নববধূকে ঘরে তোলা হলো না ডা. ফাহাদের

152

বছরখানেক আগে পারিবারিকভাবে বিয়ের আকদ হয়েছিল। বর-কনে দু’জনই চিকিৎসক। দু’জনই চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে কনে ৩৯তম বিসিএসে ভাইভার জন্য মনোনীতও হয়েছেন। নতুন বছরে পরিকল্পনা হয়েছিল বিয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। সব এগিয়ে চলছিল ঠিকঠাক মতোই।

কিন্তু সব পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিল একটি দুর্ঘটনা।

888812

রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে ফেরার পথে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ (৩৫)। তিনি পবিত্র কুরআনের হাফেজ ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় থাকতেন।

বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে ওই চিকিৎসকের মোটরসাইকেলে হানিফ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কা দেয়। সাতকানিয়ার হাসমতের দোকান এলাকায় এ দুঘর্টনা ঘটে। বাসটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে যায়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, হাটহাজারী পৌরসভার রেলস্টেশন রোডের মরহুম শফিউল্লাহ মাস্টারের ছোট ছেলে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মো. আজাদের বড় মেয়ে ডা. জান্নাতুন নাঈম শারমিনের সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার মঞ্জুরুল হকের পুত্র ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ (৩৫)-এর আকদ সম্পন্ন হয়েছিল।

মাসখানেক মধ্যে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বধূ ডা. শারমিনকে নিজের বাড়িতে তুলে নেওয়ার কথা ছিল ডা. ফাহাদের পরিবারের। সেই উপলক্ষে ডা. শারমিনের প্রবাসী পিতা আজাদ সম্প্রতি দেশেও এসেছেন।

তবে ডা. ফাহাদের একমাত্র ভগ্নিপতি (সেনাবাহিনী মেজর) জাতিসংঘের মিশনে কর্মরত রয়েছেন। শুধু তার দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়নি।

image-137174-1548344266

কিন্তু তাই বলে বিয়ের প্রস্তুতি থেমে থাকেনি। উভয়ের পরিবারে চলছিল বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজন। পছন্দের মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাণের প্রিয় মানুষটাকে ঘরে তুলে নেবে। এই নিয়ে কতই না স্বপ্লের জাল বুনে ছিল ফাহাদ।

মাত্র একটি বছরের জন্য কাছে পাওয়া মনের মানুষটিকে এভাবে চিরদিনের জন্য যে হারাতে হবে তা কখনও কল্পনা করেনি চিকিৎসক শারমিন।

মুহূর্তের মধ্যেই যেন তার কল্পিত সেই স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামীর অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ডা. শারমিনের রঙিন স্বপ্নের যবনিকা ঘটালো।

ঘটনার দিন ডা. ফাহাদ কক্সবাজার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তার স্ত্রী ডা. শারমিনের ফুফাত ভাই ডা. রিসাতের বিয়েতে যোগ দিতে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন।

নিহত ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত চিকিৎসক ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায় হলেও তিনি তার পরিবারের সঙ্গে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় বাস করতেন। কোরআন হাফেজ ডা. ফাহাদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি লাইটার ইয়ূথ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বপালনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় তার আকস্মিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন এমনটা জানিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তার স্বজনরা। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পিতা-মাতা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।

ডা. ফাহাদ সম্পর্কে তার বন্ধু চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের লেকচারার ডা. মোহাম্মদ তারেক যুগান্তরকে বলেন, ‘ও অনেক মিশুক ছিল। মানুষের সঙ্গে সে সহজেই মিশতে পারতো। মিষ্টি হাসি দিয়ে সবাইকে আপন করে নিত অনায়াসে। মানুষের মন জয় করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.