নাসাউ কলিসিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানাই আসল ফোবানা
নিউইয়র্ক (ইউএনএ):
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের লেবার যে উইকেন্ডে বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কের নাসাউ কলিসিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ৩৩তম ফোবানা কনভেনশন সফল করার আহ্বান জানিয়ে ফোবানা’র ষ্টিয়ারিং ও হোস্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আমরা উত্তর আমেরিকায় ঐক্য বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ার লক্ষ্যে এক ফোবানার পতকাতলে সবাইকে আহ্বান জানালেও কতিপয় ব্যক্তিবর্গের একগুয়েমী, স্বার্থপরতা আর ইগো’র সমস্যায় আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না। তবে ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের দরজা সবসময় খোলা। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা বিগত ৩২ বছর ধরে এক ফোবানা, এক লগো আর একই চিন্তা-চেতনা ও লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমরাই আসল ফোবানা। আমাদের কোন কিছুর পরিবর্তন নেই। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে গত ৮ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে ফোবানা নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। এতে ফোবানা’র ষ্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মীর এইচ চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী জাকারিয়া চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ হালিম এবং ৩৩তম ফোবানা কনভেনশনের কনভেনর নার্গিস আহমেদ ও সদস্য সচিব আবীর আলমগীর সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে আতিকুর রহমান, জসিম, উদ্দিন, রবিউল করীম বেলাল, বেদারুল ইসলাম বাবলা, গোলাম ফারুক উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ড. দেলোয়ার হোসেন ছাড়াও ফোবানা ও কনভেনশন কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন নাহিদ চৌধুরী মামুন, ডা. ফারুক আজম, কিরণ কবীর, জহির মাহমুদ, শহীদুল ইসলাম বাধন, পলাশ বি পিপলু, মাহবুব রেজা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মিট দ্যা প্রেসের শুরুতে লিখিত বক্তব্যে ফোবানার এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী জাকারিয়া চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের মহান বিজয়ের মাসে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সেই সব শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা এবং স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। তিনি বলেন, একটা সময় ছিলো যখন ফোবানা সম্মেলন এগিয়ে এলে দেখা যেতো নানান বিভক্তি এবং মতবিভেদ। কিন্তু অত্যন্ত সুখের বিষয় এখন ফোবানা একটিই। ফোবানার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা সবাই অনেকদিনের চেনা আপনজন। সবার আন্তরিক সাহায্য ও সহযোগিতার কারণে আমরা এখন অনেক এগিয়ে গেছি এবং দিনে দিনে আমাদের এই অগ্রযাত্রা অব্যহত থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: ৩২ বৎসরের ফোবানার সমৃদ্ধ ইতিহাস সম্পর্কে প্রত্যেকেই অবগত আছেন। এবারে কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্কে। তাই নিউইয়র্ক-এর সকল গণমাধ্যমের সহযোগিতা ছাড়া এই সম্মেলনকে সফল করা সম্ভব নয়। কনভেনশনের ওই সময়টিতে নিউইয়র্র্কে যেন অন্য কোন ধরনের বড় ইভেন্ট অনুষ্ঠিত না হয় সে ব্যাপারে আমরা কমিউনিটির সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। ফোবানা এখন শুধু তিনদিনের সম্মেলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সারা বছর ধরে অব্যহত থাকে এর বিভিন্ন কার্যক্রম। ফোবানা নির্বাহী কমিটির নেতৃত্বে ২৫টি স্ট্যান্ডিং কমিটিও বছরব্যাপি তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। উত্তর আমেরিকায় বাঙালী কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: ফোবানা একটি ফেডারেশন যা উত্তর আমেরিকার সকল সংগঠনের একটি আমব্রেলা সংগঠন। ফোবানা একটি ৫০১ সি নন প্রফিট কর্পোরেশন এবং ইউএস পেটেন্ট এন্ড ট্রেডমার্ক অফিস কর্তৃক ট্রেডমার্ক কৃত একটি অর্গানাইজেশন। আমেরিকাতে আইনগতভাবে অন্য কেউ ফোবানা শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন না। সর্বোচ্চ আইনের এই দেশে এ ধরনের বেআইনি কাজটি কেউ করবেন না বলে আশা করছি। তারপরও কেউ যদি এ ধরনের বেআইনি ও গর্হিত কাজটি করার চেষ্টা করেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। ফোবানার ৩৩ তম কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লং আইল্যান্ডের বিলাসবহুল নাসাউ কলোসিয়াম মিলনায়তনে। যার আসন সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার। ভেনুর পাশের ম্যারিয়ট হোটেলটি অতিথিদের থাকার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলনটি আয়োজনের গুরু দায়িত্ব পেয়েছে নিউইয়র্কের স্বনামধন্য সংগঠন ড্রামা সার্কল।
সিট দ্যা প্রেস এক প্রশ্নের উত্তরে নার্গিস আহমেদ বলেন, ২০১৪ সাল থেকে আমি ফোবানা থেকে দূরে ছিলাম। আর ড্রামা সার্কল-এর কর্মকান্ডের কারণে এই সম্মেলনের দায়িত্ব পাওয়ায় আমরা ঐক্যবদ্ধ ফোবানা করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তিবর্গ সেই উদ্যোগে সাড়া দেননি এবং তারা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করছেন। তবে আমি যদি জানতাম বিভক্তির সম্মেলন হবে নিউইয়র্কে তবে আমি এই দায়িত্ব নিতাম না। কেননা, আমি কখনই, কোনদিন কমিউনিটির বিভেদ-বিভক্তি বা মামলা-মোকদ্দমায় ছিলাম না, পছন্দও করিনা।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মীর এইচ চৌধুরী বলেন, ফোবানা উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত সংগঠন এবং এর ঐতিহ্য রয়েছে। ইতিপূর্বে ড. সিদ্দিকুর রহমানকে ঐক্যের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো সেব্যাপারে কোন অগ্রগতি হয়নি সত্য। আর ঐক্যের ব্যাপারে আলী ইমাম ও কাজী আজম শর্ত দেয়ার কারণে ঐক্য প্রক্রিয়া এগুয়নি। তবে ঐক্যের দরজা সবসময় খোলা রয়েছে। তিনি বলেন, আইনের দেশে সবাই আইন মেনে চলবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। আর ফোবানার নাম এদিক-ওদিক করে নতুন একটি নাম রেজিষ্ট্রেশন করলেই ফোবানা পাল্টে যাবে না।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মীর এইচ চৌধুরী অতীতের কোন ফোবানা সম্মেলনের বিজ্ঞাপনের বিল মিডিয়ায় বকেয়া থাকার ঘটনায় আন্তরিক দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমার সময়ের ফোবানা সম্মেলনের কোন বিল কেউ পেয়ে থাকলে তা আমি দিয়ে দেবো।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফোবানায় নতুন নতুন মুখ নেত্বত্বে আসছেন। ফোবানার বর্তমান ষ্টিয়ারিং কমিটির ভাইস শাহ হালিম (টেক্সাস) ও এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী জাকারিয়া চৌধুরী সহ অনেক নতুন মুখ রয়েছে এই ফোবানায়।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে আবীর আলমগীর বলেন, আমেরিকাতে যেকোন সম্মেলন বা কনভেনশন করতে রেজিষ্ট্রেশন ফি গ্রহণ ছাড়াও ডোনেশন নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই ফোবানায় কোন বাণিজ্যিকরণ হয়না বা চাঁদাবাজী চলে না। তবে আমরা ৩৩তম ফোবানার সকল আয়-ব্যয়ের পাই পাই হিসাব দেবো।