতর্কে শেষ পর্যন্ত কোন প্রার্থী জয়ী হয়েছে সে ব্যাপারে জরিপ পরিচালনা করে ইউগভ ও সিএনএন/ওআরসি। অনলাইনে ৮১২ জন রেজিস্টারকৃত ভোটারের (যারা হিলারি-ট্রাম্পের বিতর্ক দেখেছেন) সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে ইউগভের জরিপটি চালানো হয়েছে। আর টেলিফোন ও সেলফোনে ৫৩৭ জন ভোটারের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলাদা আরেকটি জরিপ চালায় সিএনএন/ওআরসি।
ইউগভের অনলাইন জরিপে দেখা যায়, রেজিস্টারকৃত ভোটারদের দৃষ্টিতে দ্বিতীয় দিনের বিতর্কে অল্পের জন্যই জয় পেয়েছেন হিলারি। ৪৭ শতাংশ ভোটার মনে করেন হিলারিই ভালো করেছেন। আর ৪২ শতাংশ ভোটার মনে করেন ট্রাম্প বিতর্কে এগিয়ে ছিলেন। তবে ১২ শতাংশ মনে করছে তারা দুজন সমান সমান লড়াই করেছেন। ইউগভ যেসব ভোটারদের মধ্যে জরিপ পরিচালনা করেছে তাদের বেশিরভাগই মনে করছে হিলারি ক্লিনটন বেশ ভালোভাবে প্রস্তুত ছিলেন, বুদ্ধিদীপ্ত ছিলেন এবং আরও বেশি প্রেসিডেন্টসুলভ আচরণ করেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প কেবল নেতিবাচক হওয়া ও ঘন ঘন প্রতিদ্বন্দ্বীকে থামিয়ে দেওয়ার কারণে এগিয়েছেন।
অবশ্য সিএনএন/ওআরসির জরিপে বলা হয়েছে এবারের বিতর্কেও হিলারি বেশ ভালো ব্যবধানেই জয়ী হয়েছেন। জরিপ অনুযায়ী, ৫৭ শতাংশ মনে করেন, হিলারি জয়ী হয়েছেন। ৩৪ শতাংশ মনে করেন, ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। তবে সিএনএন বলছে, প্রথম বিতর্কের তুলনায় দ্বিতীয় বিতর্কে হিলারি ভালো নৈপূণ্য দেখাতে পারেননি। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিতর্কে ধারণার চেয়েও ভালো করেছেন ট্রাম্প।
সিএনএন/ওআরসির জরিপ অনুযায়ী, প্রথম বিতর্কেও হিলারি জয়ী হয়েছিলেন। তখন ৬২ শতাংশ ভোটার তাকে জয়ী বলে উল্লেখ করেছিল। আর মাত্র ২৭ শতাংশ ভোটার জানিয়েছিল ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন।
উল্লেখ্য, নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে দুই প্রার্থী ইতিমধ্যে প্রায় দেড় বছর কাটিয়েছেন। তাঁরা অসংখ্য বিতর্ক ও নির্বাচনী সভায় অংশ নিয়েছেন। পত্রিকা-টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এসব ছাপিয়ে দুজনের জন্যই মুখোমুখি বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রায় অর্ধেক মার্কিন ভোটার বিতর্ক দেখেই পছন্দের প্রার্থী বাছাই করে থাকেন।
তবে দ্বিতীয় বিতর্ক নিয়ে সর্বশেষ দুটি জনমত জরিপই বলছে, বিতর্ক শেষে কিছু কিছু ভোটার তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন। দ্বিতীয় বিতর্কের আগে সিএনএন-এর এক জরিপে বলা হয়েছিল, ৫৮ শতাংশ ভোটার হিলারিকে সমর্থন দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু বিতর্ক শেষে তা ৫৭ শতাংশতে নেমে এসেছে। আর ইউগভ জানিয়েছিল ৪৮ শতাংশ সমথৃনের কথা যা পরে ৪৭ শতাংশতে নেমে এসেছে।
কয়েক দশকের প্রথা ভেঙ্গে রোববার রাতের এই দ্বিতীয় বিতর্ক শুরুর আগে পরষ্পরের সঙ্গে করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানান আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ও রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কে ট্রাম্প স্বভাবজাত বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে হিলারির আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
মিসৌরির সেন্ট লুইস ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে এ বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে হিলারির ই-মেইল কেলেঙ্কারির বিষয়ে বিশেষ একজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেবেন। ট্রাম্প বলেন, “আপনার অবশ্যই লজ্জিত হওয়া উচিত।” প্রতিক্রিয়ায় হিলারি বলেন, ট্রাম্পের মত মনমানসিকতার কেউ হোয়াইট হাউসে নেই বলে তিনি স্বস্তিবোধ করছেন। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, “আপনাকে জেলে যেতে হবে।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র মাসখানেক আগে ট্রাম্পের নারীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অডিও টেপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে গেছেন নিউ ইয়র্কের এই ব্যবসায়ী।
এক দশক আগে করা নিজের ওই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। এমনকি নিজ দলের একের পর এক শীর্ষ নেতার সমর্থন হারাচ্ছেন তিনি। সিএনএন-র প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অবস্থায় আত্মপক্ষ সমর্থনে হিলারির স্বামী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টানার কদর্য পথটিই বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। বিতর্কে বিল ক্লিনটন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছেন, “আমারটা কেবল কথা, আর বিল ক্লিনটনতো করে দেখিয়েছেন।” এ বিষয়ে হিলারি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যই দেখিয়ে দেয়, কেন তিনি হোয়াইট হাউসের জন্য অনুপযুক্ত। ওই অডিও তাকে উপস্থাপন করে না বলে দাবি করছেন ট্রাম্প; কিন্তু আমার ধারণা, যারা এটি শুনেছেন তারা বুঝতে পারছেন, এটি কেবলমাত্র তাকেই উপস্থাপন করে”, বলেন হিলারি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কের আগে বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণের অভিযোগকারী তিন নারী- পলা জোনস, জুয়ানিতা ব্রডরিক ও ক্যাথলিন উইলির সঙ্গে দেখা করেন ট্রাম্প। বিতর্ক অনুষ্ঠানে তারা সামনের সারিতেই বসে ছিলেন। বিতর্কে ফাঁস হওয়া নারীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের ওই টেপকে ‘লকার রুমের কথা’ বলে উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। বলেন, নারীদের প্রতি তার যথেষ্ট ‘শ্রদ্ধা’ আছে।
এ প্রসঙ্গ টেনে হিলারি বলেন, এ ঘটনা ট্রাম্পের চরিত্রের ‘প্রকৃত ছবি’ তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টশিয়াল বিতর্কে সাধারণত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন এবং অন্যদের পরিকল্পনার ভুলগুলো খুঁজে বের করে প্রতিপক্ষকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করেন। কিন্তু রোববার রাতে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কদর্য ভাষায় ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ টেনে পরষ্পরকে আক্রমণ করে গেছেন। এই রাতে ট্রাম্প হিলারিকে ‘শয়তান’ ‘মিথ্যাবাদী’ এবং ‘তার হৃদয় ঘৃণায় পূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেন। সিএনএন-র অ্যান্ডারসন কুপার ও এবিসি-র মার্থা রাদাটজ বির্তক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। সিএনএন-র প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কে হিলারি কথা বলার সময় নানাভাবে তাকে বিরক্ত করে গেছেন ট্রাম্প। প্রথম বিতর্কের তুলনায় এ রাতে দ্রুত মেজাজ হারান রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।