নিউইয়র্কে হোম কেয়ারের নামে ১১মিলয়ন ডলার আত্মসাৎ,পুলিশ অফিসারের স্ত্রী গ্রেফতার

125

শাহাব উদ্দিন সাগর,নিউইয়র্কঃনিউইয়র্কে মেডিকেইড-এর ১১ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে এক গৃহ স্বাস্থ্য সেবা (হোম হেলথ এইড) কেম্পানির সিইও কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ওই নারীর নাম ফারাহ রুবানি। তিনি ব্রুকলিন ভিত্তিক হোম কেয়ার কোম্পানি হোপটন-এর প্রধান। তার স্বামী নিউইয়র্ক পুলিশ (এনওআইপিডি) এর একজন কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে রুবানির বাড়ি-গাড়ীসহ সব সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এসব সম্পদ তিনি এই অর্থ আত্মসাৎ করে গড়ে তুলেছিলেন। আর এ সম্পদ থেকে আসা অর্থ দিয়ে তিনি বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন।

(ছবি: সংগৃহীত)
(ছবি: সংগৃহীত)

এদিকে হোপটন বন্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও। এ কোম্পানিতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি গত ৪ সপ্তাহ ধরে বেতন পাচ্ছেন  না। তারা ট্যাক্স ফাইলের জন্য ডব্লিউ-২ পাবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। নিউইয়র্ক অ্যাটর্ণি জেনারেলের অফিস থেকে দায়ের করা সিভিল স্যুটে বলা হয়েছে, রুবানি এবং তার অংশীদাররা শিশুদের (অটিস্টিক বা ডিজেবল) জন্য হোম কেয়ারের নামে নিউইয়র্ক স্টেট মেডিকেইড থেকে বিলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন। অথচ দেখা গেছে কোন শিশুকেই তারা হোম কেয়ার দেননি। যে শিশুদের সেবা দেয়ার কথা বলে তারা অর্থ তুলে নিয়েছেন সেই শিশুদের মা-বাবাকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়েছিল। অ্যাটর্ণি জেনারেল বলেছেন, ম্যানহাটান সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন যে, এই প্রকল্প থেকে রুবানি একাই ৪ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন। রুবানি একজন পাকিস্তানি আমেরিকান। তার স্বামী রিচার্ড ট্রিকারিও ৫০ প্রিসিংটের একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ৫১ বছর বয়সী ফারাহ রুবানির বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম ডিগ্রির ‘গ্র্যান্ড লার্সেনির’ অভিযোগ আনা হয়েছে।  সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে ফারাহ রুবানি বেশ বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। প্রায় প্রতি মাসেই তিনি অবকাশ যাপনের জন্য ফ্লোরিড়ার মায়ামিতে যেতেন। যেখানে রয়েছে তার ‘রিচ অব দ্যা হার্ট’ (হৃদয়ের ধনি ) নামের একটি বাড়ী।  জানা গেছে, হোপটনের সব কার্যালয় এখন বন্ধ রয়েছে। এ কোম্পানিতে কর্মরতরা প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের বেতনের জন্য যোগাযোগ করছেন অফিসে। কিন্তু কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।  হোপটনের বিরুদ্ধে হেলথ ফাস্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও ইতোমধ্যে একটি মামলা করেছে বলে জানা গেছে।  হোপটনের ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের স্টারলিং এ কর্মরত বাংলাদেশি হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এ কোম্পানিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছি। সর্বশেষ গত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের চেক পেয়েছি। এখন চার সপ্তাহের চেক বাকী আছে। এ চেক আমরা কার কাছে থেকে পাবো জানি না। আমার মত অনেক বাংলাদেশি এ সসম্যায় রয়েছেন।  হোপটনের ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ডে কর্মরত বাংলাদেশি আব্দুল হাই বলেন, আমি চার সপ্তাহ ধরে বেতন পাই না। আমাদের কাজ আদৌ আছে কি না সেটিও জানি না। তবে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছি ট্যাক্স ফাইল করার জন্য ডব্লিউ-২ পাব কি না তা নিয়ে?  তিনি বলেন, শুধু আমি নয়, আমার মত অনেক বাংলাদেশি একই সমস্যায় রয়েছেন।  একাধিক সূত্র জানায়, হোপটন অন্য কোম্পানির চেয়ে অর্থ বেশি দিয়ে কর্মচারি নিয়োগ করত। এ কারণে কোন কিছু চিন্তা না করেই বাংলাদেশিসহ অনেক প্রবাসী এ কোম্পানিতে  যোগ দিতে লোভনীয় অফারে। এছাড়া কোম্পানিতে কর্মচারিদেরও বেশি শ্রম দিতে হত না, কারণ ফারাহ রুবানি ওই কর্মচারিদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে অনেক বেশি কর্মঘন্টা দেখিয়ে পুরো অর্থগুলোই আত্মসাৎ করতেন।  হোপটন বন্ধ এবং ফারাহ রুবানি গ্রেফতার হওয়ার পর বাংলাদেশি অধ্যুাষিত এলাকাগুলোতে এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ ধরনের কাজ থেকে বাংলাদেশিদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.