নষ্ট উড়োজাহাজে বিমানের লোকসান মাসে ১০ কোটি
মিশর থেকে ভাড়া করা নষ্ট উড়োজাহাজ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিকল অবস্থায় পড়ে থাকা দুই উড়োজাহাজের জন্য বিমানের প্রতিমাসে গচ্চা যাচ্ছে ১০ কোটি টাকা। ফলে ভাড়া করা উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার বদলে বিমানের জন্য পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ নিয়ে রোববার বিমানের বলাকা ভবনে প্রথম পরিদর্শনে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রায় ৫০ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়ে মিসর থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ভাড়ায় আনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমান বহরে যোগ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এয়ারক্র্যাফটের ইঞ্চিন নষ্ট হয়ে যায়।
দুই দফায় নতুন ইঞ্জিন আনলে কিছুদিন পরপর ক্রুটি দেখা দেয়। যার কারণে পরবর্তীতে ফেরত মিশরের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিমান। কিন্তু ইজিপ্ট এয়ারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী সচল করে ফেরত পাঠাতে হবে তাদেরকে।
মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ না পাওয়ার অজুহাতে গেল দীর্ঘ সময় ধরে ভিয়াতনামে পড়ে আছে বিমানের ভাড়া করা উড়োজাহাজ দুটি। এরফলে প্রতিমাসে দুটি এয়ারক্রাফট বাবদ ১০ কোটি টাকা করে ভাড়া গুনছে বিমান।
জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ৫ বছরের জন্য এ দু’টি উড়োজাহাজ লিজ নেয়া হয়। চলতি বছরের শেষের দিকে লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পরে প্রথম বারের মতো বিমানের কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সক্ষাতে আসেন মো. মাহবুব আলী।
বিমানের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে মিশর থেকে ভাড়া করা উড়োজাহাজের বিষয় নিয়ে গাফিলতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদের কাছে নষ্ট উড়োজাহাজের বিষয় নিয়ে জানতে চান।
প্রতিমন্ত্রী চুক্তির সময় নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে আরও সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল জানান।
তিনি বলেন, মিশরতো প্রতিমাসে টাকা পাচ্ছে, আমাদেরকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল।
এ সময় অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হকও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘নষ্ট এয়ারক্রাফট দুটি ভিয়াতনামে পড়ে আছে। সেখানে আসলে কি ঘটছে, তারা যেটা বলছে (মেরামতের নামে) আমরা সেটা বিশ্বাস করছি। যখন এই বিষয়টি নিয়ে এতো জটিলতা হচ্ছে তখন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আমি জানলাম না কেন? তাদের সাথে দরকার হলে আমরা কথা বলতাম। বিষয়টা নিয়ে এত গোপনতো আপনারাই (বিমান কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য)করছেন।’
তবে বিমানের এমডি মোসাদ্দিক আহমেদ খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘চুক্তিতে ছিল বিমানগুলো যেভাবে আনা হয়েছে। সেইভাবে ফেরত দিতে হবে। বর্তমানে অকজে অবস্থায় থাকা বিমান মেরামত করতে গেল যে পার্টাসগুলো দরকার সেগুলো এই মুহুর্তে নেই। এখন সেই উড়োজাহাজগুলো ভিয়াতনামে আছে। সেগুলো মেরামতের চেষ্টা করা হবে অতিদ্রুত, তা না হলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও মিশরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কারণ এভাবে লোকসান দিনের পর দিন টানা সম্ভব না।’
এ সময় ভবিষ্যতে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ারও পরমর্শ দেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।